নায়ক: গোলের পরে আয়াখ্স-এর তাদিচ। বের্নাবাউয়ে। গেটি ইমেজেস
রিয়াল মাদ্রিদ ১ • আয়াখ্স ৪
এক বছর আগে রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব ছাড়ার সময়ই কথাটা বলেছিলেন জ়িনেদিন জ়িদান। ‘‘পরের বছর আমার পক্ষে এই ক্লাবকে আর ট্রফি দেওয়া কঠিন,’’ মন্তব্য করেছিলেন তখনকার রিয়াল ম্যানেজার। আর এখনকার রিয়াল ম্যানেজার সান্তিয়াগো সোলারি হাড়ে হাড়ে বুঝছেন জ়িদানের কথাটা কতটা খাঁটি। বুঝছেন মূলত একটাই কারণে। তাঁর দলে নেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
অথচ নেদাল্যান্ডসে গিয়ে আয়খ্স আমস্টারডামকে ২-১ হারিয়ে এসেছিল রিয়াল। সবাই ধরেই নিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবেই গত বারের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব। তা-ও নিজের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবাউয়ে খেলা। অথচ মঙ্গলবার ম্যাচ শেষের স্কোর লাইন বলছে— রিয়াল ১ : আয়াখ্স ৪। সত্যিই অবিশ্বাস্য। যার মানে দাঁড়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিল গত বারের চ্যাম্পিয়নই। দুই ম্যাচ মিলে গোল গড়ে ৫-২ জিতে ডাচ ক্লাবই পৌঁছে গেল শেষ আটে।
প্রায় এক দশক পরে রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলছে রোনাল্ডোকে ছাড়া। পর্তুগিজ তারকা এখন তাঁর নতুন ক্লাব জুভেন্তাসের প্রধান ভরসা। আর পুরনো ক্লাব রিয়াল তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। রোনাল্ডো মাদ্রিদে থাকার সময় রিয়াল জিতেছিল মোট ১৬টি ট্রফি। স্পেনে রোনাল্ডোর ন’বছরে রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগই জিতেছে চার বার। সেমিফাইনালে উঠেছে টানা আট বার। ব্যতিক্রম ২০০৯-’১০ মরসুম। সে বারই একমাত্র রিয়াল প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নেয়। সে বার টানা ছ’জায়গায় রিয়াল কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই ছিটকে যায়। এবং সেখান থেকে রোনাল্ডো কার্যত একা টেনে তোলেন স্পেনের ক্লাবকে। তাঁর হাত ধরেই রিয়াল বারো বছর পরে জিতেছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
মাদ্রিদ জুড়ে এখন একটাই কথা। এই হারের জন্য কাকে দায়ী করা হবে? মাত্র ১১৩ দিন দায়িত্বে থাকা আর্জেন্টাইন ম্যানেজার সোলারিকে না রোনাল্ডোর জুভেন্তাসে চলে যাওয়ার ঘটনাকে? শুধু তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নয়। নিজেদের মাঠে পরপর দু’বার এল ক্লাসিকোয় বার্সেলোনার কাছে হার। কোপা দেল রে-র সেমিফাইনাল থেকে বিদায়। লা লিগা খেতাব জয় দূর অস্ত। এক নম্বরে থাকা বার্সেলোনা যে ইতিমধ্যেই তাদের থেকে ১২ পয়েন্ট এগিয়ে গিয়েছে। মজাটা হচ্ছে এ হেন অবস্থাতেও সোলারি বলে দিয়েছেন যে, কোনও অবস্থাতেই তিনি হাল ছাড়তে রাজি নন। ‘‘ক্লাবের খারাপ সময় পালিয়ে যাওয়ার লোক আমি নই। আমাদের এখন মাথা ঠান্ডা রাখাই প্রধান কাজ। এখনই আমাদের বেশি করে চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখাতে হবে। রিয়াল মাদ্রিদ যে কোনও ব্যক্তির থেকে অনেক বড়। বারবার এই ক্লাব ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আরও শক্তিশালী হয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।’’
সোলারি যা-ই বলুন ভেঙে পড়েছেন রিয়ালের ফুটবলারেরা। ডিফেন্ডার দানি কার্ভাহালের কথা, ‘‘আমাদের জন্য মরসুম শেষ হয়ে গেল। ফুটবল জীবনে কখনও এতটা অসুস্থ বোধ করিনি। সাত দিনের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল।’’ পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তেরো বারের চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে আয়াখ্স যেটা করে দেখাল তারও প্রচুর প্রশংসা হচ্ছে। প্রথম লেগে ১-২ পিছিয়ে থেকেও বের্নাবাউয়ে তারা ১৮ মিনিটের মধ্যে ২-০ করে ফেলে। গোল করেন হাকিম সিয়েখ ও দাভিদ ন্যারিস। প্রথম দু’টি গোলের ক্ষেত্রেই বড় অবদান দুসান তাদিচের। এমনকি ৬২ মিনিটে তিনিই ৩-০ করেন। এর মধ্যে ২৯ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে নামা গ্যারেথ বেলও গোড়ালিতে মারাত্মক চোট পান। ব্রিটিশ মিডিয়ার ধারণা, ওয়েলসের তারকার সঙ্গে রিয়ালের সম্পর্কও হয়তো শেষ হয়ে গেল। বেলের আর একটা ব্যর্থতার দিনে ৭০ মিনিটে মার্কো আসেনসিয়ো একটি গোল শোধ করলে রিয়ালের ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু স্পেনের ক্লাবের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেওয়ার কাজ করে যান আয়াখ্সের মিডফিল্ডার লাসা শোনে। খেলা শেষ হওয়ার ঠিক ২ মিনিট আগে অসাধারণ ফ্রি-কিকে ৪-১ করে দিয়ে। প্রায় এক দশক পরে আয়াখ্সকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এতটা ভাল জায়গায় নিয়ে যাওয়ার মূল কতিত্ব যাঁর সেই তাদিচ আবার জ়িদানের আপাদমস্তক ভক্ত। ম্যাচে শেষে বলে গেলেন, ‘‘জ়িজ়ুর (জিদানের ডাকনাম) খেলার এত ক্লিপিংস দেখেছি যে বলার নয়। ও-ই আদর্শ। হয়তো সে জন্যই রিয়ালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারলাম।’’
তাদিচ খুশি! কিন্তু তাঁর ‘গুরু’ জ়িদানের নিশ্চিত মন খারাপ। হাজার হোক এই রিয়ালই যে তাঁকে ক্লাব ফুটবলে বিখ্যাত ম্যানেজার হিসেবেও চিহ্নিত করেছিল।