পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ফল ঘোষণা! এ রকম অবিশ্বাস্য ঘটনা একমাত্র সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের পক্ষেই ঘটানো সম্ভব।
আই লিগে চেন্নাই সিটি এফসি বনাম মিনার্ভা এফসি ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ম্যাচ কমিশনার বি বালসুব্রহ্মণ্যম ও রেফারিদের নির্ণায়ক বিক্রমজিৎ পুরকায়স্থ সন্দেহ প্রকাশ করে ই-মেল করায় তদন্ত শুরু করেছেন ফেডারেশনের ইনটিগ্রিটি অফিসার। তা শেষ হওয়ার আগে কী ভাবে চেন্নাইয়ের হাতে আই লিগের ট্রফি তুলে দিলেন ফেডারেশন কর্তারা? দ্বিতীয়ত, রিয়াল কাশ্মীর এফসি বনাম মিনার্ভা পঞ্জাবের সেই না হওয়া ম্যাচ এখনও কর্তারা করে উঠতে পারেননি। অর্থাৎ, সরকারি ভাবে আই লিগের সব ম্যাচই শেষ হয়নি। তবু চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি দিয়ে দেওয়া হল। ভারতীয় ফুটবলকে প্রহসনেই নামিয়ে এনেছেন এঁরা।
ফেডারেশনের কর্তারা যদি ৯ মার্চ ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই চেন্নাইয়ের হাতে আই লিগের ট্রফি তুলে দিতেন, তা হলে বলার কিছু ছিল না। কারণ, তখনও ম্যাচ কমিশনার ও রেফারিদের নির্ণায়ক লিখিত ভাবে ম্যাচ নিয়ে তাঁদের সন্দেহের কথা ফেডারেশনকে জানাননি। তাঁরা যে অভিযোগ করেছেন, তা তো সাংঘাতিক। তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমার প্রশ্ন কেন ফেডারেশন কর্তারা তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন না?
ফেডারেশন কর্তাদের কাজকর্ম দেখে তো উল্টে তাঁদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠবে যে, তাঁরা তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। এত দিন যখন অপেক্ষা করলেন, তখন আর কয়েকটা দিন করলে তো ক্ষতি হত না। এ বার তো এই তদন্তের কোনও গুরুত্বই থাকবে না। কয়েক মাস পরে নতুন মরসুম শুরু হয়ে যাওয়ার পরে নিশ্চয়ই ফেডারেশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হবে, তদন্তে কিছু পাওয়া যায়নি। যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চেন্নাই।
শুধু তদন্ত কেন, সচিব কুশল দাস ও তাঁর সহযোগীরা ফুটবলকেই ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক করে তুলছেন। জেসিটি, মাহিন্দ্রা ইউনাইটেডের মতো দলগুলো উঠে গিয়েছে। বাংলা, পঞ্জাব, কেরল, গোয়া থেকে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার উঠে আসছে না, তা নিয়ে কেউ আদৌ চিন্তিত বলে মনে হয় না। এঁরা মনে করেন, ঠান্ডা ঘরে বসেই ফুটবলের উন্নতি ঘটাবেন। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম একশোর মধ্যে ভারত ঢুকে পড়ায় ফেডারেশনের কর্তারা যে ভাবে উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন, তা দেখে প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে লজ্জাই হচ্ছিল। কেন প্রথম একশোর মধ্যে ঢুকতে পেরে এত উৎসব করব? থাকা উচিত তো প্রথম পঞ্চাশের মধ্যে।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পঞ্চাশের মধ্যে থাকার কোনও সম্ভাবনা আমি অন্তত দেখছি না। কারণ, আমরা যখন খেলতাম, তখন জাতীয় দলের জন্য ফুটবলার বাছতেন প্রদীপ কুমার (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, অরুণ ঘোষের মতো কিংবদন্তিরা। অথচ এখন ফুটবলার বাছার দায়িত্বে অভিষেক যাদবেরা। ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। আমার কথা বাদই দিলাম। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত-সহ অসংখ্য প্রাক্তন তারকা রয়েছেন, তাঁদের কোনও মতামতই নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না ফেডারেশনের কর্তারা। কুশল, সুনন্দদের ফুটবল সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানই নেই।
ফুটবলে উন্নতির জন্য পরিকল্পিত ভাবে এগোতে হয়। আমাদের ফেডারেশনের কর্তাদের একটাই পরিকল্পনা— ক্ষমতা ধরে রাখা। তাতে ফুটবলের সর্বনাশ হলেও কিছু যায় আসে না। মনে হচ্ছে, ক্রিকেটের লোঢা দাওয়াই ফুটবলেও ভীষণ ভাবে দরকার হয়ে পড়েছে।