ধোনির স্টেডিয়ামে তৈরি হবে আগামীর তারকা

এই মাঠে ভারতীয় ফুটবল দলের শিবির হয়েছে। খেলেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। খড়্গপুরের সেই সেরসা স্টেডিয়ামে এ বার জাতীয় স্তরের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। লিখছেন সৌমেশ্বর মণ্ডলএই মাঠে ভারতীয় ফুটবল দলের শিবির হয়েছে। খেলেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। খড়্গপুরের সেই সেরসা স্টেডিয়ামে এ বার জাতীয় স্তরের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। লিখছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০২:০৮
Share:

অপেক্ষা: সেরসা স্টেডিয়ামের বর্তমান অবস্থা। স্টেডিয়ামের নাম ফলক (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) অনুমোদিত বিভিন্ন বয়সভিত্তিক খেলার জন্য এত দিন বাংলায় দু’টি মাঠ ব্যবহার করা হত। একটি হল কলকাতার ইডেন গার্ডেনস। অন্যটি নদিয়ার কল্যাণী স্টেডিয়াম। কিন্তু কলকাতা থেকে কল্যানী যাতায়াত এবং কল্যাণীতে থাকা-খাওয়া-সহ নানা সমস্যার কারণে বিসিসিআই থেকে সিএবিকে অন্য একটি মাঠের খোঁজ করতে বলা হয়েছিল। সেই সন্ধান পর্বেই শিকে ছিঁড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের সেরসা স্টেডিয়ামের।

Advertisement

এপ্রিল মাসে সেরসা স্টেডিয়াম দেখতে এসেছিলেন সিএবি-র যুগ্ম সম্পাদক অভিষেক ডালমিয়া। তখন মাঠটি দেখে তাঁর পছন্দ হয়। তারপরেই সেখানে খেলা দেওয়ার সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে সেরসা স্টেডিয়ামকে চিঠিও দিয়েছে সিএবি। তবে মাঠ ও স্টেডিয়াম এখন যে অবস্থায় রয়েছে সেটি জাতীয় স্তরের ক্রিকেট আয়োজনের উপযুক্ত নয়। তাই মাঠ ও স্টেডিয়ামে কিছু পরিকাঠামোগত বদল করতে হবে।

যেমন মাঠের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে মাঠ ও গ্যালারির মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে মাঠ বড় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দু’টি প্লেয়ার্স ড্রেসিংরুম বাতানুকূল করতে হবে। স্টেডিয়ামে আগে থেকেই দু’টি বাতানুকূল সভাকক্ষ রয়েছে। সেগুলি এ বার কাজে লাগানো হবে। ওই মাঠে এখন দু’টি পিচ রয়েছে। মাঠ বড় হয়ে গেলে আরেকটি পিচ তৈরি করা হবে। মাঠের পুরানো ঘাস তুলে নতুন ‘বারমুডা’ ঘাস বসানো হবে। স্টেডিয়ামের যে মাল্টিজিম রয়েছে তাতেও আসবে আধুনিকতার ছোঁয়া। সেখানে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার নতুন সরঞ্জাম কেনা হবে। জিমটি বাতানুকূলও করা হবে। এই সব প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরেই খেলা দেওয়া হবে। সব ঠিক থাকলে পরের মরসুম থেকেই খড়্গপুরের মাঠে আন্তঃরাজ্য ক্রিকেট শুরু হবে। ওই স্টেডিয়ামে কুড়ি হাজার দর্শক বসে খেলা দেখতে পারবেন। সেরসা স্টেডিয়াম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

Advertisement

খড়্গপুরে খেলাধুলোর ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক পুরনো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে তৈরি খড়্গপুরের অধিকাংশই ময়দানই রেলের। সেগুলির কয়েকটি এখন জরাজীর্ণ। যদিও ওই সব মাঠেই এক সময় নিয়মিত খেলাধুলোর চর্চা হত। পঞ্চাশের দশকে তৈরি হয়েছিল খালসা স্পোর্টস, অন্ধ্র স্পোর্টস, বেঙ্গলি ক্লাব, শ্রীরাম ক্লাব, ট্র্যাফিক ক্লাব, মহামেডান স্পোর্টসের মতো ক্লাব। এই ক্লাবের খেলোয়াড়রা শহরে ইউরোপিয়ান রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ড (বাইটন ময়দান) ও ইন্ডিয়ান রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে (বিএনআর ময়দান) অনুশীলন করতেন। পরে ট্রাফিক রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ড, নিউ সেটলমেন্ট ময়দান, নিমপুরা ময়দানের মতো কয়েকটি খেলার মাঠ গড়ে ওঠে। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকজন ইংরেজ আধিকারিকের চেষ্টায় বাইটন গ্রাউন্ডের পাশে সেরসা স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হয়। ভবিষ্যতের তারকাদের খেলার জন্য এ বার সেই মাঠকেই বেছে নিয়েছে বিসিসিআই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেরসা মাঠে খেলে গিয়েছেন ফুটবলার পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, মেওয়ালাল, পি থঙ্গরাজ, ইন্দর সিংহ, এস অ্যান্থনি প্রমুখ। ইন্দর সিংহ ভারতীয় দলের অধিনায়ক থাকার সময়ে এশিয়ান গেমসে খেলতে যাওয়ার আগে এই স্টেডিয়ামে ভারতীয় দলের প্রশিক্ষণ শিবিরও হয়েছিল। এই মাঠে আইএফএ শিল্ড, বেটন কাপ ও রাজ্য স্তরের অ্যাথলেটিক্স মিট হয়েছে। হকি অলিম্পিয়ান লেসলি ক্লডিয়াস এই মাঠেই অনুশীলন করতেন। শুধু জাতীয় স্তরের ম্যাচ নয়, এই মাঠেই ভারত বনাম কেনিয়া হকি ম্যাচও হয়েছে। এখন সেখানে মূলত রেলের বিভিন্ন খেলা হয়।

কর্মসূত্রে ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত খড়গপুরে রেলের টিটি–র চাকরি করেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তখন সেরসা স্টেডিয়ামে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করতেন তিনি। বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটও খেলেছেন ধোনি। স্টেডিয়ামে ধোনির নামে একটি প্যাভেলিয়নও রয়েছে। ধোনির জীবনের নানা বিষয় ও স্মরণীয় ঘটনা নিয়ে স্টেডিয়ামেই তৈরি হয়েছে সংগ্রহশালা।

‘এমএস ধোনি, দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র শ্যুটিং হয়েছে এখানে। সেরসা স্টেডিয়ামের দায়িত্বে থাকা রাজেশ সিংহ বলেন, ‘‘বিসিসিআই এবং সিএবি আমাদের মাঠকে বেছে নিয়েছে এটা খুবই আনন্দের খবর। সামনে থেকে জাতীয় স্তরের খেলা দেখলে উঠতি ক্রিকেটারেরা অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে।’’

খড়্গপুরের উঠতি ক্রিকেটার প্রিন্স কুমার জানায়, খড়্গপুরের মাঠে জাতীয় স্তরের খেলা হলে আমরা অনেক কিছুই শিখতে পারব।’’ বেলদার ক্রিকেটার অরিন্দম দুয়ার কথায়, ‘‘ইডেনে গিয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ ও ১৯ বিভাগের খেলা দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। খড়্গপুরে সেই খেলা হলে অবশ্যই মাঠে যাব।’’ খড়্গপুরের ঋষভ শর্মা ও সন্দীপ দাস জানায়, খড়গপুরের মাঠে আন্তঃরাজ্য জুনিয়র ক্রিকেটের আয়োজন তাদের জন্য খুবই ভাল খবর। প্রিন্স, অরিন্দম, ঋষভ এবং সন্দীপ—চার জনেই অনূর্ধ্ব ১৭ বিভাগের ক্রিকেটার।

এখন শুধুই অপেক্ষা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement