বয়স ভাঁড়ানোর বিতর্ক পেরিয়ে ফাইনালে নায়ক

২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মনজ্যোতের মতোই ফাইনালে সেঞ্চুরি করেছিলেন উন্মুক্ত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:৪৬
Share:

নায়ক: ফাইনালে ম্যাচের সেরা মনজ্যোৎ কালরা। ছবি: এএফপি।

কথাই আছে, দিল্লি থেকে ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হতে হবে। বীরেন্দ্র সহবাগ থেকে বিরাট কোহালি— দিল্লির তারকারা কোনও না কোনও সময় তাদের রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। গৌতম গম্ভীরের রয়েছে একই ইতিহাস। সেই তালিকায় শনিবার আরও একটি নাম যোগ হল— মনজ্যোৎ কালরা। ফাইনালে অসাধারণ সেঞ্চুরি করে যিনি ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রধান নায়ক।

Advertisement

কোহালি এক বার বলেছিলেন, অনূর্ধ্ব-১৫ স্তরে ধারাবাহিক ভাবে রান করার পরেও দিল্লির হয়ে খেলার সুযোগ পাননি। অজ্ঞাত কারণে তাঁকে দলেই নেননি নির্বাচকেরা। কালরার ক্ষেত্রেও একই দিকে জল গড়াতে পারে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের তারকা একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। সব চেয়ে বেশি করে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগে। তাঁর ছোটবেলার কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজ সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘‘ছয় বছর আগে আমাদের ভরত নগর অ্যাকাডেমিতে ও আসে। দেখেই প্রতিভাবান মনে হয়েছিল। হাত ও চোখের সমন্বয় বিশেষ ভাবে আমার নজর কেড়েছিল।’’ কোচ যোগ করছেন, ‘‘আমি মোটেও ফাইনালে ওর সেঞ্চুরি করা দেখে অবাক হইনি। বয়সভিত্তিক বিভাগে ও ধারাবাহিক ভাবে বড় রান করে গিয়েছে।’’

দিল্লিতে ‘গুরুজি’ হিসেবেই বিখ্যাত কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজ। তাঁর হাত দিয়ে কৃতী ছাত্রও যে অনেক বেরিয়েছে। গৌতম গম্ভীরের কোচ তিনি। উন্মুক্ত চাঁদ-ও তাঁর হাতে তৈরি। ২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মনজ্যোতের মতোই ফাইনালে সেঞ্চুরি করেছিলেন উন্মুক্ত। দারুণ প্রতিভাবান হিসেবে চিহ্নিত হলেও উন্মুক্ত সেই ফাইনালের পরে বিশেষ কিছু করতে পারেননি। কোচ তাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছাত্রকে নিয়ে সাবধানী, ‘‘এই সাফল্য যেন ওর মাথায় ঢুকে না যায়। ব্যাটিংয়ে অনেক উন্নতি করার জায়গা রয়েছে। ওকে ফুটওয়ার্ক নিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।’’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও তাঁর কোচ বলে দিচ্ছেন, ‘‘রঞ্জি ট্রফিতে অন্তত হাজার রান করে দেখাতে হবে ওকে।’’ ভরদ্বাজ নিশ্চয়ই জানবেন। তিনি যেমন গম্ভীরের উত্থান দেখেছেন, তেমনই দেখেছেন উন্মুক্তের পতন। তবে মনজোত-কে নিয়ে আশার আলো দেখছেন তিনি। বলছেন, ‘‘মনজ্যোৎ ভাল ছেলে। কথা শোনে, পরিশ্রম বিমুখ নয়। কিন্তু ওর বাবা পরভীন এবং মা রঞ্জিতকেও অনেক কৃতিত্ব দেব আমি। ওরা ক্রিকেট নিয়ে খুবই আবেগপ্রবণ।’’

Advertisement

বিশ্বকাপ ফাইনালে ১০২ বলে ১০১ করা মনজ্যোতের বড় ভাইকে প্রথমে গুরুজির কাছে পাঠিয়েছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু বড় ভাই হিতেশ বেশি দূর এগোতে পারেননি। এখন তিনি পারিবারিক ব্যবসায় সাহায্য করেন। কিন্তু পরভীন এবং হিতেশ দু’জনেই খুব আশাবাদী ছিলেন মনজ্যোৎ-কে নিয়ে। কোচকে বিশেষ ভাবে তাঁরা অনুরোধ করেছিলেন, তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য।

কয়েক মাস আগে যদিও হঠাৎই সঙ্কটে পড়ে গিয়েছিল কালরা পরিবার। ফলের হোলসেলার পরভীন এমনিতে স্বচ্ছল। দিল্লির সব চেয়ে বড় ফল ও সব্জির মার্কেট আজাদপুর সব্জি মান্ডিতে তাঁর ব্যবসা। কয়েক মাস আগে দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের কাছে কয়েক জন অভিযোগ করেন, মনজ্যোৎ বয়স ভাঁড়িয়ে খেলছে। দু’বছর আগে বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগ দায়ের করে একটি এফআইআর-ও হয়েছিল। সেই তালিকাতেও বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়কের নাম ছিল।

নতুন অভিযোগ জমা পড়ার পর আগেই বোর্ড তাদের বয়সের পরীক্ষা সেরে ফেলেছিল এবং তাতে মনজ্যোৎ পাশও করে যায়। কিন্তু দিল্লি ক্রিকেট সংস্থা ফের তাঁর বয়সের প্রমাণপত্র দেখতে চায়। তত দিনে তিনি বোর্ডের নির্বাচিত বিশ্বকাপ প্রাথমিক দলে ঢুকে পড়েছেন। নিজের রাজ্য সংস্থার কাছে ফের বয়সের প্রমাণ দিতে হয় তাঁকে। সেখানেই শেষ নয়। দিল্লির রাজ্য দলেও তাঁকে রাখেননি নির্বাচকেরা। সেটা ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলেরও স্বার্থ বিরোধী ছিল কারণ, কোচ রাহুল দ্রাবিড় চেয়েছিলেন বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারেরা বেশি করে রঞ্জি ম্যাচ খেলুন। মনজ্যোতের এক ভাই বলেছেন, ‘‘বিশ্বকাপের ঠিক আগেই সময়টা খুব খারাপ গিয়েছে আমাদের। এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত দৌড়ে বেড়াতে হয়েছে বয়সের অভিযোগ নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়েছে। ওর বাবা এবং নিজের ভাই হিতেশ খুব বড় ভূমিকা পালন করেছে মনজ্যোতের এই সাফল্যে।’’

দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা প্রাইভেটে দিয়েছেন মনজ্যোৎ। বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব সেরে বাড়ি ফিরে ফের পড়াশুনো চালু করবেন বলেও জানাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বিতর্কের দীর্ঘ রাস্তা পেরিয়ে দিল্লি থেকে আরও এক অমূল্য রত্ন ভারতীয় ক্রিকেট পেতে চলেছে কি না, সেটাই এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement