অলঙ্করণ: শেখর রায়।
দীপা, অদিতি, সিন্ধু, সাক্ষী, এরা আমার কাছে ভারতবর্ষের কোনও মেয়ের নাম নয়, ভারতের গৌরবের নাম, ভারতের জিতে যাওয়ার নাম, সমস্ত অভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার নাম। আমি কোনও মানুষের, কোনও কৃতীর, কোনও পেশাদারের লিঙ্গ নির্ধারণে বিশ্বাসী নই। ওঁদের একটাই পরিচয়। ওঁরা ভারতীয় খেলোয়াড়। ঠিক যেমন বিরাট কোহলি বা সচিন তেন্ডুলকর।
একটা ব্যাপার ভেবে দেখেছেন? এঁরা যদি ছেলে হতেন? তখনও এঁদের কৃতিত্ব নিয়ে ফেসবুকে, খবরের কাগজে, টেলিভিশনে এই মাতমাতি হত কী? উত্তরটা বোধহয় নেগেটিভ। দীপা বা সিন্ধুদের নিয়ে এত আলোচনা অবশ্যই ভাল। কিন্তু এটাতেই হয়তো বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওঁরা ‘মেয়ে’। যেন বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওদের এটা পাওনা ছিল না।
কোনও পরিকাঠামো, কোনও ব্যাকিং, কোনও বিজ্ঞাপন ছাড়া ওঁরা দেশকে অলিম্পিকের মতো বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গিয়েছেন এটাই তো আসল কৃতিত্ব। ব্যাডমিন্টনে না হয় প্রকাশ পাড়ুকোনের একটা তৈরি করা মাঠ রয়েছে। সিন্ধুকে দেখার আগে আমরা অন্তত দু’একজন সিনিয়রের নাম মনে করতে পারব। কিন্তু জিমনাস্টিক? কারও কথা মনে পড়ছে? আমি তো লিখতে বসে মনে করতে পারলাম না। প্রোদুনোভা ভল্ট কী, তা তো দীপার নাম শোনার আগে জানতামই না। তাই কৃতীর নাম দীপা কর্মকার না হয়ে দীপ রায়চৌধুরি হলেও আমার কাছে সেটা বড় ব্যাপার হত না।
আজ সাক্ষী মালিক হরিয়ানাকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন বলে হয়তো আমরা আশা করছি সে রাজ্যে কন্যাভ্রূণ হত্যায় লাগাম পড়বে। কিন্তু আমাদের মেয়েরা যদি অলিম্পিকে কোনও পদক নাও পেতেন তাহলেও তো কন্যাভ্রূণ হত্যাকে সমর্থন করা যায় না।
সমাজ এখনও ছেলে-মেয়েকে আলাদা করেই দেখে। সেজন্যই তো মেয়েদের কৃতিত্ব নিয়ে এত আলোচনা। এখানেই কোথাও হয়তো আমরা মেয়েদের দুর্বল বলে স্বীকার করে নিচ্ছি। বরং ২০১৬-তে দাঁড়িয়ে ভারত দু’টো মেডেল জিতেছে এটাই ভাবা উচিত। তার লিঙ্গ নিয়ে আলোচনা নাই বা করলাম।