প্রতীকী ছবি।
কেউ দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সংসারের হাল ধরেছেন, কেউ শিক্ষকতার সঙ্গেই চালিয়ে গিয়ছেন সাহিত্য সাধনা— এমনই তিন নারীকে আজ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে স্বীকৃতি দিচ্ছে তমলুক উন্নয়ন সমিতি।
সমিতি সূত্রের খবর, আজ শুক্রবার পারভিন বেগম, প্রণতি রায় এবং পুষ্প সাঁতরা নামে ওই তিন মহিলার হাতে বিপ্লবী কুমুদিনী ডাকুয়ার নামাঙ্কিত পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। পারভিন এবং প্রণতির লড়াইটা দৈনন্দিন জীবনে। সংসারের চাকা ঘোরাতে তাঁরা হাল ধরেছেন। তমলুকের চনশ্বরপুর এলাকার বড়বড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা পারভিনের বিয়ে হয়েছিল গ্রামেরই বাসিন্দা পেশায় কাঠের মিস্ত্রি মহম্মদ মাইমুদের সঙ্গে। তাঁদের চার সন্তান। সকলেই শ্রবণ এবং মানসিক প্রতিবন্ধী।
প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে দিশেহারা হয়েছিল পারভিনের পরিবার। সংসার চালাতে স্বামী ভিন্রাজ্যেও কাজে যেতেন। ২০০৩ সালে পারভিন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য তমলুকের নিমতৌড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে তাঁর এক মাধুরীর চিকিৎসা হয়েছে। তাতে সে অনেকটাই সুস্থ। ওই সংস্থার পরিচালিত স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে বাকি তিন সন্তান মাধ্যমিক পাশ করেছে। বছর পয়তাল্লিশের পারভিন বর্তমানে ওই সংস্থায় নৈশপ্রহরীর কাজে যুক্ত। কিডনির অসুখে আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসার পাশাপাশি আপাতত পরিবারের হাল ধরেছেন পারভিন।
পারভিন পালস পোলিও অভিযান, প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের সাহায্যের কাজেও যুক্ত। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের কর্মস্থলে যাতায়াত করা পারভিন বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের নিয়ে প্রথমদিকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। তবে হাল ছাড়িনি। এখন ছেলে-মেয়েদের সাফল্যই আমার সাফল্য।’’
আবার নন্দকুমারের টোটাবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রণতি রায় শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছিলেন। তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতেন প্রণতির মায়। বড় প্রণতি উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর চাকরির আশায় বেসিক ট্রেনিং করেছিলেন। কিন্ত চাকরি পাননি। তবে সাংসারিক দায়িত্ব থেকে তিনি সরে যাননি। দুই বোন, ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার দ্বায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের বিয়েও দিয়েছেন। বর্তমানে এলাকার বাসিন্দাদের চিকিৎসায় সাহায্য কার এবং অন্য সামাজিক কাজে যুক্ত হয়ে রয়েছেন প্রণতিদেবী।
অন্যদিকে, পাঁশকুড়া থানার আটবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা পুষ্প সাঁতরা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। পাশাপাশি সাহিত্য চর্চাও করেন দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিলেও সাহিত্য চর্চা চলছে সমানতালে। নিজের সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করা ছাড়াও পাঁচটি বই প্রকাশ করেছেন তিনি। পেয়েছেন নানা পুরস্কার।
এই তিন মহিলার লড়াই এবং সাহিত্য চর্চাকে কুর্নিশ জানানো হবে আজ। তমলুকের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, ‘‘দারিদ্র্য এবং নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে এই তিন জন আজ সফল। আমাদের সকলের কাছেই অনুপ্রেরণা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এঁদের সম্মান জানাতে পেরে আমরাও গর্বিত।’’