কাম্বোডিয়া থেকে ছুটি কাটিয়ে সবে বাড়ি ফিরেছিলেন শালিনী। একে গর্ভাবস্থা চলছে, তায় ধূম জ্বর। কী ভাবে যেন শালিনীর শরীরে বাসা বেঁধেছিল এক ভয়াবহ ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণ। খোয়াতে হয় দুই হাত, দুই পা। কিন্তু শালিনী যে হার মানতে শেখেননি! আজ তিনি শুধুই ছুটে চলেছেন। বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত টিসিএস ১০ কিলোমিটার রেসে এখন নতুন অনুপ্রেরণা তিনি। দুই পায়ের বদলে সঙ্গী দুটো ব্লেড। শালিনী সরস্বতী। ভারতের ব্লেড রানার।
শালিনীর ফেসবুক পোস্ট নিজেদের পেজে পোস্ট করেছে বিইং ইউ। নিজের হতাশা, রাগ উগরে দিয়ে শালিনী লিখেছেন, রাগ, হতাশা, অসহায়তায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলাম আমি। তার পর? পোস্টে আরও অনেক কিছু লিখেছিলেন শালিনী। এই পোস্ট প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশের সব প্রান্ত থেকে উপচে পড়ে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন।
কী লিখেছিলেন শালিনী?
‘আমার পা দুটো বাদ চলে যাওয়ার সময় গাঢ় বেগুনি রঙের নেলপলিশ লাগানো ছিল নখে। এক মাস পর আমার ডান হাত নিজে থেকেই খসে পড়ে। তার আগেই অবশ্য আমার বাঁ হাতটাও বাদ দিতে হয়েছিল।
আমার বয়স তখন ৩২। কর্মক্ষেত্রে সফল, বিবাহিত জীবনে সুখী। মা হতে চলেছিলাম। কাম্বোডিয়ায় ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। সামান্য একটা জ্বর থেকে অঙ্গ খসে পড়ল। ডাক্তাররাও বইয়ের পাতা প্রথম বার চাক্ষুষ করেছিল আমার মধ্য দিয়ে। বুঝতে পারছিলাম মৃত্যু খুব কাছে।
রাগ, হতাশা, অসহায়তায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলাম আমি। আমার সঙ্গেই কেন এমন হল? কী করেছিলাম আমি? ভেবে নিয়েছিলাম এটা আমার কর্মফল। কিন্তু কোন দুষ্কর্মের জন্য এমন সাজা পেলাম তা ভেবে পেতাম না। শেষ পর্যন্ত বুঝে গেলাম, এগিয়ে চলাই একমাত্র উপায়।
আরও পড়ুন: ফর্সা ত্বকে আকৃষ্ট সমাজকে সপাটে চড় কষালো এই তিন সুন্দরীর ছবি
আর তাই দৌ়ড়তে শুরু করলাম। প্রথমে শুধুই ওজন কমিয়ে ফিট থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চ্যালেঞ্জ কখন যেন নেশায় পরিণত হয়ে গেল। দৌড়নোর সময় মনে হত আমি যেন শরীরকে জয় করে ফেলেছি। এখন পিছন ফিরে দেখি আর ভাবি ভাগ্য কী পরিহাস করেছে আমার সঙ্গে। আমি জিততে পারিনি। কিন্তু, আমার জীবন, আমার সিদ্ধান্ত, আমার স্বপ্ন, হাত-পা থাকুক, আর না থাকুক।’