প্রতীকী ছবি।
একে বলে এক ঢিলে তিন পাখি মারা!
প্রথমত, গ্রামাঞ্চলের কিশোরীদের কাছে নিখরচায় উন্নতমানের স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়া যাতে তাদের ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে। দ্বিতীয়ত, এমন স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করা যা ব্যবহারের পর পরিবেশদূষণ ঘটাবে না এবং মাটিতে সহজে মিশে যাবে। তৃতীয়ত, স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির কাজে অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়ে গ্রামীণ তরুণ উদ্যোগপতিদের সাহায্য করা।
একই সঙ্গে এই তিন লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। ঠিক হয়েছিল, জেলায়-জেলায় ছড়ানো তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলিতে কর্মরত গ্রামীণ স্তরের উদ্যোগপতিরা অর্থ বিনিয়োগ করবেন পরিবেশবান্ধব বা ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির প্রকল্পে। সেই ন্যাপকিন বিনা পয়সায় দেওয়া হবে স্থানীয় স্কুলের কিশোরীদের। আর প্রতি মাসে যত টাকার ন্যাপকিন নিখরচায় দেওয়া হবে সেই টাকা বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যাঙ্ক তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্প হিসাবে সংশ্লিষ্ট উদ্যোগপতিদের দেবে। মাস তিনেক আগে ঘোষিত এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘স্ত্রী স্বাভিমান’।
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রথম মুর্শিদাবাদ জেলায় শনিবার এই প্রকল্প শুরু হল কান্দির মহালন্দা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জীবন্তি-তে। যে সংস্থার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে তার রাজ্য প্রধান অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের পরে নদিয়া-সহ সব ক’টি জেলার ৩৪১টি ব্লকে একটি করে ন্যাপকিন তৈরির কেন্দ্র গড়ার লক্ষ্য রয়েছে তাঁদের। এই কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে মহিলারাই মূলত হাতে এই পরিবেশবান্ধব ন্যাপকিন তৈরি করবেন। তাতে বহু মহিলার কর্মসংস্থানও হবে।
অরূপবাবুর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ৯ হাজার তথ্যমিত্র কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ১৯টি কেন্দ্রে কর্মরত তরুণ উদ্যোগপতিরা এই প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দেখিয়েছেন। এর জন্য তাঁদের ২ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা প্রথমে বিনিয়োগ করতে হবে। যে ন্যাপকিন তৈরি হবে তার এক-একটির দাম হবে ৫ টাকা। একটি প্যাকেটে এই রকম ৬টি ন্যাপকিন থাকবে। স্থানীয় স্কুলগুলিতে তা ছাত্রীদের দেওয়া হবে। এক-এক জন ছাত্রীর জন্য বছরে গড়ে ৫০০ টাকার ন্যাপকিন লাগার কথা। যত টাকার ন্যাপকিন মাসে বিক্রি হবে সেই টাকা কোনও না কোনও সংস্থা উদ্যোগপতিকে দিয়ে দেবে।’’ কিন্তু যদি কোনও সংস্থাই তাতে আগ্রহ না দেখায়? তখন কী হবে? উদ্যোগপতিদের তো তা হলে লোকসানে জেরবার হতে হবে! অরূপবাবুর জবাব, ‘‘সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ প্রত্যেক কর্পোরেট সংস্থাকেই এখন বাধ্যতামূলক ভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে টাকা দিতে হয়। আগ্রহী সংস্থা ঠিক পাওয়া যাবে।’’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের এই প্রকল্প শুরুর আগেই রাজ্যের ৮টি জেলায় ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সস্তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। একটি ন্যাপকিনের দাম এক টাকা।একটি প্যাকেটে রয়েছে ৬টি ন্যাপকিন। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, এর ফলে কিশোরীদের সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল হবে, পরবর্তীকালে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মা ও শিশুর শারীরিক অবস্থার উপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা, ডায়মন্ডহারবার স্বাস্থ্য জেলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর ও কোচবিহারে এই ন্যাপকিন বিক্রি শুরু হয়েছে। বাড়ি-বাড়ি এই ন্যাপকিন বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আশা কর্মীদের। ৬ টাকার মধ্যে ১ টাকা পাচ্ছেন আশা কর্মী। বাকি ৫ টাকা সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে জমা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতি মাসে একটি ন্যাপকিনের প্যাকেট প্রতি আশা কর্মী নিখরচায় পাচ্ছেন।