বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত মিছিল শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফের চালুর চেষ্টা রুখতে পথে নামল শিলিগুড়ি। রবিবার সকালে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ওই মিছিলে সামিল হলেন দলমত নির্বিশেষে নানা স্তরের বাসিন্দারা। বেলা ১১টা নাগাদ শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। হিলকার্ট রোড, বাটা মোড় হয়ে শেঠ শ্রীলাল মার্কেট, বিধান মার্কেট, বিধান রোড হয়ে ফের স্টেডিয়ামে যায় মিছিল।
গোড়ায় তাতে অংশ নেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসু। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অবশ্য মিছিল শুরুর কয়েক মিনিট পরেই চলে যান। এর পরে চলে যান রথীনবাবুও। পরিবেশপ্রেমীদের সঙ্গে গঙ্গোত্রী দেবী অবশ্য আগাগোড়া মিছিলে ছিলেন। ওই মিছিলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন তৃণমূলের মদন ভট্টাচার্যও। বাটা মোড়ে মিছিলে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা সুজয় ঘটক ও তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীলশর্মাও। এর পরে যোগ দেন তৃণমূল নেতা নান্টু পাল। প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী বলেন, “আমরা পুরসভায় ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পুরোপুরি বন্ধ করেছিলাম। এখন ফের তা চালু করতে একটি মহল সক্রিয় হয়েছে। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর হিসেবে শিলিগুড়ি যে মর্যাদা পেয়েছে তা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সে জন্য পথে নেমেছি।”
তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দাবি করেছেন, বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় দুদিন আগেই তিনি কথার্বাতা বলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। আগের সরকারের তরফে নিষেধাজ্ঞা জারি করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। তা শুধরে খুব তাড়াতাড়ি নিয়ম মাফিক সরকারি নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হবে বলে আশা করছি।”
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ), গ্রিন এনভায়রনমেন্ট প্রিজারভেশন সোসাইটি, শিলিগুড়ি ভলান্টিয়ারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের মতো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী এবং পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের উদ্যোগে শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতে এ দিন মিছিলের আয়োজন করা হয়। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবসায়ীদের একাংশ সম্প্রতি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দিল্লিতে গ্রিন ট্রাইবুন্যালে যান। গ্রিন ট্রাইবুন্যাল রাজ্য সরকারকে পদ্ধতি মেনে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলে। সেখানে কোথাও বলা হয়নি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল।’’
কংগ্রেস এবং তৃণমূল যৌথভাবে পুর নির্বাচনে লড়ে বোর্ড দখল করলেও মেয়র নিবার্চন নিয়ে গোলমালের জেরে কংগ্রেস বামেদের সমর্থনে একাই বোর্ড দখল করে। সেই সময় পরিবেশ এবং জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয়বাবু শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করতে উদ্যোগী হন। ন্যাফের মতো শহরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও সামিল হয়। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার রুখতে লাগাতার অভিযান চালানো, বাসিন্দাদের সচেতন করার মধ্য দিয়ে শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করতে সমর্থন হন তারা। কলকাতার মতো শহরে যা সম্ভব হয়নি শিলিগুড়ি তা করে দেখানোয় তা গর্বের বিষয় হয়ে ওঠে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু বলেন, “শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতেই হবে। কোনও ভাবেই এই সম্মান নষ্ট করা চলবে না। এর জন্য সবাইকে এক হয়েই চলতে হবে।”
বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু জানান, শহরকে দূষণ মুক্ত করাই লক্ষ্য। রথীনবাবু বলেন, “প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বিপজ্জনক। শহরে ওই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার ফেরাতে দেওয়া চলবে না। এটা নিয়ে রাজনীতি হওয়া কাম্য নয়। শহরের উন্নয়নের স্বার্থে আমরা সবরকম উদ্যোগে সামিল হব।”