বেশ ক’দিন ধরেই গভীর রাতে মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের আবাসনের বাগানে শোনা যাচ্ছিল ধুপধাপ আওয়াজ। বেরিয়ে এসেছিলেন আবাসনের নৈশপ্রহরী, অন্যান্য বাসিন্দারা। চোখে পড়েনি কিছুই। অবশেষে দিন দুয়েক আগে আবাসনের নৈশপ্রহরী প্রদীপ দে সরকার যা দেখলেন, তা পিলে চমকে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। বললেন, “পেল্লায় আকার। সাদা রঙের লেজ। মাটি থেকে বড় জোর দেড় থেকে দু’ফুট লম্বা হবে। বাইরে বেরোতেই পাঁচ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে অন্ধকারে মিশে গেল।”
শনিবার দুপুরে ঘটনার খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার পুলিশ আবাসনে যান বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের এডিএফও-সহ অন্যান্য বনকর্মীরা। বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্পের এডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পায়ের ছাপ দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, জন্তুটি চিতাবাঘ নয়। এটি ‘লার্জ সিভেট’ হতে পারে। উচ্চতায় কুকুরের মত। গায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা থাকে।”
প্রদীপবাবু বলছেন, “বেশ কয়েকদিন ধরেই রাতের দিকে আওয়াজ পাচ্ছিলাম। বাগানেও বেরিয়েছি। তবে রাতে কোথাও কিছু দেখতে পাইনি। দিন দুয়েক আগে ফের আওয়াজ পেয়ে দেখি, গাছের আড়ালে সাদা রঙের একটি লেজ নড়ছে। আমি বাইরে বেরোতেই লাফিয়ে পাঁচিল টপকে বাইরে চলে গেল।”
আলিপুরদুয়ারে শহরের ব্যস্ততম পার্ক রোড এলাকার ওই আবাসনটির পাশেই রবীন্দ্র শিশু উদ্যান ও তৃণমূলের জেলা কার্যালয়। পাশেই ম্যাকউইলিয়াম হাই স্কুলের পার্ক। পার্কের নীচে প্রায় ৫০-৬০ মিটার গভীর একটি গর্ত রয়েছে। অসিতাভবাবু জানান, ওই প্রাণীটি হয়তো গর্তে থাকছিল। গর্তের একদিকের মুখ কাঠ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। অন্য প্রান্তে খাঁচা বসানো হয়েছে।
জনবহুল এই এলাকায় এমন ঘটনায় কোনওরকম ঝুঁকি নিতে নারাজ পুরসভার চেয়ারম্যান বাবলু দত্ত। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় কিছুদিন আগে একটি কুকুর মারা যাওয়ার খবর পেয়েছিলাম। এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, একটি ডোরাকাটা বুনো জন্তুকে মৃত কুকুরটি টেনে নিয়ে যেতে দেখেছেন। আজ খবর পাই, পার্কের পাশে একটি ডোরাকাটা প্রাণী দেখা গিয়েছে। বিষয়টি বন দফতরে জানিয়েছি। ওঁরা খাঁচা পাতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
এলাকার বসিন্দা সঞ্জীব ধর, সমীর সরকারেরা জানান, এলাকার বহু শিশু পার্কে খেলতে যায়। ওই পার্কে এবং তার পাশে মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের আবাসনের বাগানে ওই জন্তুটির পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। দেওয়ালেও আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে। খবরটি জানাজানি হতেই বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন।
যাঁর বাগানে হানা দিচ্ছে ওই জন্তুটি, সেই মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম সরকার বলেন, “বন দফতর পার্কের পাশে খাঁচা পেতেছে। দেখা যাক কী হয়।”