প্রায় ১১ বছর আগে শিলিগুড়ি মহকুমা এলাকায় সব ধরণের প্লাস্টিক ক্যারিবাগ নিষিদ্ধ বলে নির্দেশ দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। দু’বছর আগে প্লাস্টিক ক্যারিবাগ ফের চালুর জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা অসংবিধানিক বলে দিল্লির ‘ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালে, প্রিন্সিপাল বেঞ্চে’ আবেদন করে উত্তরবঙ্গের প্লাস্টিক উত্পাদনকারী এবং ডিলারদের ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাইবুনাল এক নির্দেশিকায় পর্ষদের পুরনো নির্দেশ আপাতত স্থগিত রেখে নতুন করে সমস্ত আইন মেনে নির্দেশিকা জারির নির্দেশ দিয়েছে। এই অবস্থায় ‘আপাতত’ শহরে ফের প্লাস্টিক ক্যারিবাগ তৈরি এবং ব্যবহার করা যাবে বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের সংগঠন।
এই অবস্থায়, শিলিগুড়ি শহরের ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে কোনওভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে দেওয়া হবে না জানিয়ে দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। এ দিন তিনি বলেছেন, “আমরা ট্রাইবুনালের কী নির্দেশ রয়েছে তা খতিয়ে দেখছি। আমি পরিবেশ মন্ত্রী এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছি। শিলিগুড়ির ইকোলজিক্যাল ব্যালান্স কোনওভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া হবে না।” রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার বলেন, “ট্রাইবুনালের নির্দেশ নিয়ে পর্ষদের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছি। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকার উপর নতুন রায় দেওয়ার সময় গ্রিন ট্রাইবুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চ অবশ্য পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ‘ইকো-সেন্সিটিভ’ এলাকায় প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার বা বিক্রি করা ঠিক নয়। সে জন্য সেই এলাকার বাসিন্দাদেরই উদ্যোগী হতে হবে। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সংস্থাগুলিকে (প্লাস্টিক ব্যবসায়ী) তাঁদের সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে এটা সক্রিয়ভাবে পালন করতে হবে। উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি শহর ‘ইকো সেন্সিটিভ’ হিসাবে দীর্ঘদিন ধরেই চিহ্নিত।
সরকারি সূত্রের খবর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকার যে অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তা হল, নির্দেশিকা জারির আগে সংবাদপত্র বিজ্ঞপ্তি জারি বা জন শুনানি করা হয়নি। এই নিয়ে পর্ষদের অফিসারেরা জানিয়েছেন, ট্রাইবুনালের তরফে ত্রুটি চিহ্নিত করা হলে তা শুধরে নেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রয়োজনে পর্ষদের তরফে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি বা জনশুনানি করা হবে। প্লাস্টিক ক্যারিবাগের জন্য জল দূষণ, অত্যাধিক মাত্রায় জঞ্জাল, আগুনে পোড়ানোর জেরে বায়ু দূষণ হয়। সেক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা না করে কাগজের ক্যারিবাগ ব্যবহার করা জরুরি।
পর্ষদের ওই অফিসারেরা জানান, পাহাড়, উপকূলবর্তী এলাকা ছাড়াও শিলিগুড়ির শহর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। শিলিগুড়িতে কোনও ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিবাগ ব্যবহার, বিক্রি বা তৈরি করাটা বাঞ্ছনীয় নয় বলে পর্ষদ মনে করে। ট্রাইবুনালে গিয়ে পর্ষদের আইনজীবীরা জানিয়ে দিয়েছেন, পর্ষদ পুরো বিষয়টি নতুন করে খতিয়ে দেখবে। অভিযোগকারী বা ক্ষতিগ্রস্থদের শুনানিতে সুযোগ দেওয়া হবে। তা ছাড়া নতুন করে ছাড়ের জেরে প্লাস্টিক ক্যারিবাগের বিক্রি ও ব্যবহার শুরু হলেও তা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠবে। একাংশ নিয়ম মেনে ক্যারিবাগ তৈরির করার বললেও একাংশ অসাধু ব্যবসায়ী তা করবেন না, এমন আশঙ্কাও রয়েছে পর্ষদের।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের সংগঠনের মুখপাত্র রতন বিহানী, মোহন দেবনাথদের দাবি, “আমরাও দূষণ বিরোধী। দার্জিলিং, গ্যাংটকে ক্যারিবাগ বন্ধ নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। শিলিগুড়ি শহর বাণিজ্যক শহর। আমরা বলছি, এখানে রিসাইক্লিং করা যায় এমন প্লাস্টিক ক্যারিবাগ তৈরি বা ব্যবহার করা যেতেই পারে। তাতে দূষণ ছড়ায় না। তা ছাড়া পর্ষদের নির্দেশ ত্রুটিযুক্ত ছিল।” তাঁর দাবি অনুযায়ী, গ্রিন ট্রাইবুনাল যে রায় দিয়েছে তাতে ৪০ মাইক্রনের উপরে প্লাস্টিক ক্যারিবাগ তৈরি বা বিক্রিতে এখন বাধা নেই।
২০০৯ সালের পর প্লাস্টিক মুক্ত এবং দূষণ মুক্তি শহর গড়ার লক্ষ্যে কাজও শুরু করে পুরসভা। এরজন্য সরকারি স্তরে পুরসভাকে পুরস্কৃতও করা হয়। সেই সময় পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) ছিলেন জেলা কংগ্রেস নেতা সুজয় ঘটক। এদিন তিনি বলেন, “শিলিগুড়ি শহরের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব এখন রাজ্য সরকার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। তাঁরা শহরকে দূষণ মুক্ত চাইলে একরকম পদক্ষেপ করবেন। যদি দূষণ যুক্ত শহর বানাতে হয় তা হলে সেই মতো কিছু করবে রাজ্য সরকার।”