Mass Extinction

World Spending for Extinction: গণবিলুপ্তির পথে আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে বছরে দু’লক্ষ কোটি ডলার খরচ করছে বিশ্ব! জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ

এই অপরিকল্পিত অর্থবরাদ্দের ফলে সভ্যতা আরও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির পথে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১২:৪৪
Share:

যে সব খাতে, যে সব দিকে অঢেল অর্থ ব্যয় বা বরাদ্দ করা হচ্ছে তাতে শেষের সে দিন আরও তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসছে। -ফাইল ছবি।

অস্তিত্ব রক্ষায় নয়, নিজেদের বিনাশ, বিলুপ্তির জন্যই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সভ্যতা! চাইছে নিজের সর্বনাশই।

Advertisement

সর্বনাশের দিনগুলিকে আরও তাড়াতাড়ি কাছে টেনে আনার জন্যই খরচ করা হচ্ছে লাগামছাড়া! বিলুপ্তির পথে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও দেশেরই গাঁটের কড়ির অভাব হচ্ছে না।

দেদার খরচ করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার, পাউন্ড, ইউরো। কিন্তু যে সব খাতে, যে সব দিকে সেই অঢেল অর্থ ব্যয় বা বরাদ্দ করা হচ্ছে তাতে শেষের সে দিন আরও তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ। প্রকৃতি, পরিবেশ। আরও ‘জ্বর’ বাড়ছে পৃথিবীর। দ্রুত হারে উষ্ণায়নের জেরে গলে যাচ্ছে দুই মেরুর বরফের পুরু চাঙর। উঠে আসছে সমুদ্র, মহাসাগরের জলস্তর আশঙ্কাজনক ভাবে। আরও দ্রুত সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির পথে।

Advertisement

শেষের সে দিনকে আরও তাড়াতাড়ি কাছে টেনে আনার জন্য বছরে বিশ্বে খরচ করা হচ্ছে গড়ে ২ লক্ষ কোটি ডলার। যা বিশ্বের মোট জিডিপি-র অন্তত ২ শতাংশ। তা খরচ করা হচ্ছে এমন সব প্রকল্পে যাতে নির্বিচারে বিলুপ্ত হয় বন্যপ্রাণ। ধ্বংস হয়ে যায় প্রকৃতি ও পরিবেশ। ভয়ঙ্কর সর্বনাশ হচ্ছে সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের। সভ্যতাই গণবিলুপ্তিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। গণবিলুপ্তিকে ত্বরান্বিত করছে, বিপুল অর্থসাহায্য করে। অর্থবরাদ্দ করে। বাছবিচার না করে নেওয়া পরোক্ষে বন্যপ্রাণ ও পরিবেশ ধবংসের বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া ভর্তুকির মাধ্যমে।

মার্চে জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের আসন্ন আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য সম্মেলন (‘বায়োডাইভার্সিটি কনফারেন্স’)-এর প্রাক মুহূর্তে বিশেষজ্ঞদের গবেষণালব্ধ একটি রিপোর্ট এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। রিপোর্টের শিরোনাম— ‘প্রোটেক্টিং নেচার বাই রিফর্মিং এনভায়রনমেন্টালি হার্মফুল সাবসিডিজ: দ্য রোল অব বিজনেস’। সেই রিপোর্ট রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে থাকা সংস্থা ‘বিজনেস ফর নেচার’-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ভর্তুকি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘আর্থ ট্র্যাক’-এর ওয়েবসাইটেও। গত দেড় দশকে এই প্রথম সামনে এল এমন রিপোর্ট। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রকল্পগুলিতে বিশ্বের সবক’টি দেশে বছরে গড়ে কী পরিমাণে অর্থবরাদ্দ করা হয় তারও পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেওয়া রিপোর্টে।

রিপোর্টে জানানো হয়েছে, পরিবেশ ও বাস্ততন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর যে সব শিল্প ও কৃষি প্রকল্পে বিশ্বে ফিবছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অর্থবরাদ্দ ও ব্যয়ের পরিমাণ তার মধ্যে অন্যতম— জীবাশ্ম জ্বালানি, কৃষি ও জলনির্ভর শিল্প। বছরে মোট অর্থবরাদ্দের ৮০ শতাংশই যাচ্ছে এই সব ক্ষেত্রে।

জীবাশ্ম জ্বালানি

বিশ্বে বছরে বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকির মাধ্যমে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি ডলার অর্থসাহায্য পাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর শিল্প, প্রকল্প, নানা কর্মকাণ্ড। তার জেরে জলবায়ু পরিবর্তনের গতি বেড়ে চলেছে। বায়ু ও জলদূষণ বাড়ছে। বাড়ছে ভূমিক্ষয় ও ধসের ঘটনা।

কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প

বিশ্বে বছরে বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকির মাধ্যমে গড়ে ৫২ হাজার কোটি ডলার অর্থসাহায্য পাচ্ছে কৃষিভিত্তিক শিল্পক্ষেত্রগুলি। বাড়তি উৎপাদনের লক্ষ্যে অনিয়ন্ত্রিত, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজের জন্য জমির ক্ষয় হচ্ছে দ্রুত হারে। বাড়ছে জলদূষণ। বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে নির্বিচারে। গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের পরিমাণ বাড়ছে। প্রাণী ও উদ্ভিদের বহু প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে পৃথিবীর সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের। বিশ্বে ফিবছরে যে পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হয় কৃষিতে তার ৯০ শতাংশই পরিবেশ ও সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।

জলনির্ভর শিল্প

আর বিশ্বে বছরে বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকির মাধ্যমে গড়ে ৩৫ হাজার কোটি ডলার অর্থসাহায্য পাচ্ছে জলনির্ভর শিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্পক্ষেত্র ও বর্জ্য জলকে রূপান্তরের প্রকল্পগুলি। তার ফলে, পরিস্রুত জলের বেহিসাবি খরচ হচ্ছে। তাতে জলদূষণ বাড়ছে। সাগর, মহাসাগর ও নদী, খাল-বিলে থাকা জলজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে উদ্বেগজনক হারে।

এ ছাড়াও পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর আর যে সব প্রকল্পে দেদার অর্থবরাদ্দ করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে বনসৃজন। এই প্রকল্পে ফিবছর বিশ্বে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হচ্ছে। নির্মাণপ্রকল্পে ন’হাজার কোটি ডলার, পরিবহণে আট হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং মৎস্যপ্রকল্পে পাঁচ হাজার কোটি ডলার।

আগামী তিন দশকে ভর্তুকির মাধ্যমে এই অর্থবরাদ্দের অভিমুখ জানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে। তার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে ৫০ হাজার কোটি ডলার ব্যয়বরাদ্দের আর্জি জানানো হয়েছে। যাতে সভ্যতাকে আরও দ্রুত হারে গণবিলুপ্তির পথে এগিয়ে যেতে না হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement