রাশিয়ার ল্যান্ডার লুনা-২৫বাহী মহাকাশযান। ছবি: সংগৃহীত।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে ভারত বনাম রাশিয়ার যে দ্বৈরথ শুরু হয়েছে, তার নিষ্পত্তি হতে আর বেশি দেরি নেই। শীঘ্রই চাঁদের মাটিতে পা রাখবে এই দুই দেশের দুই মহাকাশযান। বৃহস্পতিবার চন্দ্রযান-৩ থেকে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ আলাদা হয়ে গিয়েছে। এর পরেই শুরু হবে অবতরণ প্রক্রিয়া। রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতর নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাখির পালকের মতো নামার কথা (সফ্ট ল্যান্ডিং) ‘বিক্রম’-এর। এখনও পর্যন্ত চন্দ্রযান-৩-এর অভিযান পরিকল্পনামাফিক চলেছে। ইসরো ধাপে ধাপে পৃথিবীর উপগ্রহের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে মহাকাশযানটিকে। কিন্তু রাশিয়ার আগে কি ইসরোর চন্দ্রযান-৩ চাঁদে নামতে পারবে?
গত ১৪ জুলাই চন্দ্রযান-৩-এর উৎক্ষেপণ হয়েছে। রাশিয়া লুনা-২৫কে চাঁদে পাঠিয়েছে ১১ অগস্ট। কিন্তু দেরিতে শুরু হলেও রুশ অভিযান ইসরোর প্রায় একই সময়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা। বরং লুনা-২৫ ইসরোর নির্ধারিত অবতরণের দিনের আগেই চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
চাঁদে যাওয়ার জন্য লুনা-২৫ সোজাসুজি পথ অবলম্বন করেছে। চন্দ্রযান-৩ গিয়েছে কিছুটা ঘুরপথে। তাই ইসরোর অভিযানে সময় লাগছে ৪১ দিন। আর রাশিয়ার মহাকাশযান উৎক্ষেপণের মাত্র ১২ দিনের মধ্যেই চাঁদে পৌঁছবে। এ ক্ষেত্রে, ইসরো খরচ কমানোর জন্য পৃথিবী এবং চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘুরপথে চন্দ্রযান-৩-কে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। রাশিয়া তা না করে অধিক খরচে মন দিয়েছে। তাদের নির্ধারিত অবতরণের তারিখ ২১ থেকে ২৩-এর অগস্টের মধ্যে। অন্য দিকে, ইসরো আগেই ঘোষণা করেছে, চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার চাঁদে নামবে আগামী বুধবার, ২৩ অগস্ট।
এখন প্রশ্ন হল, রাশিয়ার লুনা-২৫ এই মুহূর্তে কোথায়? সেটি কি চন্দ্রযান-৩কে অতিক্রম করে গিয়েছে? চাঁদের মাটিতে নামতে তার আর কত সময় লাগবে?
বুধবার রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস জানিয়েছে, লুনা-২৫ সফল ভাবে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। এ বার সে আপন গতিতে পৃথিবীর উপগ্রহটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, লুনা-২৫ এখনও ভারতের পিছনেই রয়েছে। ভারতের মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথে যাত্রা সম্পন্ন করে ল্যান্ডার বিচ্ছিন্ন করার পর্বটিও সেরে ফেলেছে।
তবে লুনা-২৫ যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে আগামী দিনে ভারতের ‘বিক্রম’ চাঁদে নামার আগেই রাশিয়ার ল্যান্ডার চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে ফেলবে কি না, সেটা দেখার। যদিও অনেকে মনে করছেন, ইসরোর ঘোষিত দিনের আগেই ‘বিক্রম’ চাঁদে নেমে পড়তে পারে। কারণ বৃহস্পতিবার ল্যান্ডারটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এর পর অবতরণে ছ’দিন সময় না-ও লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও আগেই চাঁদের মাটি ছোঁবে ইসরো।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু এখনও অনাবিষ্কৃত। সেখানে যে আগে পা রাখবে, সে-ই ইতিহাসে নাম তুলে ফেলবে। এই দৌড়ে ভারত রাশিয়াকে হারাতে পারে কি না, সে দিকেই নজর বিশ্ববাসীর।