প্রতীকী ছবি।
ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের যে নতুন রূপ (‘ভেরিয়্যান্ট’)-টির প্রথম হদিশ মিলেছিল সেই ‘B.1.1.7’ অন্য রূপগুলির চেয়ে একটু বেশি বিচক্ষণ! তারা আশ্রয়দাতা (‘হোস্ট’) মানুষকে চট করে মেরে ফেলতে চায় না। কোভিডকে মানুষের দেহে ভয়াবহ করে তুলতেও চায় না। বরং আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়তে চায়। অন্য রূপগুলির চেয়ে 'B.1.1.7' অনেক দ্রুত হারে একটি মানুষ থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য মানুষে।
ব্রিটেনের সাম্প্রতিক ২টি গবেষণা এ কথা জানিয়েছে। এদের মধ্যে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য ল্যান্সেট পাবলিক হেল্থ’-এ। সোমবার।
এ ব্যাপারে আগের গবেষণা ঠিক উল্টো দাবি করেছিল। জানিয়েছিল, করোনাভাইরাসের 'B.1.1.7' রূপটি অন্য রূপগুলির চেয়ে বেশি মারক। একই সঙ্গে অনেক বেশি সংক্রামকও। তাই মানুষের পক্ষে এই রূপটি বেশি বিপজ্জনক। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ওঠার পর ভারতেও কয়েকটি রাজ্যে ভাইরাসের এই রূপটির দেখা মিলেছে।
সাম্প্রতিক এই ২টি গবেষণার একটির সহ-প্রধান গবেষক লন্ডনের কিং’স কলেজের অধ্যাপক মার্ক গ্রাহাম বলেছেন, ‘‘আমাদের গবেষণা জানাল, অন্য রূপগুলির চেয়ে B.1.1.7-এর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা বেশি থাকলেও অন্য রূপগুলি থেকে সংক্রমণের উপসর্গগুলির ধরন বা চরিত্র ও সেগুলির মেয়াদ কিন্তু বদলে দেয় না। ফলে, করোনাভাইরাসের অন্য রূপগুলির জন্য যে টিকাগুলি বাজারে চলছে এবং যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে সেগুলি দিয়েই B.1.1.7-এর মোকাবিলা সফল ভাবে করা সম্ভব।’’
ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের এই নতুন রূপ 'B.1.1.7'-এর প্রথম হদিশ মিলেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তার পর তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ জানাচ্ছে, আমেরিকায় এখন করোনাভাইরাসের যে রূপগুলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের শীর্ষে রয়েছে এই 'B.1.1.7;।
ব্রিটেনে ৩৭ হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়েছিলেন গবেষকরা। যাঁরা গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন। এবং বিশেষ একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের উপসর্গগুলি জানা গিয়েছিল। গবেষকরা দেখেছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মূলত লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডেই করোনাভাইরাসের এই নতুন রূপ 'B.1.1.7' বেশি দ্রুত হারে অনেক বেশি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।
গবেষকরা দেখেছেন, ভাইরাসটির অন্য রূপগুলি যে গতিতে এক জন মানুষ থেকে অন্য জন মানুষে ছড়িয়েছে এত দিন ধরে, তার ১.৩৫ গুণ বেশি গতিতে ছড়িয়েছে 'B.1.1.7'।
অন্য গবেষণাপত্রটিও প্রকাশিত হয়েছে সোমবার। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য ল্যান্সেট ইনফেকশাস ডিজিজেস’-এ। ওই গবেষণায় গত বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হাসপাতাল ও নর্থ মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৪১ জন কোভিড রোগীর উপর পরীক্ষা চালান গবেষকরা। দেখা যায়, রোগীদের ৫৮ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছেন 'B.1.1.7' রূপের মাধ্যমে। বাকি ৪২ শতাংশের সংক্রমিত হওয়ার কারণ হয়েছে করোনাভাইরাসের অন্য রূপগুলি।