এখান থেকেই হদিশ মিলেছে ম্যাগমা মহাসাগরের সেই পাথরের। গ্রিনল্যান্ডে। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
এখন যাকে আমরা ভূপৃষ্ঠ বলে জানি, প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে তা ছিল অত্যন্ত উষ্ণ তরল পাথরের (‘ম্যাগমা’) মহাসাগরের তলায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অত্যন্ত উষ্ণ তরল পাথরের স্রোত নেমে গিয়েছে ভূপৃষ্ঠের অনেক নীচে। পৃথিবীর ‘কোর’ বা অন্দরের উপরের স্তরের কিছুটা উপরে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র এই খবর দিয়েছে।
গবেষকরা গ্রিনল্যান্ড থেকে সেই সুপ্রাচীন ম্যাগমা মহাসাগরের কিছু পাথরের হদিশ পেয়েছেন। যেগুলি পরীক্ষা করে তাঁরা জানিয়েছেন এখনকার ভূপৃষ্ঠের উপর সেই ম্যাগমা মহাসাগর বইত আজ থেকে ৩৭০, ৩৮০ কোটি বছর আগে।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।
দক্ষিণ-পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডের যে এলাকা থেকে গবেষকরা এই প্রায় ৪০০ কোটি বছরের প্রাচীন পাথরগুলি পেয়েছেন, ভূতাত্ত্বিকরা সেই অঞ্চলটিকে বলেন, ‘আইসুয়া সুপ্রাক্রাস্টাল বেল্ট’। ভূপৃষ্ঠের প্রাচীনতম পাথরখণ্ডগুলি রয়েছে এই জায়গাতেই। যেগুলি টেকটনিক প্লেটের ধাক্কাধাক্কি, প্রচণ্ড তাপ ও নানা রকমের রাসায়নিক পরিবর্তনেও অবিকৃতই থেকে গিয়েছে কয়েকশো কোটি বছর ধরে।
গবেষকরা অবশ্য এ-ও জানিয়েছেন, এই পাথরগুলির যা বয়স, ভূপৃষ্ঠে ম্যাগমা মহাসাগরের জন্ম হয়েছিল তারও অনেক আগে। প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে। যে সময় মঙ্গল গ্রহের সমান আকারের কোনও মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীর উপর। তাতে তার ভিতরের পাথর তুলে এনেছিল উপরে। সেই সময় পৃথিবীর অন্দরের সেই পাথর থেকেই জন্ম হয়েছিল চাঁদের।
‘‘ম্যাগমা মহাসাগরের সেই অত্যন্ত উষ্ণ তরল পাথরের স্রোত ঠাণ্ডা হয়ে কেলাসে জমাট বাঁধার পরেই পৃথিবীর পরিবেশ ধীরে ধীরে বাসযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করে। তবে এত দিন তার কোনও প্রমাণ মিলছিল না। কিন্তু এই পাথরগুলির হদিশ মেলায় এ বার সেই প্রক্রিয়ার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেল’’, বলেছেন অন্যতম মূল গবেষক কেমম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওকেমিস্ট্রির অধ্যাপক হেলেন উইলিয়ামস।