Science News

উষ্ণায়ন কমাতে ‘বিষ’কে বন্ধু বানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

শত্রুকে বন্ধু বানিয়ে তার ‘শত্রুতা’ কমানোর চেষ্টা চলছে এই ভাবেই। গোটা বিশ্বে। ভারতেও।

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ১৫:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

যাকে বিষ বলে জানি, সে-ই নরম মাথার বালিশে রাতের ঘুমকে আরও জমিয়ে দিচ্ছে!

Advertisement

একটু একটু করে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে যে, সে-ই বিছানার ম্যাট্রেসকে আরও আরামের করে তুলছে!

শ্বাসের বাতাসকে বিষিয়ে দেওয়ার সেই মূল চক্রীই জুতোর সোলকে আরও মজবুত করে তুলছে, রাস্তার কংক্রিটকে আরও জমাট, আরও শক্তপোক্ত হয়ে উঠতে সাহায্য করছে। সহায়ক হয়ে উঠছে নতুন বই বাঁধাইয়ের!

Advertisement

শত্রুকে বন্ধু বানিয়ে তার ‘শত্রুতা’ কমানোর চেষ্টা চলছে এই ভাবেই। গোটা বিশ্বে। ভারতেও।

উষ্ণায়নের হাত থেকে বাঁচতে বাতাসে জমা বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ যতটা সম্ভব কমানোর জন্য সেই বিষকেই সভ্যতার নানা প্রয়োজন মেটাতে ‘বিশ্বকর্মা’ করে তোলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- আলোখেকো গ্রহের হদিশ মিলল এই প্রথম​

আরও পড়ুন- আইনস্টাইনকে পাশ করিয়ে নোবেল পেলেন তিন পদার্থবিজ্ঞানী

দ্রুত সর্বগ্রাসী শিল্পায়নের ফলে বাতাসে যে ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে, যাচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, তা কমাতে কয়লাচালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাতাসে মেশা বিষকে (কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস) বাতাস থেকে টেনে নিয়ে তাকে মানুষের কাজে লাগানো হচ্ছে তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে।

কী ভাবে কমানো যায় বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নির্গমন: দেখুন ভিডিও

তুতিকোরিন বন্দরে সেই কাজে নেমেছে ‘কার্বন ক্লিন সলিউশন’ সংস্থা। সংস্থার অপারেশনাল ম্যানেজার জ্ঞানেশ রেড্ডি বলছেন, ‘‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যেহেতু চলে কয়লায়, তাই ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ গত কয়েক দশকে বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। যা অবশ্যই উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ। তাই উষ্ণায়ন কমাতে আমরা বাতাস থেকে যতটা সম্ভব বাড়তি কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি। সেই কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে বাতাস থেকে টেনে নিয়ে বানানো হচ্ছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। এটাই আরও সস্তায় রাসায়নিক সার, সিনথেটিক ডিটারজেন্ট ও নানা রকমের রং তৈরি করতে সাহায্য করছে।’’

একই কাজ করে চলেছে ব্রিটিশ সংস্থা ‘ইকোনিক টেকনোলজিস’ ও কানাডার সংস্থা ‘কার্বন কেয়ার টেকনোলজিস’।

শিল্পায়নের ফলে বাতাসে মেশা বাড়তি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে বাতাস থেকে ফের টেনে নিয়ে প্লাস্টিক বানাচ্ছে সংস্থাটি। লক্ষ্যটা সেই একই। বাতাসে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস যেন না জমে। ওই গ্যাসের পরিমাণ কমানোর কাজটা জটিল এই কারণেই যে, প্রায় কোনও পদার্থের সঙ্গেই তেমন বিক্রিয়া করে না ওই বিষাক্ত গ্যাস। তা করলে বাতাস থেকে তার পরিমাণ কমানো যেত অনেক সহজেই।

কী ভাবে বাতাস থেকে টেনে নেওয়া যায় বাড়তি কার্বন ডাই অক্সাইড: দেখুন ভিডিও

ইকোনিক টেকনোলজিস-এর দক্ষিণ এশিয়া অপারেশনের ম্যানেজার অরুণ মিত্তল জানিয়েছেন, কাঁচা পেট্রোপণ্য দিয়ে তাঁরা অনেক সহজে, সস্তায় প্লাস্টিক বানাচ্ছেন। কার্বন ডাই অক্সাইডের ভূমিকা সেখানে অনুঘটকের। মিত্তলের কথায়, ‘‘যে পলিঅল দিয়ে প্লাস্টিক বানানো হয়, তার ৩০ শতাংশই আমরা এই প্রযুক্তিতে বানাতে পারব বলে আশা করছি।’’

সংস্থাটির দাবি, এর ফলে ফি বছরে বাতাসে মেশা অন্তত ৩৫ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে ফের বাতাস থেকে টেনে নেওয়া যাবে। বাতাস কিছুটা বিষমুক্ত হবে। রাস্তা থেকে পেট্রোল, ডিজেল চলা ২০ লক্ষ গাড়ি তুলে নেওয়া হলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ এতটাই কমবে বাতাসে।

কানাডার কার্বন কিওর টেকনোলজিস এই কাজটাই করছে রাস্তার কংক্রিটকে আরও শক্তপোক্ত করে তোলার জন্য। সংস্থাটি তরল কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে কংক্রিটের মশলার মধ্যে সরাসরি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তার ফলে তৈরি হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বনেট। যা কংক্রিটকে আরও ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি মজবুত করে তুলছে। একই কাজ করছে আরও একটি বিদেশি সংস্থা কার্বন ইঞ্জিনিয়ারিং। সংস্থাটি বাতাসে মেশা কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে ওই বিষাক্ত গ্যাস দিয়েই বানাচ্ছে ডিজেল আর বিমানের জ্বালানি।

এই সব উদ্যোগের ফলে কি উষ্ণায়নের সমস্যা কমানো যাবে উল্লেখযোগ্য ভাবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তা আদতে স়িন্ধুতে বিন্দুর মতোই। কারণ, প্রাক শিল্পযুগে যে তাপমাত্রা ছিল, উষ্ণায়নের কমাতে তার চেয়ে তাপমাত্রা যাতে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না ওঠে, তার অঙ্গীকার করেছে ১৯৫টি দেশ, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার কমাতে হবে অনেক বেশি হারে। ফি বছর ১২০০ থেকে ১৪০০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে বাতাস থেকে টেনে নিতে হবে। ইকোনিক টেকনোলজিসের দাবি, তারা ২০২৬ সালের মধ্যে বাতাস থেকে বড়জোর ৩৫ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে টেনে নিতে পারবে, ফি বছরে। আর কার্বন কিওর সংস্থাটির প্রযুক্তি অনুসরণ করলে বিশ্বের কংক্রিট নির্মাণকারী সংস্থাগুলি ফি বছরে ৭০ কোটি টন বিষাক্ত গ্যাস বাতাস থেকে টেনে নিতে পারবে।

তাঁদের বক্তব্য, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নির্গমন কমাতে আশু প্রয়োজন পেট্রোল, ডিজেলের ওপর উত্তরোত্তর নির্ভরতা কমানো। পাশাপাশি এই উদ্যোগও চলতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement