দাবানলে বিলুপ্তির পথে বহু উদ্ভিদ-প্রজাতি। -ফাইল ছবি।
২০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিলুপ্তির পথে। এদের বেশ কিছু প্রজাতি ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তা আর মানুষের প্রয়োজনে লাগে না বলে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। হাজার হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের এমন দ্রুত হারে বিলুপ্তি বা বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের উপর পড়বে, আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। যার প্রভাব পড়বে বন, বন্যপ্রাণ, জলজ জীবন ও পরিবেশের উপরেও।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক উদ্ভিদবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘প্ল্যান্টস পিপ্ল প্ন্যানেট’-এ। সোমবার।
জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাছাড়া ব্যবহার ঘটিয়ে বাতাসে উত্তরোত্তর উদ্বেগজনক হারে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ঘটিয়ে আধুনিক সভ্যতা বাতাসকে বিষিয়ে দিয়েছে, দিচ্ছে। তার ফলে, হচ্ছে উষ্ণায়ন। জলবায়ুর পরিবর্তন। বাড়ছে তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, বন্যা, অতিবৃষ্টি, খরা, টাইফুন, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের মতো ঘটনার সংখ্যা ও তীব্রতা। নদীগুলির গতিপথ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। দুই মেরুর বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলস্তর আশঙ্কাজনক হারে উপরে উঠে আসছে। বাড়ছে বন কেটে বসত গড়ার যজ্ঞ, দাবানলের ঘটনাও। ফলে, যে পরিবেশ কোনও বিশেষ উদ্ভিদের বেঁচে থাকার পক্ষে আদর্শ, তার অভাব অনুভূত হচ্ছে।
গবেষণা জানিয়েছে, মানুষের ইচ্ছায় জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ দ্রুত নিজে বাঁচতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যাচ্ছে। চার্লস ডারউইনের তত্ত্ব মেনে এই পরিস্থিতিতে উদ্ভিদদেরও যদি অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়, তা হলে সেই বদলে যাওয়া প্রকৃতি, পরিবেশ, জলবায়ুতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। না হলে তাদের অন্যত্র চলে যেতে হবে বাঁচার তাগিদে। আর না হলে বদলে যাওয়া জলবায়ুর ধকল তাদের সইতে হবে।
এগুলি না পারলে ডারউইনের বিবর্তনবাদ মেনেই উদ্ভিদদের বিলুপ্ত হতে হবে। যার প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে বলে গবেষণাপত্রের দাবি।
গবেষকরা সাড়ে ৮৬ হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। যারা সকলেই ভাসকুলার প্লান্টস। অর্থাৎ যে উদ্ভিদরা ভাসকুলার কলার মাধ্যমে জল, পুষ্টিকর খাবারদাবার ও অন্যান্য জৈব ও অজৈব পদার্থ নিজেদের দেহের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। এরা পৃথিবীর জানা তিন লক্ষেরও বেশি ভাসকুলার প্লান্টের এক-তৃতীয়াংশ।
এই সাড়ে ৮৬ হাজার উদ্ভিদ-প্রজাতির মধ্যে গবেষকরা এমন ২০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির হদিশ পেয়েছেন, যারা হয় গবেষণা চলাকালেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বা বিলুপ্তির পথে। ফলে, এরা ডারউইনের ‘যোগ্যতমের জয়’ তত্ত্ব অনুযায়ী জিততে পারবে না। এদের হারিয়ে যেতেই হবে।
গবেষকদের হিসাবে, জিততে পারে সাকুল্যে ৬ হাজার ৯১৩টি প্রজাতির উদ্ভিদ।