—প্রতীকী চিত্র।
চাঁদের পর সূর্য।
সূর্যকে নজরবন্দি করার জন্য আজ, শনিবার শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ হবে যে ‘আদিত্য-এল ওয়ান’ সৌরযানের, তার সঙ্গেও জুড়ে রয়েছেন বেশ কিছু বাঙালি বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ।
শুক্রবারই নদিয়ার হরিণঘাটা থেকে শ্রীহরিকোটায় চলে গিয়েছেন আইসার কলকাতার ‘সেন্টার অব এক্সসেলেন্স ইন স্পেস সায়েন্স, ইন্ডিয়া’-র বিভাগীয় প্রধান দিব্যেন্দু নন্দী। আদিত্যর সাতটি প্রধান যন্ত্রের অন্যতম ‘সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ’ (সংক্ষেপে ‘সুট’) নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সেই টেলিস্কোপের কিছু নকশাও তৈরি হয়েছে আইসারের গবেষণাগারেই। সূর্যের থেকে ধেয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মির মাধ্যমে ছবি ফুটিয়ে তোলাই তার মূল কাজ। সূর্যের গায়ে ছড়ানো সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ ছাড়াও পৃথিবীর তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলা সৌরঝড়ের মেজাজ-মর্জির হদিসও দেবে এই টেলিস্কোপ।
চন্দ্রযান ৩-এর সফল অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বীরভূমের সিউড়ি ১ ব্লকের রায়পুরের বাসিন্দা সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও মল্লারপুরের বিজয় দাই। দু’জনেই যুক্ত আছেন আদিত্যের উৎক্ষেপণের সঙ্গেও। নিউটাউন আবাসন থেকে ফোনে সৌম্যজিতের বাবা দেবদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোজ বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে ভোরে বেরিয়ে ও ফিরছে সেই রাতে।’’
চন্দ্রযান ৩-এর মতো সৌরযানের কাজেও যুক্ত রয়েছেন কোচবিহারের পিনাকীরঞ্জন সরকার। শ্রীহরিকোটা থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের টিমের কাজ সৌরযানকে তার কক্ষপথ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। সফল হব বলেই আমাদের আশা।’’ পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা কৌশিক মণ্ডল এখন রয়েছেন তিরুঅনন্তপুরমে ইসরোর কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘‘যে রকেটে সৌরযান সূর্যের দিকে যাবে, তার পুরো যাত্রাপথ নজরে রাখব আমরা।’’
খড়্গপুর আইআইটি থেকে এম টেক করে ২০১৮ সাল থেকে ইসরোয় রয়েছেন রানিগঞ্জের সানি মিত্র। আদিত্যের ‘বিকাশ’ ইঞ্জিনের দেখভালের দায়িত্বে যে দল রয়েছে, তিনি সেটির সদস্য। উদ্বেগ ধরা পড়ে তাঁর কথায়, “দেড় বছর ধরে কাজ চলছে। অভিযান সফল না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ঘুম হবে না।”
সব কিছু ঠিকঠাক চললে পৃথিবী থেকে সরাসরি সূর্যের দিকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে শূন্যস্থানে পাক খেতে শুরু করবে আদিত্য। পাক খেতে-খেতেই সে নজরদারি চালাবে সূর্যের উপরে। চাঁদের কক্ষপথের বাইরে থাকায় গ্রহণের ছায়াও তার নজর আড়াল করতে পারবে না। আইসার কলকাতার দিব্যেন্দু নন্দী বলছেন, “উৎক্ষেপণ নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। সৌরযান প্রথমে পৃথিবীর চারদিকে পাক খাবে। সেখান থেকে তাকে ‘এল ওয়ান’ কক্ষপথের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছলে আর এক বার ঠেলা দিয়ে তাকে চূড়ান্ত কক্ষপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। এই দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। তা সম্পূর্ণ হতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ। তখনই বোঝা যাবে, আমরা সফল হতে পারলাম কি না।”