উল্কা আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে। প্রতীকী ছবি- শাটারস্টকের সৌজন্যে।
প্রায় ৮ লক্ষ বছর আগে প্রকাণ্ড একটি উল্কা পৃথিবীর বুকে যেখানে আছড়ে পড়েছিল, সেই জায়গাটির খোঁজ মিলল। এই প্রথম। হদিশ মিলল উল্কা আছড়ে পড়ার পর তৈরি হওয়া সেই সুবিশাল গর্তটির। ভিয়েতনামের লাওসের দক্ষিণ প্রান্তে। বোলাভেন মালভূমিতে।
গর্তটি চওড়ায় ৮ মাইল বা ১৩ কিলোমিটার। লম্বায় ১১ মাইল বা ১৭ কিলোমিটার। আর গভীরতায় ৩০০ ফুট বা ১০০ মিটার।
এত দিন সেই সুবিশাল গর্তটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ, পরে সেই এলাকায় ফুঁসে উঠেছিল একটি আগ্নেয়গিরি। যার থেকে বেরিয়ে আসা গনগনে লাভাস্রোত সময়ের স্রোতে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর ঢেকে দিয়েছিল সেই সুবিশাল গর্তটিকে। লাভাস্রোত ছড়িয়ে পড়েছিল ২ হাজার বর্গ মাইল বা ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (পিএনএএস বা পিনাস)’-এর ৩০ ডিসেম্বর সংখ্যায়।
টেকটাইটস তৈরি হয় কী ভাবে?
পৃথিবীতে উল্কা আছড়ে পড়ার পর কী কী ঘটনা ঘটতে পারে, তা নিয়ে রয়েছে নানা মতবাদ। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যাকসন স্কুল মিউজিয়াম অফ আর্থ হিস্ট্রি বিভাগের বিজ্ঞানীরা বলেন, উল্কা ভয়ঙ্কর গতিবেগে এসে পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে উল্কার গতিশক্তির বেশির ভাগটাই রূপান্তরিত হয় তাপশক্তিতে। তাতে ভূত্বকের পাথর গলে যায়। পরে যখন সেই গলে যাওয়া পাথর ঠান্ডা হয়ে আসে, তখন সেগুলি কাচের মতো ফোঁটায় বদলে যায়। সেগুলিকে ভূতত্ত্ববিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘টেকটাইটস’।
এই টেকটাইটসগুলির মিশমিশে কালো মেঘে পৃথিবীর ১০ শতাংশ ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।
উল্কা আছড়ে পড়লে কী হতে পারে? দেখুন ভিডিয়ো
প্রচুর পরিমাণে এই টেকটাইটসের দেখা মেলে ইন্দো-চিন এলাকা থেকে অ্যান্টার্কটিকার পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত। সেগুলির হদিশ মেলে ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত।
যে উল্কার আঘাতে এই টেকটাইটসদের জন্ম হয়েছিল, সেটি পৃথিবীর কোথায় আছড়ে পড়েছিল, প্রায় এক শতাব্দী ধরে তা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা।
ইন্দো-চিন এলাকাতেই টেকটাইটস সবচেয়ে বেশি
ইন্দো-চিন এলাকার মধ্যাংশেই বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পেয়েছিলেন টেকটাইটস। তবে সেই পরিমাণ এত বেশি আর এত বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিল যে বিজ্ঞানীরা ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন উল্কা আছড়ে পড়ার পর পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হওয়া গর্তের আকার নিয়ে। কারও ধারণা ছিল সেই গর্তের ব্যাস হতে পারে ৯ মাইল বা ১৫ কিলোমিটার। আবার কারও ধারণা ছিল, সেই গর্তের ব্যাস হতে পারে ১৮৬ মাইল বা ৩০০ কিলোমিটার।
গবেষকরা জানিয়েছেন, লাওসের বোলাভেন মালভূমিতেই আছড়ে পড়েছিল সেই উল্কা। ৫১ হাজার বছর থেকে ৭ লক্ষ ৯০ হাজার বছরের মধ্যে যে এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোত।