Cancer Vaccine

কোভিডের টিকার ‘পথেই’ ক্যানসার-প্রতিষেধক সন্ধান

ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক বলতে বোঝায় রোগপ্রতিরোধকারী ব্যবস্থা। কোনও রোগ হওয়ার আগেই ওষুধটি প্রয়োগ করে সংক্রমণ ঠেকানো। ক্যানসারের ভ্যাকসিনটি অবশ্য ভিন্ন ধরনের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বেশ কয়েক দশক ধরেই গবেষণা চলছে। অতিমারি-পর্বে একপ্রকার ‘বিশল্যকরণীর’ মতো কাজ করেছিল এমআরএনএ টেকনোলজি। রেকর্ড গতিতে তৈরি হয়েছিল কোভিডের টিকা। সেই একই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এ বারে ক্যানসারের ‘পার্সোনালাইজ়ড ভ্যাকসিন’ বা প্রতিষেধক তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রিটেনে সম্প্রতি হিউম্যান ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ব্রিটেনের ৩০টি হাসপাতালে ‘ক্যানসার ভ্যাকসিন লঞ্চ প্যাড’-এর হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন হাজারেরও বেশি ক্যানসার রোগী।

Advertisement

ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক বলতে বোঝায় রোগপ্রতিরোধকারী ব্যবস্থা। কোনও রোগ হওয়ার আগেই ওষুধটি প্রয়োগ করে সংক্রমণ ঠেকানো। ক্যানসারের ভ্যাকসিনটি অবশ্য ভিন্ন ধরনের। রোগীর ক্যানসার ধরা পড়ার পরে এটি দেওয়া হবে। কাজ সে অন্য প্রতিষেধকের মতোই করবে। শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সজাগ করবে ওই টিকা। শরীরে খুঁজে বার করবে শত্রুকে (অর্থাৎ ক্যানসারকে) এবং তার পর ধ্বংস করবে।

একটি ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা মারফত জানা গিয়েছে, ইংল্যান্ডে প্রথম ক্যানসার প্রতিষেধকটি দেওয়া হয়েছে ইলিয়ট ফিবকে। ৫৫ বছর বয়সি ইলিয়ট কোলোরেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত। আগেই অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপি হয়েছিল তাঁর। পরে প্রতিষেধকটি দেওয়া হয়েছে। ইলিয়ট বলেন, ‘‘আমি দারুণ উত্তেজিত। আমি নিজেও এই ট্রায়াল নিয়ে পড়াশোনা করেছি। প্রতিষেধকটি যদি সফল হয়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।’’

Advertisement

কেমোথেরাপির পরেও ইলিয়টের রক্তে ক্যানসার কোষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, যে কোনও সময়ে মারণ রোগ ফিরে আসতে পারে। এর পরেই ক্যানসারের প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইলিয়ট। ফাইজ়ার-বায়োএনটেক এমআরএনএ টেকনোলজি ব্যবহার করে কোভিড প্রতিষেধক তৈরি করেছিল। সেই বায়োএনটেক-ই এ বারে ‘জেনেনটেক’ নামে আর একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ক্যানসারের পার্সোনালাইজ়ড ভ্যাকসিন তৈরি করছে।

ইলিয়টের ক্ষেত্রে যেমন, তাঁর টিউমারের নমুনা জার্মানিতে বায়োএনটেক-এর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ে ইলিয়টের ক্যানসার কোষে ২০টি মিউটেশন ধরা পড়ে। এর উপর ভিত্তি করে এমআরএনএ-র সিকোয়েন্স তৈরি করা হয়, যা পরে ভ্যাকসিন হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া টিকাকেই ‘পার্সোনালাইজ়ড ভ্যাকসিন’ বলা হয়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ক্যানসারের পার্সোনাইলজ় ভ্যাকসিনটি ‘অপরাধীর সন্ধান চাই’ পোস্টারের মতো কাজ করবে। রোগীর শরীরে লুকিয়ে থাকা ক্যানসার কোষকে খুঁজে বার করবে ও তাদের ধ্বংস করে রোগীকে ক্যানসারমুক্ত করবে।

ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের ‘কুইন এলিজ়াবেথ হসপিটাল’-এ ট্রায়ালের প্রধান বিশেষজ্ঞ ভিক্টোরিয়া কুনেন বলেন, ‘‘এই চিকিৎসা ব্যবস্থার পিছনে যে বিজ্ঞান রয়েছে, তা যথেষ্ট অর্থপূর্ণ। নতুন যুগ শুরু হতে চলেছে। ভবিষ্যতে ক্যানসার রোধে এটিই আদর্শ চিকিৎসা পদ্ধতি হবে।’’ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বসুর মতে, ভবিষ্যতে মেশিং লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এইআই এই পার্সোনালাইজ়ড এমআরএনএ ভ্যাকসিন সিকোয়েন্স তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে বিশেষজ্ঞেরা এ-ও জানাচ্ছেন, আরও গবেষণা প্রয়োজন। ব্রিটেন ছাড়াও আমেরিকা, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন ও সুইডেনেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। ক্যানসারের পার্সোনালাইজ়ড ভ্যাকসিনের ১৫টি ডোজ় পরীক্ষামূলক ভাবে দেওয়া হবে অংশগ্রহণকারী রোগীদের। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ২০২৭ সালের আগে এই গবেষণা সম্পূর্ণ হবে না। তবু এই ট্রায়াল নিয়ে আশাবাদী বিশেষজ্ঞেরা।

তবে সম্প্রতি একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ গবেষণা হিউম্যান ট্রায়ালে এসে ব্যর্থ হয়। ফলে আশঙ্কা থাকছেই। আর সেই সঙ্গে থাকছে বেশ কিছু প্রশ্ন। যেমন ক্যানসার-বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বলছেন, ‘‘এই ধরনের ভ্যাকসিন কি ক্যানসারের যে কোনও পর্যায়ে অ্যান্টি-ক্যানসার টি-সেল তৈরি করতে পারবে? সব ধরনের ক্যানসারেই কি কাজ দেবে প্রতিষেধকটি?’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘রোগী কি সত্যিই চিরকালের মতো সুস্থ হয়ে যাবেন? ক্যানসার যে ফিরে আসবে না, তার নিশ্চয়তা কতটা? নাকি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রতিষেধক নিয়ে যেতে হবে।’’ এই একগুচ্ছ প্রশ্নের পাশাপাশি চিকিৎসা-পদ্ধতি কতটা খরচসাপেক্ষ হবে, সেই নিয়েও চর্চার অবকাশ থাকছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement