অপরচুনিটি
বয়সের ভার তো ছিলই। শেষ ঝক্কিটা আর সামলাতে পারেনি সে। চুপ করে গিয়েছিল বেশ কয়েক মাস। তবু বারবার তার সঙ্গে ‘কথা’ বলার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। শ’খানেক মেসেজ জমে রয়েছে তার ইনবক্সে। কিন্তু জুন মাসের পর থেকে একটা মেসেজেরও জবাব দেয়নি সে। বুধবার মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ঘোষণা করল দুঃসংবাদটা— ‘অপরচুনিটি’ রোভারের মৃত্যু হয়েছে।
২০০৩ সালের ৭ জুলাই লালগ্রহের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ‘অপরচুনিটি’। পরের বছর ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলের ‘মেরিডিয়ানি প্লেনাম’-এ নামে সে। তার পর থেকে নাসাকে একের পর এক তথ্য পাঠিয়ে গিয়েছে ‘অপরচুনিটি’। সেই সঙ্গে নৈসর্গিক সব ছবি। নাসার মাটি, পাথর নিয়ে একাধিক কঠিন পরীক্ষা চালিয়েছে। মাটির গভীরে জলের অস্তিত্ব খুঁজেছে।
‘অপরচুনিটি’ই নিশ্চিত করে জানিয়েছিল, এক সময়ে জলের ধারা বইত লাল-মাটির উপর দিয়ে। কখনও সে অনুসন্ধান চালিয়েছে ভিক্টোরিয়া ক্রেটারে, তো কখনও এনডেভার ক্রেটারে। বিপদেও পড়তে হয়েছে একাধিক বার। ২০১১ সালে এক ভয়ানক ধুলো-ঝড়ের মুখে পড়তে হয়েছিল মঙ্গলযানটিকে। সে বার সামলে উঠলেও গত বছর ফাঁড়াটা বোধহয় আর কাটাতে পারেনি সে। জুন মাসে ধুলোঝড়ের কথা শেষ জানিয়েছিল। তার পর থেকে আর খোঁজ নেই। গত আট মাসে হাল ছাড়েনি নাসা। মঙ্গলবার শেষ মেসেজ করেছিল তারা। পরের দিন নাসার ‘সায়েন্স মিশন ডিরক্টরেট’-এর অন্যতম শীর্ষকর্তা টমাস জ়ারবুচেন প্যাসাডেনার সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেন— ‘‘অপরচুনিটি-র অভিযান শেষ হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: গত ২০ বছরে আরও সবুজ হয়েছে বিশ্ব, নেতৃত্বে ভারত-চিন, বলছে নাসা
‘অপরচুনিটি’র বৈজ্ঞানিক নাম ‘মার্স এক্সপ্লোরেশন রোভার’। তবে বিজ্ঞানীরা তাকে আদর করে ‘অপি’ বলে ডাকতেন। ১৪ বছরের সফর শেষ হওয়ায় মন ভাল নেই তাঁদের। ‘মার্সিয়ান রিসার্চ অ্যাট অ্যারিজ়োনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর ট্যানিয়া হ্যারিসন টুইট করেন, ‘‘সন্ধেটা জেট প্রোপালসন ল্যাবে কাটালাম। শেষ কম্যান্ড পাঠানো হল ‘অপরচুনিটি’কে।’’ আরও লিখেছেন, ‘‘সবাই চুপ করেছিল। সবার চোখে জল। একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। এতগুলো বছরে কত স্মৃতি। #থ্যাঙ্কইউঅপি#গুডনাইটঅপি।’’
শুধু কোনও একটা প্রজন্ম তো নয়, ‘অপরচুনিটি’কে তৈরি করা কিংবা তার চোদ্দো বছরের সফরে যুক্ত রয়েছে একাধিক প্রজন্ম। ‘অপরচুনিটি’কে শেষ মেসেজ পাঠানোর ‘সুযোগ’ পেয়েছিলেন বিজ্ঞানী কেরি বিন। পরে তিনি টুইট করেন, ‘‘নতুন যাত্রার শুভেচ্ছা রইলো অপরচুনিটি।’’ বিশেষজ্ঞ এমিলি লাকডাওলা বলেন, ‘‘গ্রহের মাটিতে ঘুরে বেড়ায় রোভার। অনেকটা মানুষের মতোই কাজ করে সে। বলা যেতে পারে, মানব সমাজেরই ‘অবতার’ সে।’’
মঙ্গলের মাটিতে এখন শুধু রয়ে গেল ‘মিস কৌতূহল’। ২০১২ সালে লালগ্রহে পৌঁছয় নাসার আর এক যান ‘কিউরিয়োসিটি’। তবু ‘অপরচুনিটি’র স্মৃতিতে বিভোর বিজ্ঞানীকূল। মঙ্গলযানের প্রাক্তন ফ্লাইট ডিরেক্টর মাইক সেবার্ট যেমন টুইট করেছেন, ‘‘মঙ্গলের রানির জয় হোক!’’