এমনই দেখতে মেমো অ্যাপটি।
অফিসে কারণে অকারণে তুচ্ছ ব্যাপারে সবার সামনে অপমান করেন আপনার ‘বস’? পান থেকে চুন খসলেই আপনার উপর তিনি চালান তাঁর ‘বসগিরি’? আপনি নীরব থেকে হজম করেন অপমান, আর ভিতরে ভিতরে গুমরে মরেন? তবে আপনার জন্য সুখবর। এ বার থেকে পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে বসের বিরুদ্ধে আপনি আপনার ক্ষোভ উগরে দিতে পারবেন। সৌজন্যে নতুন অ্যাপ ‘মেমো’। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অ্যাপটি। ইতিমধ্যেই ওরাকেল, সিসকো, এইচপি, ইবে, ডেল্টা এয়ার লাইন্সের মতো মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার বহু কর্মীই এই অ্যাপটির সাহায্যে নিজেদের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে বহু তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিনিয়ত তাঁরা তাঁদের কাজের পরিবেশ, সংস্থার পলিসি এবং বসেদের কাজের তথ্য আপের মাধ্যমে পোস্ট করছেন।
অ্যাপটি তৈরি করেছেন রায়ান জ্যানসেন। তাঁর মতে, প্রতিটি সংস্থার পলিসি এবং কাজের ধরন সম্পর্কে সেই সংস্থার কর্মীরা কী ভাবছেন তা জানাতেই এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে।
কী ভাবে কাজ করবে অ্যাপটি?
রায়ান জানিয়েছেন, অ্যাপটির সাহায্যে কর্মীরা তাঁদের নিজস্ব মতামত জানাতে পারবেন। আর তা পারবেন পাবলিক মেসেজ বোর্ড এবং প্রাইভেট বোর্ড— দু’ভাবেই। কোথায় নিজের ক্ষোভ জানানো হবে তা একান্ত ভাবেই নির্ভর করবে ব্যবহারকারীর উপরে। প্রাইভেট বোর্ডে শুধুমাত্র কোনও নির্দিষ্ট সংস্থার কর্মীরাই মতামত দেখতে পারবেন। চাইলে কোনও ব্যবহারকারী নিজের মতামত পাবলিকও করে দিতে পারবেন। তখন তাঁর মতামত যে কোনও অ্যাপ ব্যবহারকারীই দেখতে
পারবেন। মতামত দেখে কমেন্ট করা অথবা কোনও লিঙ্কও পেস্ট করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। রায়ানের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্কডইন অথবা কর্পোরেট ইমেলের সাহায্যে অ্যাপ ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাই করা হবে এবং যাচাই পদ্ধতি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবহারকারীর সম্পর্কে সমস্ত তথ্য মুছে দেওয়া হবে। শীঘ্রই ছবি আপ করার সুবিধাও এই অ্যাপের সঙ্গে যোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন রায়ান।
তাঁর আরও দাবি, অ্যাপটির সাহায্যে নিয়োগ কর্তা এবং কর্মচারী দু’পক্ষই লাভবান হবে। রায়ানের মতে, এটি এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে এক জন কর্মী অকপটে তাঁর সমস্যার কথা জানাতে পারবেন এবং তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও সমস্যার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হবেন। তাঁর আশা, এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ভাবে গড়ে উঠবে। সংস্থার উন্নতির জন্য যা একান্তই জরুরি।
দিনের আলো দেখবার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপটি জনপ্রিয় হলেও, এর বিপরীত মতও আছে। সমালোচকদের মতে—
প্রথমত, কোনও ব্যক্তি অসত্ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচয় গোপন রেখে মেমো অ্যাপটির সাহায্যে তাঁর বসকে অপমান করতে পারেন। দিনে দিনে অ্যাপটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে কে আসলে এমন ‘অপকর্ম’ করেছে তার পরিচয় জানা মুশকিল হবে।
দ্বিতীয়ত, যাচাই পদ্ধতি শেষ হওয়ার পরেই মেমো মুছে দেবে ব্যবহারকারীর সম্পর্কে সমস্ত তথ্য। তাই আইনঘটিত কোনও সমস্যা দেখা দিলে কেমন ভাবে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
তৃতীয়ত, যদি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা, তবে কেমন ভাবে তার মোকাবিলা করা হবে?
এ ব্যাপারে রায়ানের বক্তব্য, “আমরা মনে করি এমন কোনও সিস্টেম গড়ে ওঠেনি যা হ্যাকারদের পক্ষে হাতানো সম্ভব নয়। তাই কোনও ব্যবহারকারীর সম্বন্ধে ব্যক্তিগত তথ্য আমরা আমাদের তথ্যভাণ্ডারে জমিয়ে রাখছি না। যাচাই পদ্ধতি শেষ হওয়ার পরেই ব্যবহারকারীর সমস্ত তথ্য মেমো মুছে দেবে।”
ইতিমধ্যেই কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থা তাঁদের কর্মচারীদের অ্যাপটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে বলে অভিযোগ রায়ানের।
তাই বাজারে আসতে না আসতেই এক দিকে যেমন ক্ষোভ ওগরানোর মাধ্যম হিসেবে অনেকের কাছে অ্যাপটি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে, তেমনই তাকে ঘিরে সংশয়ও সৃষ্টি হয়েছে নেটিজেনদের মনে।
আশা-আশঙ্কার দোলাচলের মাঝেই বাজারে হাজির পেশাগত ক্ষোভ ওগরানোর নতুন অ্যাপ ‘মেমো’।