২৪ মিনিট! মহাশূন্যে ছুটে চলা ভারতের মঙ্গলযানকে লাল গ্রহের কক্ষপথে বসাতে প্রয়োজন ওইটুকু সময়ই।
দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুধবার সকালে মঙ্গল অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ে ওই ২৪ মিনিট ঠিক মতো কাটলে মঙ্গল অভিযানের ইতিহাসে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছবে ভারত। কারণ আগে আমেরিকা, রাশিয়া বা ইওরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা প্রথম চেষ্টায় মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছতে পারেনি। “সে দিক থেকে ইসরো সফল হলে সবাইকে টক্কর দেবে” বলছেন পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন। ইসরো সূত্রে খবর, ভারতের মহাকাশ গবেষণায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপের সাক্ষী থাকতে মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অভিযানের চূড়ান্ত মুহূর্তে তাঁর পাশে হাজির থাকবেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে রাধাকৃষ্ণন। থাকবেন প্রাক্তন দুই চেয়ারম্যান কে কস্তুরীরঙ্গন, ইউ আর রাও’ও।
গত বছর ৫ নভেম্বর শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পিএসএলভি রকেটে চেপে লাল গ্রহের দিকে ছুটেছিল মঙ্গলযান। দশ মাস পর বুধবার সকালে মঙ্গলের অভিকর্ষের বলয়ে ঢুকবে সেটি। পৃথিবীর পড়শি গ্রহের প্রবল টান রুখে মঙ্গলযানকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে বসিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সামলাবে মহাকাশযানের ‘লিক্যুইড অ্যাপোজি মোটর’ (ল্যাম) ইঞ্জিন। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দশ মাস ঘুমিয়েছিল ল্যাম। ইসরোর বিজ্ঞান সচিব ভি কোটেশ্বর রাও জানান, বুধবার সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে চালু হবে ল্যাম। চলবে ২৪ মিনিট। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চললে ওই সময়ের মধ্যেই মঙ্গলের কক্ষপথে নির্বিঘ্নে বসে যাবে ভারতের ‘দূত’। তারপর থেকে ওই বাঁধা পথে ঘুর্ণিপাক দেবে।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভারতের মঙ্গলযান নির্দিষ্ট কক্ষপথের কাছাকাছি পৌঁছনোর পর সেটিকে নিজের দিকে টানবে মঙ্গল। মারাত্মক সেই অভিকর্ষ বলের প্রভাব কাটাতে ৪৪০ নিউটন শক্তিতে যানটিকে উল্টো দিকে ঠেলবে ল্যাম। এখন মঙ্গলের দিকে মুখ রেখে ছুটছে মহাকাশযান। ল্যাম রয়েছে পৃথিবীর দিকে। ইঞ্জিন চালুর ২২ মিনিট আগে মঙ্গলযানের মুখ ঘুরিয়ে দেবে ইসরোর মিশন কন্ট্রোল-রুম। তখন ল্যাম থাকবে মঙ্গলের দিকে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এক মুখপাত্র বলছেন, “ইঞ্জিন চালু হওয়ার পরই লাল গ্রহের টান কাটিয়ে ছিটকে বেরোতে চাইবে মঙ্গলযান। পাল্টা বলে সেটিকে নিজের দিকে টানবে মঙ্গল। ওই টানাটানিতেই কক্ষপথে বসবে মঙ্গলযান।”
টানাটানির পুরো ঘটনাটাই চলবে বিজ্ঞানীদের নজরের আড়ালে। কারণ, ওই সময় মহাকাশযান এবং পৃথিবীর মাঝখানে থাকবে মঙ্গল। ইসরোর সঙ্গে তখন সরাসরি সংযোগ থাকবে না মঙ্গলযানের। কক্ষপথে বসে যাওয়ার কাজ সে সারবে একাই। পৃথিবী ছাড়ার আগেই মঙ্গলযানের ‘মগজে’ সে কাজের নীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে মঙ্গলে নাসার যান ‘রোভার কিউরিওসিটি’ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতেই অবতরণ করেছিল।
ইসরো কর্তারা বলছেন, শেষ পর্যায়ের প্রতিটি সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলযানের পাঠানো বার্তা পৃথিবীতে আসতে ১২ মিনিট সময় লাগবে। অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য তাই নতুন এক অ্যান্টেনা গড়েছে ইসরো। বুধবার ভোর ৪টে ১৭ মিনিট থেকে মঙ্গলযানের উপর নজর রাখবে ওই অ্যান্টেনা। সকাল ৭টা ১২ মিনিটে মঙ্গলের আড়ালে ঢুকবে মহাকাশযান। ৭টা ৪৭ মিনিটে সেটি ফের জুড়বে বেঙ্গালুরুর মিশন কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে। ৮টা ১৫ মিনিটে অভিযানের ফল ঘোষণা করা হতে পারে।
ইসরোর সদর দফতর ‘অন্তরীক্ষ ভবনে’ এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। অপেক্ষায় গোটা দেশও! উত্তর লুকিয়ে ওই ২৪ মিনিটেই!