গ্রহাণু ‘ফায়েথন ৩২০০’। ছবি: সংগৃহীত।
ভয়ঙ্কর একটা গ্রহাণু (অ্যাস্টারয়েড) ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। অসম্ভব দ্রুত গতিতে। গ্রহাণুটির নাম ‘ফায়েথন ৩২০০’। এটি লম্বায় ৪ কিলোমিটারেরও বেশি। সাম্প্রতিক অতীতে এত বড় চেহারার গ্রহাণু পৃথিবীর এত কাছে আসেনি কখনও।
এই মুহূর্তে গ্রহাণুটি রয়েছে পৃথিবী থেকে প্রায় এক কোটি কিলোমিটার দূরে (অর্থাত্ সূর্য থেকে পৃথিবী যতটা দূরে রয়েছে, গ্রহাণুটি তার প্রায় ১৬ ভাগের ১ ভাগ দূরত্বে রয়েছে)।
কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স-এর অধিকর্তা জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বুধবার এ খবর দিয়ে বলেছেন, “এমন চেহারার গ্রহাণুই কোটি কোটি বছর আগে ডাইনোসরদের ধ্বংস করে দিয়েছিল।” এই গ্রহাণুটি নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা-সহ বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। তাঁদের চিন্তার কারণ, যে কক্ষপথ ধরে গ্রহাণুটির আসার কথা ছিল ইতিমধ্যেই তার থেকে অনেকটা সরে এসে পৃথিবীর কয়েক হাজার কিলোমিটার বেশি কাছাকাছি এসে পড়েছে। সন্দীপবাবু জানান, ১৬ ডিসেম্বর এই গ্রহাণুটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এসে পড়বে। যে ভাবে ইতিমধ্যেই প্রত্যাশিত কক্ষপথ থেকে অনেকটা সরে এসেছে গ্রহাণুটি, তাতে আগামী তিন দিনে তা পৃথিবীর পক্ষে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে এই উদ্বেগের মধ্যেও কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের মানুষের কাছে রয়েছে একটা সুখবরও। ওই গ্রহাণুটি হুড়মুড়িয়ে পৃথিবীর কাছে এসে পড়ায় কলকাতা, মেদিনীপুর-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে বুধবার রাতে উল্কাবৃষ্টি (মেটিওর শাওয়ার) দেখা যাবে খালি চোখেই। বুধবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাবে এই উজ্জ্বল আলোর ঝর্না। এই ঝর্না আগামী তিন দিন ধরে দেখা গেলেও আজ রাতেই তা হবে সবচেয়ে উজ্জ্বল।
আরও পড়ুন: এই শীতে পরপর তিন পূর্ণিমা জুড়ে ‘সুপারমুন’
স্পেস স্টেশনের বাইরে মিলল ব্যাকটিরিয়া, দাবি ভিনগ্রহী বলে
গ্রহাণু ধেয়ে এলে উল্কাবৃষ্টি হয় কেন?
সন্দীপবাবু জানিয়েছেন, কক্ষপথে সূর্যের কাছে এসে গেলে তার তাপে গ্রহাণুর পিঠ অসম্ভব তেতে ওঠে। আবার সূর্যের থেকে দূরে চলে এলে সেই পিঠ ঠান্ডা হয়ে ফেটে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে। টুকরো হয়ে যাওয়া গ্রহাণুর পিঠের অংশগুলি পৃথিবীর টানে আমাদের বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণ হলেই এই আলোর ফুলঝুড়ির সৃষ্টি হয়। এটাকেই বলা হয় উল্কাবৃষ্টি।
• ফায়েথন ৩২০০-এর বিশেষত্ব:
এই গ্রহাণুটির একটি বিশেষত্ব রয়েছে। বহু কোটি বছর আগে এই গ্রহাণুটি ছিল একটি ধূমকেতু। কিন্তু সূর্যকে পাক মারতে মারতে সূর্যের তাপে সেই ধূমকেতুর বরফের লেজটা পুরোপুরি উবে গিয়েছে। পড়ে রয়েছে তার পাথুড়ে দেহটা। সেটাই হয়ে উঠেছে একটু গ্রহাণু।
৭৫ বছর পর আবার পৃথিবীর এত কাছাকাছি আসবে গ্রহাণুটি। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, যে ভাবে প্রত্যাশিত কক্ষপথ থেকে অনেকটা সরে গিয়ে পৃথিবীর অনেক বেশি কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে গ্রহাণুটি, তাতে এ বার না হলেও ৭৫ বছর পর তা পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে পারে।