ইসরো প্রধান এস সোমনাথ। —ফাইল চিত্র।
পূর্বতনের সমালোচনা করে বই লিখেছেন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ। বিতর্কের মাঝে তিনি নিজেই তাঁর সেই আত্মজীবনী প্রকাশ বাতিল করে দিলেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ইসরো প্রধান তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শনিবার সে কথা জানিয়েছেন তিনি।
সোমনাথের আত্মজীবনীর নাম ‘নীলাভু কুদিচা সিম্হাঙ্গল’। অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘যে সিংহেরা জ্যোৎস্না পান করেছিল’। অভিযোগ, এই বইতে পূর্বতন ইসরো প্রধান কে সিভানের কিছু নীতির সমালোচনা করেছেন সোমনাথ। চন্দ্রযান-২ অভিযানের ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়েই ওই প্রসঙ্গ উঠেছে।
সোমনাথ স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁর বইতে ইসরোর চন্দ্রযান-২ অভিযান সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। ওই অভিযান কেন ব্যর্থ হল, সে বিষয়ে স্পষ্ট আলোচনার অভাব ছিল, এ কথাও আত্মজীবনীতে লিখেছেন সোমনাথ। পূর্বতনের সমালোচনা করায় তাঁর বই নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। ফলে বইটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
শনিবার এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সোমনাথ জানিয়েছেন, কোনও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে পৌঁছনোর রাস্তায় সকলকেই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এই চ্যালেঞ্জ প্রত্যেকের জীবনের অঙ্গ। কোনও এক জন ব্যক্তিকে আলাদা করে আক্রমণ করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম মাত্র।’’
এর আগে পিটিআইকেই সোমনাথ জানিয়েছিলেন, তাঁর বইটি অনুপ্রেরণামূলক। সমালোচনামূলক নয়। বলেছিলেন, ‘‘আমার জীবনের কাহিনি বর্ণনা করা এই বইয়ের উদ্দেশ্য নয়। যাঁরা জীবনের চ্যালেঞ্জগুলিকে অতিক্রম করে স্বপ্ন ছুঁতে চান, তাঁদের অনুপ্রাণিত করাই এই বইয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য।’’ সোমনাথের এই বক্তব্যের পর তাঁর আত্মজীবনী নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল অনেকের মধ্যে। কিন্তু বইটি প্রকাশিত হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরোয় সোমনাথের সাফল্য নজর কেড়েছে গোটা দেশের। তৃতীয় বারের চেষ্টায় তাঁর নেতৃত্বেই চাঁদে মহাকাশযান পাঠাতে পেরেছে ভারত। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম নেমেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে। ১০ দিনের বেশি সময় ধরে সেখানে সক্রিয় ছিল বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটিকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে তারা। তথ্য, ছবি পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। পরে চাঁদে রাত নামলে সেখানেই চিরকালের মতো ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিক্রম এবং প্রজ্ঞানকে। সাম্প্রতিক সময়ে একে ইসরোর সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এর আগে কোনও দেশই যেতে পারেনি। প্রায়ই একই সময়ে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়ার প্রচেষ্টাও। এর আগে ২০১৯ সালে চাঁদে চন্দ্রযান-২ পাঠানোর চেষ্টা করেছিল ভারত। কিন্তু ইসরোর চেষ্টা সে সময়ে ব্যর্থ হয়। কাছাকাছি গিয়ে ভেঙে পড়ে চন্দ্রযান-২।