ইসরো প্রধান এস সোমানাথ। ছবি: পিটিআই।
ব্যাপারটা হবে অনেকটা কলকাতা থেকে দুবাই যাওয়ার পথে দিল্লি কিংবা মুম্বই বিমানবন্দরে কিছু ক্ষণের বিশ্রামের মতো। পরবর্তী উড়ানের জন্য অপেক্ষার সময়টুকু কাটিয়ে নেওয়া। আবার লম্বা সফরের ক্লান্তি থেকেও কিছু ক্ষণের স্বস্তি। দূরের মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার জন্য চাঁদকে তেমনই একটি ‘হল্ট স্টেশন’ বা বিশ্রামক্ষেত্র বানানোর চেষ্টায় রয়েছেন দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা। বুধবার ইসরো জানাল, চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি স্পর্শ করায় ভারত এই লক্ষ্যপূরণে এক ধাপ এগোল। মহাকাশ গবেষণার জন্য চাঁদকে মহাকাশচারীদের ‘বিশ্রামক্ষেত্র’ বানানোর কাজে প্রথম ধাপ পেরোলে ভারতের চন্দ্রযান-৩।
বুধবার সন্ধ্যায় ইসরোর চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে। ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে চাঁদের মাটিতে হাঁটা চলা শুরু করেছে অভিযাত্রী যান প্রজ্ঞান। ইসরোর প্রধান এস সোমানাথ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সাক্ষাৎকারে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, কেন চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণের জন্য তার দক্ষিণ মেরুকেই বেছে নিল।
সোমানাথ বলেন, ‘‘আমরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুর থেকে ৭০ ডিগ্রি দূরে অবতরণ করেছি। মানছি, দক্ষিণ মেরুতে আলো-আঁধারি পরিবেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে নামার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হল, চাঁদের এই এলাকায় মহাকাশ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’’
জলের খোঁজ তো বটেই, তার সঙ্গে চাঁদের এই এলাকায় ভূকম্পনের মাত্রা, মাটিতে থাকা রাসায়নিক, এমনকি, খনিজ পদার্থের সন্ধানও চালাবে ইসরো। সোমানাথ বলেছেন, ‘‘যে সমস্ত বিজ্ঞানী চাঁদ নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁরা চাঁদের এই এলাকা নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তার কারণ, শেষ পর্যন্ত মানুষ চাঁদে যেতে চায়। সেখানে থাকার মহল্লাও বানাতে চায়। যাতে সেখান থেকে তারা দূরের মহাকাশে পাড়ি জমাতে পারে। তাই আমরা বলতে পারি, আমরা সেই কাজের জন্য সেরা এলাকাটি খুঁজে বার করার চেষ্টায় রয়েছি। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তেমন জায়গা খুঁজে পাওয়ার অপার সম্ভাবনা আছে।’’
চাঁদে আগামী দিনে মানুষের বাসযোগ্য মহল্লা বানানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। সৌরজগতের অন্য গ্রহ যেমন মঙ্গল, শুক্র, বৃহস্পতিতে পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। বিজ্ঞানীরা তাই চাঁদকে একটি বড় মহাকাশ স্টেশন হিসাবে ব্যবহার করার কথাও ভেবেছেন। তবে সেই সব ভাবনা বাস্তবায়িত করার জন্য যে তথ্য দরকার, তা এখনও বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। চন্দ্রযান-৩ থেকে পাওয়া তথ্য সেই কাজে সাহায্য করতে পারে বলে অভিমত ইসরো প্রধানের। সে ক্ষেত্রে চাঁদে মহল্লা বানানোর পথে ভারতের এই চন্দ্রাভিযানকে প্রথম ধাপ বলাই যায়।