দিনের আলোর পর চাঁদে নামবে ১৪ দিনের অতিশীতল রাত। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
চাঁদের মাটিতে ১৪ দিনের কাজ হাতে নিয়ে নেমেছে চন্দ্রযান-৩। এই ১৪ দিনের কাজ শেষ হলে কী হবে? জিনিসপত্র গুছিয়ে কি আবার ঘরে ফিরবে চন্দ্রযান-৩। ইসরো জানিয়েছে, তেমনটি হওয়ার নয়। কাজ শেষেও ‘বাড়ি’ ফেরা হবে না ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ বা অভিযাত্রী যান ‘প্রজ্ঞান’-এর। চিরতরে চাঁদের মাটিতেই থেকে যাবে তারা। এমনকি, ১৪ দিনের কাজ শেষ হলে ‘কর্মক্ষেত্রে’ মৃত্যুও হতে পারে তাদের। কিন্তু সত্যিই কি চাঁদের বুকে চন্দ্রযান-৩-এর বেঁচে থাকার কোনও সম্ভাবনাই নেই? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
চাঁদে ১৪ দিনের জীবনকাল দিয়েই ইসরো পাঠিয়েছে বিক্রম এবং প্রজ্ঞানকে। বিক্রম এবং প্রজ্ঞানের যে সমস্ত যন্ত্রপাতি রয়েছে, যেগুলির সাহায্যে চাঁদের মাটিতে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে কিংবা সংগ্রহ করবে তথ্য, সেই সব যন্ত্র চলবে সৌরশক্তিতে। ফলে চাঁদে যত ক্ষণ সূর্য থাকবে তত ক্ষণই প্রাণ থাকবে তাদের। ১৪ দিন পর চাঁদে সূর্যাস্ত (চাঁদে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত হতে সময় লাগে পৃথিবীর হিসাবে ১৪ দিন) হলে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়বে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। নিস্তেজ হয়ে পড়বে তাদের ভিতরে থাকা সমস্ত যন্ত্রপাতিও। তবে কি ১৪ দিনের জীবনকাল শেষে সত্যিই ‘মৃত্যু’ অবধারিক চন্দ্রযান-৩-এর? ইসরোর বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দেননি। তবে চাঁদের মাটিতে বিক্রম আর প্রজ্ঞানে নতুন করে প্রাণপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা একেবারে নেই বলে উড়িয়েও দেননি।
বিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারির মতে, ‘‘ইসরো বিষয়টিকে একেবারে নাকচ করে দেয়নি ঠিকই। তবে বিক্রম এবং প্রজ্ঞানের বেঁচে থাকা নির্ভর করছে অনেকগুলো ‘যদি’ এবং ‘তবে’র উপর।’’ বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ১৪ দিনের ‘সকাল’ কাটানোর পর নামবে ১৪ দিনের অতিশীতল রাতও। এই ১৪ দিন সূর্যরশ্মির একটি কণাও প্রবেশ করবে না চাঁদের ‘কুমেরু’তে। তপমাত্রা নেমে যেতে পারে মাইনাস ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। তাতে চন্দ্রযান-৩-এর যন্ত্রপাতির বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কিন্তু তার পর তো আবার চাঁদে সূর্য উঠবে? বিক্রম বা প্রজ্ঞানের সৌরশক্তি সংগ্রহ করার যন্ত্রও থাকবে। সে ক্ষেত্রে সৌরশক্তি আবার সজীব করতে পারবে না চন্দ্রযান-৩-কে? দুয়ারির দাবি, ‘‘সেই সম্ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী না হওয়াই বোধ হয় ভাল। কারণ, ওই প্রচণ্ড শীতল পরিবেশে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিক্রম এবং প্রজ্ঞানের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাদের তৈরি করা হয়েছে ১৪ দিনের জীবনকালের কথা মাথায় রেখে। তার পরও যদি সেই সব যন্ত্র কোনও মতে বিকল না হয় এবং সৌরশক্তিতে আবার চালু হওয়ার ক্ষমতা তাদের থাকে, তবে তাদের প্রাণ ফিরলেও ফিরতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এতটাই কম যে, সেটা নিয়ে কোনও আশা না রাখাই বোধ হয় ভাল।’’