আর মাত্র চার বছর। ঠিকঠাক ভাবে গুনলে চল্লিশ মাস। স্বাধীনতার ঠিক পঁচাত্তর বছরের মাথায় ভারতীয় মহাকাশযানে চেপে এ দেশের নভশ্চরদের মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার যাবতীয় পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। রাশিয়া, আমেরিকা ও চিনের পরেই চতুর্থ দেশ হিসেবে মহাকাশে গবেষণার উদ্দেশ্যে মহাকাশচারী পাঠাতে চলেছে ভারত।
গত ১৫ অগস্ট ‘গগনায়ন-২০২২’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ সেই অভিযানের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভন। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক চার বছর বাদে শ্রীহরিকোটার উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশযানটি ছাড়া হবে। তাতে থাকবেন তিন জন মহাকাশচারী। উৎক্ষেপণের ১৬ মিনিটের মাথায় মহাকাশযানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে পৃথিবীকে পাক খাওয়া শুরু করবে। সে জন্য ব্যবহার করা হবে ভারতের নিজস্ব জিএসএলভি এম কে-থ্রি রকেট।’’ ইসরো জানিয়েছে, পৃথিবীকে ঘিরে মহাকাশযানের যে ‘অরবাইটাল মডিউলটি’ পাক খাবে তাতে দু’টি অংশ থাকবে। একটিতে মহাকাশচারীরা থাকবেন। সেটির নাম ‘ক্রু মডিউল’। যা যুক্ত থাকবে ‘সার্ভিস মডিউল’-এর সঙ্গে। ৫-৭ দিন মহাকাশচারীরা মহাকাশে থাকবেন।
ইসরোর মতে, মহাকাশযান ফিরিয়ে আনার পদ্ধতিটি সবচেয়ে কঠিন। নাসার অভিযাত্রী কল্পনা চাওলার ‘কলম্বিয়া’ মহাকাশযানটি পৃথিবীতে ফেরার পথে ‘হিট শিল্ড’-এ সমস্যা হওয়ায় বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে আসতেই সেটি জ্বলে যায়। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফেরার জন্য ইঞ্জিন চালু হওয়ার পরেই মহাকাশচারীদের (ক্রু) মডিউলটি ১২০ কিলোমিটার উচ্চতায় সার্ভিস মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এর পর মাধ্যাকর্ষণের টানে ক্রু মডিউলটি সোজা ভূপৃষ্ঠের দিকে নেমে আসবে। যানটির গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হবে স্বয়ংক্রিয় ব্রেক। সিভন বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে মহাকাশচারীরা নামবেন গুজরাতের কাছে আরব সাগরে। মহাকাশযানটি জল ছোঁয়ার আগে সেটিকে গতিশূন্য করতে ব্যবহার করা হবে প্যারাশুট।’’ সমান্তরাল ভাবে বঙ্গোপসাগরেও অবতরণের অঙ্ক কষে রেখেছে ইসরো।
আরও পড়ুন: চন্দ্রযানের বড় সাফল্য, চাঁদের পিঠে বরফের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
‘গগনায়ন’ প্রকল্পটিকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করেছে ইসরো। খরচ ধরা হয়েছে মোট ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রথম দু’টি পর্বে একই ধাঁচের মহাকাশযান পাঠিয়ে সেটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে দু’টি ক্ষেত্রেই কোনও মহাকাশযানে মানুষ থাকবেন না। ৪০ মাসের মাথায় তৃতীয় মহাকাশযানে তিন জন নভশ্চরকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসরো জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই স্পেস স্যুট প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। এ দেশের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মার সাহায্য নেওয়ার বিষয়েও ভেবেছে ইসরো।