দেশে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ইনসেটে- পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের সচিব শেখর বসু)।- ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: পরমাণু শক্তি বলতে অনেকেই ভাবেন অ্যাটম বোমা। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, ভয়াবহ বিকিরণ। মৃত্যুর মিছিল। কয়েকশো কিলোমিটার জুড়ে শ্মশান। প্রজন্মের পর প্রজন্মের পঙ্গুত্ব। এই ধারণাটা যে শুধুই সাধারণ মানুষের, তা কিন্তু নয়। এ দেশে যে বিজ্ঞানকর্মীরা, যে বিজ্ঞানমনস্ক সংগঠনগুলি দীর্ঘ দিন ধরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠার বিরোধিতা করে আসছেন, করে চলেছেন, তাঁদেরও সেই ধারণা। ফলে, নতুন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব এলেই প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আসে কিছু বিজ্ঞানমনস্ক সংগঠনের কাছ থেকেও। আপনি কী মনে করেন?
শেখর বসু: দোষটা মানুষের নয়। ১৪০০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং থেকে সৃষ্টি হয়েছিল এই ব্রহ্মাণ্ডের। সেই বিগ ব্যাং তো ছিল পারমাণবিক বিস্ফোরণই। সেই পারমাণবিক বিস্ফোরণ না ঘটলে তো ব্রহ্মাণ্ডটাই তৈরি হত না। আমরাও থাকতাম না। কিন্তু সেটা আমরা কেউই দেখিনি। তার পর আরও দু’-দু’টো বিগ ব্যাং হয়েছে। যেগুলি আমরা দেখেছি। গত শতাব্দীতে। অ্যাটম বোমা পড়েছিল হিরোশিমায়, নাগাসাকিতে। ফলে, ভয়াবহ ধ্বংসের মাধ্যমেই আমরা প্রথম দেখেছি পারমাণবিক বিস্ফোরণ। পরমাণু শক্তিটা আসলে কী জিনিস, তা চাক্ষুষ করতে পেরেছি। তাই পরমাণু শক্তি না থাকলে যে এই ব্রহ্মাণ্ডের কোনও কিছুরই জন্ম হত না, সেটা বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয়েছ।
কর্নাটকের কাইগায় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র
প্রশ্ন: তাই বলে পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিপদটাকে তো আর অস্বীকার করা যায় না। পুরোপুরি খারিজও করা যায় না। তাই পরমাণু শক্তি সম্পর্কে মানুষের ভয়, ভীতি থাকাটা কি খুব অস্বাভাবিক? অমূলক? অসঙ্গত?
শেখর বসু: অবশ্যই অসঙ্গত। অমূলক। জানার ভুল, বোঝার ভুল। দোষটা আমজনতার নয়। আমাদের আগের প্রজন্ম মানুষকে সেটা বোঝাতে পারেননি। ভুলটা তাঁদের।
প্রশ্ন: তা হলে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা পরমাণু চুল্লির বিকিরণ (পারমাণবিক বিকিরণ), তেজস্ক্রিয়তা (রেডিওঅ্যাক্টিভিটি) নিয়ে মানুষের এতটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলছেন? চেরনোবিলের পরেও?
শেখর বসু: না, চিন্তার কোনও কারণ নেই। বিজ্ঞান বলছে, পারমাণবিক বিকিরণের (নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন) ঝাপটা আমাদের সবচেয়ে বেশি সইতে হয় বায়ুমণ্ডল থেকে। বাতাসে মিশে থাকা র্যাডন কণা থেকে। এই যে আপনার সঙ্গে বসে কথা বলছি, দেওয়াল থেকে অনেক বেশি পরিমাণে পারমাণবিক বিকিরণ আছড়ে পড়ছে আমাদের গায়ে। যা খাচ্ছি, সেই সব খাবার থেকে প্রতি মুহূর্তে বেরোচ্ছে পারমাণবিক বিকিরণ। আমাদের শরীরে ঢুকছে হুড়মুড়িয়ে। ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি, তাঁর ইকুইপমেন্ট থেকে রেডিয়েশন পাচ্ছি। এক্স-রে, এমআরআই করাচ্ছি, শরীরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকছে রেডিয়েশন। যেখানে পাথর বেশি থাকে, সেখানেই পারমাণবিক বিকিরণ বেশি হয়। এর সঙ্গে রয়েছে মহাজাগতিক বিকিরণ বা কসমিক রেডিয়েশন। সেটাও পারমাণবিক বিকিরণই। বিমানে চড়লে পাই। তবে সেটা পরিমাণে সবচেয়ে কম।
পরমাণু বিদ্যুৎ: কী বলছেন পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের সচিব শেখর বসু, দেখুন ভিডিও
আরও পড়ুন- ৪০ বছর ধরে মহাকাশে হাঁটছে এই দুই পথিক
আরও পড়ুন- ব্রহ্মাণ্ডের জন্মবৃত্তান্ত খুঁজতে বাঙালি বিজ্ঞানীরা খনিতে
শেখর বসু: অবশ্যই। অনেক ভুল ধারণা রয়েছে আমাদের। প্রতি মুহূর্তে আমাদের যত ভাবে পারমাণবিক বিকিরণের ঝাপটা সহ্য করতে হচ্ছে, সেই ১০০ ভাগের মধ্যে মাত্র ১ ভাগ আসে পরমাণু চুল্লির বিকিরণ থেকে। বায়ুমণ্ডল থেকে যদি নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন আসে ২৫০ ইউনিট (র্যাডনের জন্য), তা হলে পরমাণু চুল্লি থেকে বিকিরণ আসে বড়জোর ১০ ইউনিট বা আরও কম। ১ থেকে ২ ইউনিট। তাই পরমাণু চুল্লির বিকিরণ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও বিজ্ঞানসম্মত কারণ নেই।
প্রশ্ন: যে নিয়মে অ্যাটম বোমা ফাটে, সেই নিয়মে তবে পরমাণু চুল্লি চলে না?
শেখর বসু: সেটাই তো। সেটাই অনেকে জানেন না। বোঝেন না। নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোসান হয়ে অ্যাটম বোমা ফাটলে, সেটা হয় আনকন্ট্রোল্ড বা অনিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক বিস্ফোরণ। আর পরমাণু চুল্লিতে যেটা হয়, সেটা কন্ট্রোল্ড বা নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয়ার ফিসান। দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।
কলপাক্কামের পরমাণু চু্ল্লি। এই কলপাক্কামেই চালু হতে চলেছে দেশের প্রথম ফাস্ট নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর
প্রশ্ন: কিন্তু দু’টোই তো র্যাপিড প্রসেস। অত্যন্ত দ্রুত প্রক্রিয়া। একটা নিউট্রন একটা পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে খুব জোরে ধাক্কা মেরে সেখান থেকে দু’টো নিউট্রনকে ছিটকে বের করে দিচ্ছে। সেই দু’টো নিউট্রন আবার আরও চারটে নিউট্রনকে ছিটকে বের করে দিচ্ছে আরেকটা পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে ধাক্কা মেরে। এক লহমায়, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। এটাই তো নিউক্লিয়ার ফিসান। তা হলে ফারাকটা কোথায়?
শেখর বসু: যথেষ্টই ফারাক রয়েছে। অ্যাটম বোমাটা ফাটে মুহূর্তের মধ্যে। ফলে, সেই নিউক্লিয়ার ফিসান বা পারমাণবিক বিস্ফোরণটা ঘটে মাইক্রো সেকেন্ড বা ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে। কিন্তু পরমাণু চুল্লিতে যে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তা বছরের পর বছর ধরে চলে। কন্টিনিউয়াস প্রসেস। অ্যাটম বোমার নিউক্লিয়ার ফিসানের র্যাপিড প্রসেস বা অত্যন্ত দ্রুত গতিকে রোখার কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই সেটা আনকন্ট্রোল্ড বা অনিয়ন্ত্রিত। কিন্তু পরমাণু চুল্লিতে সেই ব্যবস্থা আছে। তাই চুল্লির নিউক্লিয়ার ফিসান কন্ট্রোল্ড।
প্রশ্ন: সেটা কী রকম? মানুষ একটু সহজ করে বুঝতে চান...
শেখর বসু: একটা নিউট্রন একটা পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে (ফিসাইল মেটিরিয়াল) ধাক্কা মেরে দু’টো নিউট্রন ছিটকে বের করে দিল। সেই দু’টো নিউট্রন যদি পরমাণু চুল্লিতে আরেকটি নিউক্লিয়াসকে ধাক্কা মেরে চারটে নিউট্রন ছিটকে বের করে দেয়, তা হলে তার মধ্যে দু’টো বা আড়াই খানা নিউট্রনকে আমরা চুল্লির ভিতরেই শুষে (অ্যাবসর্ব) নিতে পারি ব্লটিং পেপারের মতো। তার জন্য বিশেষ পদার্থ (কন্ট্রোল মেটিরিয়াল) থাকে পরমাণু চুল্লিতে। তাই চুল্লির নিউক্লিয়ার ফিসান দ্রুত হলেও নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু অ্যাটম বোমার ক্ষেত্রে তা একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত।
ভারতে পরমাণু বিদ্যুতের ভবিষ্যত কী? জানাচ্ছেন পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের সচিব। দেখুন ভিডিও
প্রশ্ন: তাপমাত্রার ফারাক কতটা অ্যাটম বোমা আর পরমাণু চুল্লিতে?
শেখর বসু: আকাশপাতাল। অ্যাটম বোমায় নিউক্লিয়ার ফিসানের জন্য ১ কোটি থেকে ১০০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হতে পারে। আর পরমাণু চুল্লির তাপমাত্রা হয় বড়জোর ১ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রশ্ন: শুধু ভারত নয়, ফ্রান্স, আমেরিকা, জার্মানি, ব্রিটেন সহ উন্নত এমনকী, ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, এশিয়ার বাকি দেশগুলিও পারমাণবিক বিদ্যুতের ওপর উত্তরোত্তর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। বাড়ানোর পথে এগচ্ছে। ভিয়েনায় সম্মেলনের পর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)’র ২০১৩ সালের রিপোর্ট সে কথাই বলছে। পারমাণবিক বিদ্যুতের সুবিধাগুলি কী কী?
শেখর বসু: অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে।
প্রথমত, পরিবেশকে সবচেয়ে বেশি পরিচ্ছন্ন রেখে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
দ্বিতীয়ত, এক সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ শক্তি (বাল্ক এনার্জি) উৎপাদন করা যায়।
তৃতীয়ত, এই বিদ্যুৎ তৈরি করতে যতটা জ্বালানি পোড়াতে হয়, তার চেয়ে বেশি পরিমাণে জ্বালানি তৈরি হয়। এটা একমাত্র পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই সম্ভব। বিদ্যুৎ উৎপাদনের আর যে সব পদ্ধতি রয়েছে (তাপ, জল, সৌর ইত্যাদি), তার সবক’টিতেই যতটা জ্বালানি পোড়ে, তার চেয়ে অনেকটাই কম জ্বালানি তৈরি হয়। কিন্তু ১ কেজি জ্বালানি পুড়িয়ে পরমাণু বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বছরশেষে দেখা যায়, ১.২ কেজি জ্বালানি তৈরি হয়েছে। এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রশ্ন: গত ৪৮ বছরেভারতে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে, এটা ঠিক। চুল্লির সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু তা কি প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত? নাকি সেই চুল্লির সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে?
সূত্র: পরমাণু শক্তি মন্ত্রক
শেখর বসু: দেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন রয়েছে ৭টি। মহারাষ্ট্রের তারাপুর, রাজস্থানের কোটা, কর্নাটকের কাইগা, তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলাম ও ম্যাড্রাস অ্যাটমিক পাওয়ার স্টেশন, উত্তরপ্রদেশের নারোরা ও গুজরাতের কাকরাপারে। রয়েছে মোট ২২টি পরমাণু চুল্লি। যাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট ইলেকট্রিক (এমডব্লিউই) বা মেগাওয়াট। আরও ২১টি চুল্লি বানানো হবে। তার মধ্যে ১০টি চুল্লির নির্মাণকাজ চলছে। তাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৭ হাজার এমডব্লিউই। সেই নির্মীয়মান ১০টি চুল্লির মধ্যে রয়েছে কর্ণাটকের কাইগায় ২টি, মধ্যপ্রদেশের চুটকায় ২টি, হরিয়ানার গোরখপুরে ২টি আর রাজস্থানের মাহি বাঁশোয়ারায় ৪টি।
প্রশ্ন: চালু পরমাণু চুল্লিগুলির মধ্যে কতগুলি বিদেশি? বলতে চাইছি, এই চুল্লি নির্মাণে আমরা কতটা স্বনির্ভর হতে পেরেছে গত ৪৮ বছরে?
শেখর বসু: মাত্র ৭টি বিদেশি। দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছিল মহারাষ্ট্রের তারাপুরে। ১৯৬৯ সালে। সেখানে সেই সময় মার্কিন সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিকের বানানো পরমাণু চুল্লি বসানো হয়েছিল। তার উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৬০ মেগাওয়াট। তার পর গত শতাব্দীর ৩১ বছরে দেশে আরও ১০টি পরমাণু চুল্লি বাণিজ্যিক ভাবে চালু হয়েছে। এই শতাব্দীর প্রথম ১৭ বছরে চালু হয়েছে আরও ১১টি চুল্লি। চালু ২২টি চুল্লির মধ্যে তারাপুর ছাড়া আরও ৬টি বিদেশি চুল্লি রয়েছে ভারতে। সেই ৬টি রয়েছে তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামে। বাকি চুল্লিগুলি দেশি। এ ছাড়াও কলপাক্কামে রয়েছে গবেষণার জন্য দেশের একমাত্র পরমাণু চুল্লি বা রিসার্চ রিঅ্যাক্টর। এই কলপাক্কামেই এ বার বসতে চলেছে দেশের প্রথম ফাস্ট নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর।
আরও পড়ুন- ভুতুড়ে কণার কীর্তি আবিষ্কার, ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্যে নতুন আলো
প্রশ্ন: দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কি সত্যিই কোনও ছাপ ফেলতে পেরেছে পরমাণু বিদ্যুৎ?
শেখর বসু: ১৯৬৯ সাল থেকে গত ৪৮ বছরে দেশে পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে কম করে ৪৩ গুণ। তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য (রিনিউয়েবল, যেমন বায়ু, সৌর, বায়োমাস, বর্জ্য, স্মল হাইড্রো)) শক্তির পরেই এখন ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা মেটায় পরমাণু শক্তি। ২০১৬-র জুনের হিসেবে, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬৮.৩১% আসে তাপবিদ্যুৎ থেকে, জলবিদ্যুৎ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য (রিনিউয়েবল, যেমন বায়ু, সৌর, বায়োমাস, বর্জ্য, স্মল হাইড্রো) শক্তি থেকে তৈরি হয় ২৯.৫৭% বিদ্যুৎ আর পরমাণু বিদ্যুৎ ২.১২ শতাংশ। এখন দেশে সবচেয়ে বেশি পরমাণু বিদ্যুৎ তৈরি হয় তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামে।
প্রশ্ন: ২০ বা ৫০ বছর পর পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন আর কতটা বাড়ানোর ভাবনা রয়েছে পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের?
শেখর বসু: আমরা বছরে আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট করে পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে চাইছি দেশে। তাতে এখন যে ২২টি চুল্লি চালু রয়েছে আর নতুন যে ১০টি চুল্লি বানানোর কাজ চলছে, তাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২০২৪/’২৫ সাল নাগাদ গিয়ে পৌঁছবে ২২ হাজার মেগাওয়াটে। ১৫/২০ বছর পর সেই ক্ষমতা পৌঁছবে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে। দেশের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন ক্ষমতার পরমাণু চুল্লি বানানো হচ্ছে মহারাষ্ট্রের জয়েতাপুরে। ১৭৫০ মেগাওয়াট ইলেকট্রিক। আর ৫০ বছর পর কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানি বাতিল হয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য, সেই সময় যাতে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২৫ শতাংশ মেটাতে পারে পরমাণু বিদ্যুৎ।
প্রশ্ন: হরিপুরে হলে পূর্ব ভারত অন্তত একটা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পেত...
শেখর বসু: হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে তো ভালই হত। ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি চুল্লি বসত সেখানে। যাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতা হত ৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। জায়গাটায় তেমন জনবসতিও ছিল না। কিন্তু সব সরকারেরই কিছু নীতি থাকে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও একটি নীতি রয়েছে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত। তাই হল না। (একটু থেমে)... তবে পশ্চিমবঙ্গে তেমন বড় শিল্প নেই। তাই বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গে উদ্বৃত্ত হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে পরমাণু বিদ্যুতের প্রয়োজন অত্যাবশ্যক মনে হতে পারে পশ্চিমবঙ্গে। তবে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে পরমাণু বিদ্যুৎ বেচে রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারত পশ্চিমবঙ্গ। তাতে বোধহয় রাজ্যের মন্দ হত না।
প্রশ্ন: তা হলে কি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পাওয়ার আর কোনও আশা নেই পূর্ব ভারতের?
শেখর বসু: তা কেন? অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে দু’টি জায়গা দিতে রাজি হয়েছে। ওড়িশার পারাদ্বীপের কাছেও একটা সাইট নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। সেটা অবশ্য এখন থমকে রয়েছে।