পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে কক্ষপথে প্রবেশ করবে গ্রহাণু। —ফাইল চিত্র।
দু’মাসের জন্য নতুন ‘চাঁদ’ পেতে চলেছে পৃথিবী। নিজস্ব উপগ্রহ ছাড়াও আগামী দু’মাস পৃথিবীর আকাশে থাকবে অন্য একটি ‘চাঁদ’। বিজ্ঞানীরা যার আকার বিবেচনা করে নাম দিয়েছেন ‘মিনি-মুন’। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পৃথিবীর আকাশে ‘মিনি-মুন’ থাকবে।
কী এই ‘মিনি-মুন’?
‘মিনি-মুন’ বা পৃথিবীর নতুন ‘চাঁদ’ আদৌ কোনও উপগ্রহ নয়। এটি একটি গ্রহাণু। সূর্যের টানে যা সৌরজগতের মধ্যে ইতিউতি ঘুরে বেড়ায়। কিছু দিনের জন্য সেই গ্রহাণুকে নিজের কাছে টেনে নেবে পৃথিবী। নির্দিষ্ট সময় পর তা আবার পৃথিবীর টান ছাড়িয়ে বেরিয়ে যাবে মহাশূন্যে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি বিরল একটি মহাজাগতিক ঘটনা। তবে এর আগেও এমন ঘটনার নজির রয়েছে মহাকাশে।
যে গ্রহাণুকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পৃথিবী আকর্ষণ করতে চলেছে, তার নাম ‘২০২৪ পিটি৫’। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ওই গ্রহাণুটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করবে। থাকবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। গত ৭ অগস্ট এই গ্রহাণুর গতিবিধি আবিষ্কার করেছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
‘২০২৪ পিটি৫’ গ্রহাণুর ব্যাস প্রায় ৩৩ ফুট। পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশের পর পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে ওই পাথরখণ্ড। তবে দু’মাসে সমগ্র পৃথিবীকে তা সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে পারবে না। ২৫ নভেম্বর আবার পৃথিবীর টান কাটিয়ে মহাকাশে তা বেরিয়ে যাবে। এই গ্রহাণু নিয়ে বিশদে গবেষণা করেছেন আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মহাকাশে ধীর গতিতে ঘুরছে এই গ্রহাণু। তার ফলেই পৃথিবীর কাছাকাছি আসার পর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে তা কক্ষপথে ঢুকে পড়বে। তবে পৃথিবীর আকাশে থাকলেও খালি চোখে এই গ্রহাণুকে দেখা সম্ভব নয়। সাধারণ এবং অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী টেলিস্কোপেও তা ধরা দেবে না। একমাত্র উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহাণুটিকে দু’মাস আকাশে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
এর আগে ১৯৮১ সালে এবং ২০২২ সালে দু’বার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। অর্থাৎ, পৃথিবীর টানে এর আগে দু’বার দু’টি গ্রহাণু তার কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। কিছু দিন থাকার পর টান কাটিয়ে আবার তারা বেরিয়ে গিয়েছে।
‘২০২৪ পিটি৫’-এর ক্ষুদ্র আকার এবং স্বল্পস্থায়িত্বের পরেও তা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানের প্রভাব এবং গ্রহাণুদের আচরণ সম্পর্কে বিশদে জানতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণার কাজে যা পরবর্তীকালে সাহায্য করতে পারে। আপাতত পৃথিবীর কক্ষপথে সেই নতুন অতিথির জন্য অপেক্ষায় বিজ্ঞানীমহল।