চাঁদের পথে ইসরোর চন্দ্রযান-৩। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অবশেষে চাঁদের ‘দেশে’ ঢুকে পড়ল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি চন্দ্রযান-৩। শনিবার সন্ধ্যায় চন্দ্রযান-৩ নির্বিঘ্নেই চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। যে মুহূর্তের জন্য দিন গুনছিল গোটা দেশ।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টান কাটিয়ে আগেই বেরিয়ে গিয়েছিল চন্দ্রযান-৩। শনিবার তা চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়ল। এ বার ধীরে ধীরে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের দিকে এগোনোর পালা তার। চাঁদের চারদিকে পাক খেতে খেতে ক্রমশ গতি কমাবে চন্দ্রযান-৩। ধীরে ধীরে গন্তব্যের দিকে এগোবে। কারণ, চাঁদের আকর্ষণবল পৃথিবীর চেয়ে ছয় গুণ কম। তার পরেই অপেক্ষা করে রয়েছে ‘আসল পরীক্ষা’। চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রেখেছিলেন আমেরিকার মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং। ঘটনাচক্রে, শনিবারই তাঁর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী।
চন্দ্রযান-৩-এর প্রাথমিক গন্তব্য চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। তার পর চন্দ্রাভিযানের সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন পর্বটি অপেক্ষা করে আছে ইসরোর জন্য। ২৩ অগস্ট সন্ধ্যা ৫টা ৪৭ মিনিট নাগাদ রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতরে নিয়ে ‘পাখির পালকের মতো অবতরণ’ (সফট ল্যান্ডিং) করার কথা ল্যান্ডার বিক্রমের। চার বছর আগে ঠিক ওই পর্যায়ে এসে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরোর ‘চন্দ্রযান-২’।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রমের। সেই অভিযান যদি সফল হয়, তবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা পাবে। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসাবে মহাকাশযান সফল ভাবে চাঁদে অবতরণ করানোর তালিকায় উঠে আসবে ভারত।
গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে সফল উৎক্ষেপণ হয়েছিল ‘চন্দ্রযান-৩’-এর। যাত্রা শুরুর ২২ দিন পর চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করল ইসরোর চন্দ্রযান-৩।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৭ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘সিমপেলিয়াস এন’ এবং ‘ম্যানজিনাস সি’ নামে দু’টি গহ্বরের মাঝখানে ‘চন্দ্রযান-২’ থেকে ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণের চেষ্টা করেছিল (এ বারও অবতরণ হবে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলেই)। কিন্তু তা সফল হয়নি। পেটের মধ্যে রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে অবতরণের তিন মিনিট আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বিক্রম। মাস তিনেক ধরে বিক্রমের ধ্বংসাবশেষের অনবরত খোঁজ চালিয়েছিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। কিন্তু কোনও ভাবেই তা চিহ্নিত করতে পারেনি তারা। শেষমেশ ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার’ (এলআরও)-এর তোলা একটি ছবি শেয়ার করে বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চায় নাসা। সেই ছবি দেখে চেন্নাইয়ের এক জন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিক্রমের ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেন।