‘ব্যর্থতা নয়, এটা সামলে নেওয়া’

ইসরোর কর্তারা অবশ্য অভিযান স্থগিত রাখাকে মোটেই ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখছেন না। বরং একে বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত বলছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:০২
Share:

চন্দ্রযান ২। ফাইল চিত্র।

একের পর এক চোখ ধাঁধানো সাফল্য। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ক্রমশ প্রথম সারিতে উঠে আসা। এই পরিস্থিতিতে আচমকা হোঁচট খেয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। প্রশ্ন উঠছে, চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ শেষ লগ্নে স্থগিত হয়ে যাওয়া কি ইসরোর ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলবে? বিশেষ করে যখন শুধু মহাকাশ গবেষণা নয়, কম খরচে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ বাণিজ্যের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে ইসরো ও নরেন্দ্র মোদীর সরকার—সেটাও কি ধাক্কা খাবে?

Advertisement

ইসরোর কর্তারা অবশ্য অভিযান স্থগিত রাখাকে মোটেই ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে দেখছেন না। বরং একে বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত বলছেন। তাঁদের মতে, সামান্য ভুলে চন্দ্রযান-সহ পুরো রকেট ধ্বংস হয়ে গেলে ব্যর্থতা বলা যেত। হোঁচট খাওয়ার বদলে এই ঘটনাকে বিপদের আগে সামলে নেওয়া হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

কোথায় তারা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে, তা-ও বিশদে ব্যাখ্যা করেছে ইসরোর সূত্র। ওই সূত্র জানাচ্ছে, জিএসএলভি মার্ক-থ্রি রকেটে পুরো জ্বালানি ভরা হয়ে গেলে তা প্রায় মাটির কাছাকাছি চলে আসে। ফলে উৎক্ষেপণ অনেক কঠিন এবং ১০০ শতাংশ নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন। সামান্যতম খুঁত থাকলেই ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটতে পারে। তাই জ্বালানি ট্যাঙ্কে সমস্যার ঝুঁকি নিয়ে উৎক্ষেপণ করতে গেলে বিপদ ঘটার আশঙ্কা ষোলো আনা ছিল। তা ছাড়া, দ্রুত ওই ত্রুটি ধরতে পারাটাও বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ারদের কৃতিত্ব।

Advertisement

কেউ কেউ এই দাবিও তুলেছেন, কম খরচে অভিযান চালাতে গিয়েই এই বিপত্তি কি না, তা খতিয়ে দেখা হোক। ইসরো সূত্রের যুক্তি, প্রয়োজনীয় খরচে খামতি রাখা হয়নি। কিন্তু কী ভাবে কম খরচে মহাকাশ অভিযান করা যায়, সেটাই তাদের বাণিজ্যবৃদ্ধির মূল হাতিয়ার। কম খরচে মঙ্গল অভিযান সফল করার পর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যবসা বেড়েছে ইসরোর বর্তমান বাণিজ্য শাখা ‘অ্যানট্রিক্স’-এর। তার উপরে এ বারের বাজেটে ইসরোর নতুন পেশাদার বাণিজ্যশাখা ‘নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড’ (এনএসআইএল) তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অ্যানট্রিক্স-এর শীর্ষকর্তা জানিয়েছিলেন, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশ বাণিজ্যের পরিমাণও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সস্তায় মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে ভারতীয় সংস্থাকেই বেছে নিচ্ছে প্রথম বিশ্বের দেশগুলি। এক যাত্রায় ১০৪টি কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠানোর রেকর্ডও রয়েছে ইসরো ও তার বাণিজ্যিক শাখার।

রবিবার রাতে জিএসএলভি মার্ক-থ্রি রকেটের ঠিক কোথায় ত্রুটি হয়েছিল, তা এখনও ইসরো সরকারি ভাবে ঘোষণা করেনি। ইসরো সূত্রের খবর, ক্রায়োজেনিক জ্বালানির ট্যাঙ্কেই ত্রুটি রয়েছে, সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত তারা। ট্যাঙ্কের ভিতরে খুঁটিনাটি পরীক্ষা চলছে। তবে ত্রুটি সারানো যাবে। পাশাপাশি আর কোথাও ত্রুটি রয়েছে কি না, সেটাও ফের এক বার পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে গোটা রকেটটিকে বাতিল করার প্রয়োজন হবে না। ‘‘ত্রুটির কারণ জানা জরুরি। তা হলেই ভবিষ্যতে এই ধরনের বিভ্রাট এড়ানো সম্ভব,’’ মন্তব্য এক ইসরো আধিকারিকের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement