সংক্রমণের পর। ভাইরাসের দেহের কণাগুলি (হলুদ রং) লেগে রয়েছে কোষের গায়ে। ছবি- ইলাইফ-এর সৌজন্যে।
এক বার সেরে ওঠার পর কোনও রোগীর ক্ষেত্রে কোভিড দ্বিতীয় বা তৃতীয় বারেও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। প্রথম বার সংক্রমণের পর শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলি পরের বারের সংক্রমণ রুখতে না-ও সমর্থ হতে পারে।
কারণ, ভাইরাসের বিভিন্ন রূপের সংক্রমণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলির দক্ষতায় তারতম্য থাকে। তাই এক বার আক্রান্ত হওয়ার পর মানবশরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলি পরে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের অন্য রূপগুলিকে রোখার ক্ষেত্রে যে সমান দক্ষ হবে তা সুনিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। এমনই জানাল একটি সাম্প্রতিক গবেষণা।
ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একটি যৌথ গবেষণা এই তথ্য দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ইলাইফ’-এ।
গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সবক’টি রূপের সংক্রমণে মানবশরীরে যে অ্যান্টিবডিগুলি তৈরি হয়, পরবর্তী সংক্রমণ রুখতে সেগুলি সমান দক্ষ হয় কি না।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এর ফলে কোনও কোভিড রোগী প্রথম বার ভাইরাসের কোন রূপের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন এখন তার উপরেও নজর রাখতে হবে। কারণ, যাঁরা আলফা বা বিটা রূপের মাধ্যমে প্রথম বার সংক্রমিত হয়েছিলেন তাঁদের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলি পরের বার গামা, কাপ্পা বা ডেল্টা রূপের সংক্রমণ রোখার ব্যাপারে সমান দক্ষতা না-ও দেখাতে পারে। সে দিক থেকে দেখলে, টিকার ফলে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য হতে পারে।
গবেষকরা কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীর রক্ত ও গবেষণাগারে ভাইরাসের বিভিন্ন রূপের সংক্রমণের ফলে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলির উপর আলাদা আলাদা ভাবে পরীক্ষা চালিয়েছেন।
গবেষণাটি চালানো হয়েছে ভাইরাসের মোট ৪টি রূপের উপর। তাদের মধ্যে অন্যতম চিনের উহান প্রদেশে প্রথম সংক্রমণ ঘটানো রূপ। তা ছাড়াও রয়েছে ডি৬১৪জি রূপ। গত বছরের এপ্রিলে প্রথম তরঙ্গের সময় ইউরোপে এই রূপটির দাপট দেখা গিয়েছিল। রয়েছে আলফা রূপ। ব্রিটেনের কেন্টে যার প্রথম হদিশ মিলেছিল। আর রয়েছে বিটা রূপ। যার প্রথম হদিশ মিলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়।
গবেষকরা দেখেছেন, কোনও একটি রূপের সংক্রমণের ফলে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলি অন্য রূপের অ্যান্টিজেনকে বেঁধে ফেলতে পারছে ঠিকই, কিন্তু সেই অ্যান্টিজেনগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার ব্যাপারে সমান ভাবে দক্ষ হচ্ছে না।