‘স্নোয়ি’ মশার নমুনা। ছবি: উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্র থেকে
প্রাণিবিদ্যার স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনার অঙ্গ হিসাবে মশার নমুনা সংগ্রহ করে বেড়াচ্ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল ছাত্র-ছাত্রী। তা করতে গিয়ে উত্তরবঙ্গে একশোরও বেশি বছর আগে শেষ দেখা যাওয়া মশার একটি প্রজাতির নতুন করে সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। দাবি, ‘ডাউনসিওমিয়া অ্যালবোল্যাটেরালিস’ বা ‘স্নোয়ি মসকিটো’ নামে পরিচিত এই মশা টাইপ-টু ডেঙ্গি এবং গোদের জীবাণু বহনে সক্ষম।
‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব এন্টামোলজি’র অনলাইন সংস্করণে সপ্তাহখানেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। সে তথ্যে স্বাস্থ্য দফতরের চিন্তাও বেড়েছে। কারণ, হিমালয়ের পাদদেশের এই এলাকায় দু’বছর আগে ডেঙ্গি মারাত্মক ছড়িয়েছিল। হয়েছিল প্রাণহানিও। গত বছর শীতের সময়েও ডেঙ্গি হচ্ছিল অনেকের। মনে করা হচ্ছিল, সে জন্য দায়ী ‘এডিস ইজিপ্টাই’ বা ‘এডিস এলবোপিকটাস’ প্রজাতির মশা।
গবেষক দলের সদস্য রত্নদীপ সরকার, অভিরূপ সাহা, শুভজিৎ দাস এবং প্রাপ্তি দাসেরা জানাচ্ছেন, প্রায় একশো বছর আগে এক দল ব্রিটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী হিমালয় ও তার পাদদেশের পাহাড়, বন-জঙ্গল চষে পশুপাখি, সাপ, মাছ, কীটপতঙ্গের বিবরণ দিয়ে সঙ্কলিত করেছিলেন, ‘ফনা অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’। ১৯০৮ সালে অসমের পাহাড়ে প্রথম ‘স্নোয়ি মসকিটো’-কে আবিষ্কার করেন উইলিয়াম থেবোল্ড। পরে, ব্রিটিশ পতঙ্গবিদ পি জে ব্যারাউড ১৯২০-র দশকে সুকনা ও কার্শিয়াঙে এই মশার অস্তিত্ব পান। তবে ১৯২০-র দশক এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলের গবেষণায় মশার এই প্রজাতি আর মেলেনি বলে দাবি।
২০২২-২৩ সালের মধ্যে হিমালয়ের পাদদেশে সুকনা অঞ্চলের পাশাপাশি, শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি এবং খড়িবাড়িতে হদিস মিলেছে এই মশার। নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে মশাটির লার্ভা মেলে। গবেষক দলের তরফে রত্নদীপ বলেন, ‘‘অন্য রকম ঠেকছিল এই লার্ভা। খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে, এই প্রজাতিটি স্নোয়ি মশার। গায়ে বরফের মতো দেখতে এক ধরনের আঁশ থাকে বলে তাইল্যান্ডে এই মশাটি এমন নামে পরিচিত।’’ তিনি জানান, তাইল্যান্ডের গবেষণাতেই বেরিয়েছিল, মশাটি ডেঙ্গি এবং গোদের জীবাণুবাহক। অনেক মিল থাকায় এই মশাকেও এডিস গোত্রেরই ভাবা হত। কী ভাবে হঠাৎ একশো বছর পরে উদয় হল এই মশা? রত্নদীপরা মশাটির জিন নিয়ে নতুন গবেষণা শুরু করেছেন। সেটির বিবর্তন কী ভাবে হয়েছে, গবেষণা শেষে মিলতে
পারে উত্তর।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মশাটি বাঁশের ছিদ্রে জমা জলে জন্মায়। মানুষ, পশুদের দিনের বেলায় কামড়ায় মশাটি। সাধারণত, সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩০০ থেকে ৩০০০ মিটার উচ্চতায় পাওয়া গেলেও, সম্প্রতি এই মশাদের লার্ভা মিলেছে মাত্র ১২০ মিটার উচ্চতাতেই। গবেষকদের গাইড ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ধীরাজ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের এখানকার কৃতীরা এ কাজ করেছে।"
এই প্রজাতির মশার সন্ধান মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের। কালিম্পঙের জনস্বাস্থ্য এবং সংক্রামক রোগের জেলা উপদেষ্টা মানসপ্রতিম মোদক বলেন, ‘‘বিষয়টি চিন্তার। এত দিন এডিসকেই ডেঙ্গির বাহক ধরে স্বাস্থ্য দফতর পদক্ষেপ করছে। যদিও দফতরের মাধ্যমে বিষয়টি আমাদের কাছে এলে, পদক্ষেপ করতে পারি।’’