আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু: এক উপেক্ষিত জিনিয়াস

স্যর। আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর জন্মের ১২৫-তম বর্ষে তাঁকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের জবাব দিলেন প্রিয় ছাত্র বিজ্ঞানী পার্থ ঘোষস্যর। আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর জন্মের ১২৫-তম বর্ষে তাঁকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের জবাব দিলেন প্রিয় ছাত্র বিজ্ঞানী পার্থ ঘোষ

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:৩১
Share:

আপনিই কি এখন সত্যেন্দ্রনাথ বসুর একমাত্র জীবিত ছাত্র?

Advertisement

আমি যত দূর জানি, তাই-ই ঠিক। আমার পরে সলিল রায় ওঁর অধীনে পিএইচ ডি করেছিলেন। মনে হয় না, তিনি জীবিত আছেন।

Advertisement

বসু সংখ্যায়ন কী, তা সহজে বলুন।

ওটা গণনার এক বিশেষ পদ্ধতি। হুবহু এক এবং এক রঙের অনেকগুলো বস্তুর বিন্যাস গুণতে হবে। ধরা যাক, দুটো হুবহু এক বল, তাদের রাখতে হবে তিনটে বাক্সে। তা হলে দুটো বলকেই যে কোনও বাক্সে রাখা যায়। এ রকম ভাবে রাখলে তিনটে বিন্যাস হতে পারে। দুটো বলই বাক্স নম্বর ১, ২ অথবা ৩-এ। অথবা একটা করে বল এক-একটা বাক্সে। এ ক্ষেত্রে তিন রকম বিন্যাস হতে পারে। একটা বল এক নম্বর বাক্সে, একটা দু’নম্বর বাক্সে। অথবা, একটা এক নম্বর বাক্সে, একটা তিন নম্বর বাক্সে। অথবা, একটা দু’নম্বর বাক্সে, একটা তিন নম্বর বাক্সে। সুতরাং, বিন্যাস হল মোট ৬ রকম। এটা হল, বল দুটো অভিন্ন বা হুবহু এক বলে। ঠাঁই বদলে বিন্যাসের সংখ্যা যদি না পাল্টায়, তা হলে বলগুলিকে শুধু একরঙা নয়, অভিন্নও বলতে হবে। আর, ঠাঁই বদলে বিন্যাস যদি আলাদা আলাদা হয়, তা হলে বিন্যাসের সংখ্যা দাঁড়াবে ১২। ওই ১২-র বদলে ৬-এর হিসেব হল বসু সংখ্যায়ন।

ওটাই কি সত্যেন্দ্রনাথের সবচেয়ে দামি আবিষ্কার?

হ্যাঁ, অবশ্যই।

আপনার লেখায় দেখেছি, আপনি বসু সংখ্যায়নকে বলেছেন ‘চতুর্থ কোয়ান্টাম বিপ্লব’। কেন?

আমি এ ক্ষেত্রে আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রখ্যাত জীবনীকার আব্রাহাম পায়াসকে অনুসরণ করেছি। তাঁর ক্লাসিক বই ‘সাট‌্ল ইজ় দ্য লর্ড’-এ পায়াস বলেছেন অন্ধকারে চারটে বিখ্যাত গুলি ছোড়ার কথা। যেগুলো পুরনো কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকে নতুন কোয়ান্টাম মেকানিক্স আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করেছিল। ওঁর মতে, সে চারটে হল ম্যাক্স প্লাঙ্কের অনুমান (১৯০০ খ্রিস্টাব্দ), আইনস্টাইনের আলোককণার ধারণা (১৯০৫), নিলস বোর-এর পরমাণু মডেল (১৯১৩), এবং বসু সংখ্যায়ন (১৯২৪)।

বসু-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন কী?

বসু সংখ্যায়ন আলোককণা নিয়ে। আইনস্টাইন আলোককণার বদলে ওই সংখ্যায়ন প্রয়োগ করলেন পদার্থকণায় (এখন ওটাকে বসু গ্যাস বলা হয়)। আইনস্টাইনের ওই কাজ থেকেই পাওয়া গিয়েছিল পদার্থকণার তরঙ্গ চরিত্রের আভাস (প্রথম এর অনুমান ফরাসি বিজ্ঞানী লুই ডিব্রয়-এর)। কণাদের ওই তরঙ্গচরিত্রের কারণেই বসু-আইনস্টাইন সংখ্যায়নের আর এক বিশেষ প্রাপ্তি খুব, খু-উ-ব, কম উষ্ণতায় পদার্থের এক বিশেষ ঘনীভবন। ওটাকে বলে ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’।

আপনার কি মনে হয় বসুর নোবেল প্রাইজ় পাওয়া উচিত ছিল?

অবশ্যই।

১৯২০-র দশকের মাঝামাঝি জার্মানি এবং ফ্রান্সে গিয়ে কি বসু যথেষ্ট সমাদর পেয়েছিলেন?

ওঁর অবদানের কদর করেছিলেন আইনস্টাইন। সুতরাং, তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি যদি বলেন, সেটা সত্যেন্দ্রনাথ অবশ্যই পেয়েছিলেন। পরীক্ষামূলক কাজে ওঁর যে দক্ষতা ছিল, তা যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিল প্যারিসে মরিস ডিব্রয়ের কাছ থেকেও। পরে মাদাম কুরি ওঁর রসায়নে পরীক্ষার সুখ্যাতি করেছিলেন। আর বার্লিনে সত্যেন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন তখন ওখানকার সব বড় বড় বিজ্ঞানীর সমাদর। তবে, তাত্ত্বিক কিছু ব্যাপারে সত্যেন্দ্রনাথের মতের মিল হয়নি আইনস্টাইনের সঙ্গে।

আপনি কি মনে করেন সাক্ষাতের সময় সত্যেন্দ্রনাথের গুরু তাঁকে কিছুটা অবহেলা করেছিলেন?

অবহেলা যদি বলেন, তা হলে আইনস্টাইন তা করেছিলেন ওঁর সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই। আইনস্টাইন এমন পদক্ষেপ করেছিলেন, যা বিজ্ঞানের জগতে নজিরবিহীন। বসুর দ্বিতীয় পেপার-এ আইনস্টাইন (যা আইনস্টাইন জার্মানে অনুবাদ করেন) জুড়ে দেন এক ফুটনোট। বসুকে না জানিয়েই। ওই ফুটনোটে আইনস্টাইন লেখেন, বসুর নতুন সম্ভাব্যতা সূত্র (যা বসু সংখ্যায়ন থেকে আলাদা) ভুল। ওই ফুটনোট সহযোগেই ছাপা হয় পেপার। ওই মন্তব্য প্রায় পেপারটিকে হত্যা করার শামিল। আজ কোনও জার্নাল এ রকম ঘটতে দেবে না। পেপার যাঁদের পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়, তাঁদের মন্তব্য এলে সে সব পাঠানো হয় পেপার-লেখককে। লেখক যদি মন্তব্যের কোনও সদুত্তর দিতে না পারেন, তা হলে সে পেপার ছাপাই হয় না। রেফারিদের ও রকম বিরূপ মন্তব্য-সহযোগে কোনও পেপার এখন ছাপার রীতি নেই।

আইনস্টাইনের সাধের একটা ধারণাও যে ভুল, সত্যেন্দ্রনাথ তা ধরিয়ে দেওয়ার সাহস করেছিলেন। আইনস্টাইনের ধারণা ছিল যে, উত্তেজিত পরমাণু থেকে দু’ভাবে রশ্মি নির্গত হতে পারে। একটা স্বতঃস্ফূর্ত (যা কোয়ান্টাম চরিত্রের) আর অন্যটা উদ্দীপিত (যা ধ্রুপদী চরিত্রের)। সত্যেন্দ্রনাথের মনে হয়েছিল, এই বিভাজনের ধারণা কৃত্রিম এবং অমূলক। উদ্দীপিত বিকিরণ মেনে নিলেই স্বতঃস্ফূর্ত বিকিরণ নতুন বসু সংখ্যায়ন থেকে চলে আসে। এটা আইনস্টাইন মানেননি। পরে, ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পল অ্যাড্রিয়েন মরিস ডিরাক যে তত্ত্ব প্রস্তাব করেন, তাতেও এই বিভাজন মানা হয়নি। তা ছাড়া, আধুনিক পরীক্ষা দেখিয়ে দিয়েছে, এ ব্যাপারে আইনস্টাইন ভুল কথা বলেছিলেন। স্বতঃস্ফূর্ত বিকিরণ পরমাণুর একান্ত নিজস্ব ধর্ম নয়। এটা বাড়ানো বা কমানো যায়।

‘ফিজিক্স টুডে’ পত্রিকায় কামেশ্বর ওয়ালি তাঁর প্রবন্ধে (‘দ্য ম্যান বিহাইন্ড বোস স্ট্যাটিসটিক্স’) আপনাকে উদ্ধৃত করেছেন এক বিশেষ প্রসঙ্গে। একটু ব্যাখ্যা করবেন?

হ্যাঁ। ওই বিষয়টা আমি বলব মুম্বইয়ের নেহরু সেন্টারে। ওখানে ৪ জানুয়ারি আমার বক্তৃতার শিরোনাম ‘এস এন বোস, দ্য ইগনোরড জিনিয়াস’। ওখানে আমি বলব বিশেষ কিছু বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথ এবং আইনস্টাইনের মতানৈক্যের একাধিক কাহিনি। তার মধ্যে ওয়ালিকে আমি একটামাত্র ঘটনার বর্ণনাই দিয়েছিলাম। এর আগে আমি অনেক জায়গায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে ওই ঘটনা উল্লেখ করেছি। যেমন বলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫ সালে। এক দিন। সত্যেন্দ্রনাথের বাড়ি গিয়েছি। স্যর আমাকে বললেন, এক গোপন কথা শোনাবেন। কী? আমি উৎসুক। স্যর বন্ধ করলেন দরজা-জানলা। তার পর আমাকে ফিসফিস করে বললেন, ‘‘আজ তোকে যা বলছি, তা আর কাউকে বলিস না।’’ কথা দিলাম যে আমি কাউকে তা বলব না। কিন্তু কী ব্যাপার? স্যরের আবিষ্কৃত সংখ্যায়নে একটা সংখ্যা (৪) এসেছিল। সেটা হবে ৮। কেন হবে, তার ব্যাখ্যাও স্যর দিয়েছিলেন। হবে এ কারণে যে, আলোককণার স্পিন (ঘূর্ণনের মতো একটা ব্যাপার) আছে। আলোককণা ঘুরতে পারে ২ ভাবে। এক, আলোককণা যে দিকে ছুটছে, সে দিকেই ঘোরা। দুই, যে দিকে ছুটছে, তার উল্টো দিকে ঘোরা। তাই ৪-এর বদলে ৮ (২×৪)। বসুর বিখ্যাত পেপারটি দেখার পর আইনস্টাইন তা পাল্টে দেন। স্যর আমাকে বললেন, ‘‘বুড়ো ওটা কেটে দিলে।’’ পরে আলোককণার স্পিন পরীক্ষায় ধরা পড়ে। আমি স্যরকে বললাম, স্পিন ধরা পড়ার পরে কেন আপনি আইনস্টাইনকে বললেন না যে, আপনিই ঠিক। তা হলে তো আলোককণার স্পিনের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য আপনার কৃতিত্ব স্বীকৃত হত। স্যর উত্তরে বললেন, ‘‘কে বার করেছে, তাতে কী যায়-আসে রে? বেরিয়েছে তো।’’ এই হলেন সত্যেন্দ্রনাথ!

অনেকে ভাবতে পারেন, ওয়ালিকে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অথবা অনেক বক্তৃতায় আমি প্রতিজ্ঞা ভেঙেছি। তা অবশ্য করেছি। কিন্তু প্রতিজ্ঞাভঙ্গের কারণও ছিল। পরে দেখেছি, স্যর তাঁর পেপারে যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, তা ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং, আমার প্রতিজ্ঞা অর্থহীন। স্যর যে দিন আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন, তার অনেক বছর পরে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স-এর লাইব্রেরিতে বসে আমি পুরনো জার্নাল ঘাঁটছিলাম। হঠাৎ আমার হাতে এল ১৯৩১ সালে প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’-এ প্রকাশিত সি ভি রামন এবং এস ভগবন্তম-এর লেখা এক পেপার। ওই জুটি ব্যাখ্যা করছেন আলোককণার স্পিন-এর পরীক্ষামূলক প্রমাণ। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, এ পেপার কি স্যর দেখেননি? এ পেপার প্রকাশিত হওয়ার পরেও তো স্যর আইনস্টাইনকে বলতে পারতেন যে, আইনস্টাইন নন, তিনিই ঠিক। আসলে কি জানেন, স্যর প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতেন আইনস্টাইনকে।

ইন্দিরা গাঁধী বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর আমেরিকা থেকে ভারতে আসেননি। দিল্লিতে এক বার বেড়াতে এসে তিনি দেখেছিলেন এক বিচিত্র দৃশ্য। চন্দ্রশেখরের দেখা করার কথা কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ-এর ডিরেক্টরের সঙ্গে। তিনি পৌঁছে দেখেন, আর এক জন ডিরেক্টরের সাক্ষাৎপ্রার্থী। সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁকে বসিয়ে চন্দ্রশেখরকে ডাকা হল ঘরে। চন্দ্রশেখর বুঝলেন, ভারতে দাম পায় না প্রতিভা, গুরুত্ব পায় কে কার প্রিয়। তাই চন্দ্রশেখর ভারতে আসেননি। আপনার কি মনে হয় যে সত্যেন্দ্রনাথও যদি বিদেশে থাকতেন, তা হলে তিনি উপযুক্ত মর্যাদা পেতেন?

আপনি যদি জীবিতকালে উপযুক্ত মর্যাদার কথা বলেন, তা হলে আমার উত্তর হবে, সম্ভবত হ্যাঁ। কিন্তু আমরা বিচার করার কে? স্যরের কাছে ভারত, যে দেশ অনেক কাল বিদেশি শাসনে ছিল, সে দেশে বিজ্ঞান গবেষণার ভিত তৈরি করা নিজের স্বীকৃতির চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় মনে হয়েছিল। বিদেশে থেকে যাওয়ার প্রসঙ্গ যদি তোলেন, তো আমি বলব, সেটা শুধু সত্যেন্দ্রনাথ কেন, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায় এবং মেঘনাদ সাহা সকলেই পারতেন। আসলে ওঁদের কাছে প্রায়রিটি ছিল দেশ গড়া। আমি জানি, স্যর তাঁর ছাত্রী পূর্ণিমা সিংহকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করিয়ে ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন ‘নেচার’ জার্নালেও। আসলে উনি তো শুধু তাত্ত্বিক ছিলেন না, এক্সপেরিমেন্ট-এও রীতিমতো উৎসাহী ছিলেন।

আপনি মুম্বইতে বলতে যাচ্ছেন সত্যেন্দ্রনাথের প্রতি অবহেলা নিয়ে। অবহেলা কি ওঁকে কিছু কম সইতে হয়েছে দেশেও?

ঠিকই বলেছেন। আরও এক দিনের কথা মনে পড়ছে আমার। গিয়েছি স্যরের বাড়িতে। দেখলাম, উনি বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? বললেন, চিফ মিনিস্টার সিদ্ধার্থশংকর রায়ের সঙ্গে দেখা করতে রাইটার্সে। কেন? প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘আমার ন্যাশনাল প্রফেসরের টাকাটা ওঁরা বন্ধ করে দিয়েছে রে। তাই চিফ মিনিস্টারকে বলতে যাচ্ছি।’’ আমি থ। এবং উত্তেজিত। আপনি যাচ্ছেন? ডাকলে তো চিফ মিনিস্টার নিজেই এসে আপনার সঙ্গে দেখা করতেন। স্যর বললেন, ‘‘না রে, তা হয় না।’’ বুঝুন অবস্থা! সত্যেন্দ্রনাথের ন্যাশনাল প্রফেসরশিপ কাটা গিয়েছে!

কেটেছিলেন কি ইন্দিরা গাঁধী?

আমার তা মনে হয় না। আর যা-ই হোক, তিনি অন্তত ও কাজ করবেন না। কোনও আমলা হয়তো তা করেছিলেন।

শুনেছি সহপাঠী হয়েও মেঘনাদ সাহার সঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথের একটা রেষারেষির সম্পর্ক ছিল। ঠিক?

আমার তা মনে হয় না। আমাকে স্যর এক বার বলেছিলেন, ‘মেঘনাদ ঘরে বসে তারাদের তাপ মেপেছিল। কৃতিত্বটা ভাবতে পারিস?’ আর এক দিন। আশি বছর পূর্তিতে স্যরকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠান-শেষে উনি বাড়ি ফিরছেন। আমি সঙ্গী। বাড়ি পৌঁছে আমাকে সখেদ বললেন, ‘আমি তো অনেক পেলাম, মেঘনাদটা তো কিছুই পেল না রে।’ মেঘনাদ নয়, মেঘনাদটা। সহপাঠী সম্পর্কে কী রকম শ্রদ্ধা থাকলে এ কথা বলা যায়?

প্রয়াত অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরী লিখেছিলেন, সত্যেন্দ্রনাথ অসামান্য প্রতিভা অপচয় না করে গবেষণায় একমুখী হলে ভাল করতেন। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

স্যরের পেপারগুলো দেখলে সে রকম মনে হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে অন্য একটা দিকও। আগেই বলেছি, সত্যেন্দ্রনাথ কিন্তু কেবলই পেশাদার বিজ্ঞানী হিসেবে নিজের কৃতিত্বের কথা ভাবেননি। তিনি সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশে গবেষণার ভিত তৈরি করার কাজে। এ রকম মানুষদের শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যে বিচার করা ঠিক নয়, বিচার করতে হবে সমাজ আর রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে।

শুনেছি অমলবাবুকে জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে গবেষণা করতে সত্যেন্দ্রনাথ উৎসাহ দেননি?

হ্যাঁ, আমিও তা শুনেছি। ব্যাপারটাকে কিন্তু উল্টো দিক থেকেও দেখা যায়। যুগটা তখনকার। তখন জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে আজকের মতো উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। এটাও কি হতে পারে না যে, স্যর ভেবেছিলেন এক জন তরুণ ভারতীয় ও বিষয়ে গবেষণা করে কেরিয়ারটা মাটি করবে?

সাক্ষাৎকার: পথিক গুহ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement