সজনে ফুল তেঁতো স্বাদও ‘মধুর’ লাগে অনেকের। ছবি : সংগৃহীত।
দেখতে যতই সুন্দর হোক, সজনে ফুল স্বাদে কড়া। সামান্য তিতকুটে ভাব। তবু বসন্তকাল এলেই সেই ফুলের তরকারি দেওয়া হত ভাতের পাশে। বলা হত, আর কিছু না হোক ওই তরকারিটি খেতেই হবে। তেতো বলে ছোটরা সজনে ফুলের তরকারি দেখে মুখ বেঁকালে বকুনিও জুটত বিস্তর। বলা হত, ওই ফুল আসলে ওষুধের মতো। বসন্তকালে রোগের হাত থেকে বাঁচতে খেতে হয়। আয়ুর্বেদও বলছে, সজনে ফুল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তার রোগ প্রতিরোধ শক্তি রয়েছে।
বসন্তকাল আবহাওয়া বদলের সময়। ঠান্ডা থেকে আচমকা গরম ভাব চারপাশে। এই হঠাৎ বদলে রোগ বাড়ে। হাম, বসন্ত, হারপিস, নানা রকমের জ্বরজ্বালা লেগে থাকে। আয়ুর্বেদ বলছে, ওই সমস্ত রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরকে আগাম তৈরি রাখতে পারে সজনে ফুল। আর অদ্ভুত বিষয় হল সজনে ফুল মূলত বছরের এই সময়টিতেই পাওয়া যায়।
সজনে ফুল দিয়ে নানারকম পদ রান্না করা যায়। খুব সামান্য আয়োজনে রান্না করা যায় বাটিচচ্চড়ি। খেতেও হয় সুস্বাদু। কী ভাবে রাঁধবেন জেনে নিন।
উপকরণ:
৫ কাপ সজনে ফুল
১ টি মাঝারি মাপের বেগুন
২টি ছোট মাপের আলু
১ মুঠো কড়াইশুঁটি
১ চা চামচ নুন
১/২ চা চামচ হলুদ
১ চা চামচ কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো
১ টেবিল চামচ পোস্ত
১ টেবিল চামচ সাদা সর্ষে
২-৩ টি কাঁচা লঙ্কা
৪-৫ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
১ চা চামচ গোবিন্দভোগ চালের গুঁড়ো
সামান্য চিনি
ছবি: ছায়া’জ় ফুড।
প্রণালী:
বাটিচচ্চড়ি রান্নার নিয়ম হল সমস্ত উপকরণ একটিই পাত্রে দিয়ে ভাল করে সেজে আঁচে বসিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না। তাই রান্না শুরু করার আগে সব্জি ধুয়ে কেটে, মশলা বেটে গুছিয়ে নিতে হবে।
সজনে ফুলে অনেক সময় ছোট ছোট পোকা থাকে। তাই ভাল করে সজনে ফুল ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন। বেগুন সামান্য বড় ডুমো করে কাটতে হবে। আলু কাটুন ছোট ছোট টুকরোয়, যাতে সেদ্ধ হয় দ্রুত। সর্ষে এবং পোস্ত জলে ভিজিয়ে রাখুন মিনিট ২০। তার পরে একটি লঙ্কা দিয়ে মিক্সিতে বেটে নিন। এ বার রান্না শুরু করুন।
যে পাত্রে রান্না করবেন সেটি সামান্য বড় হলে ভাল। কারণ সজনে ফুল রান্না করার পরে পরিমাণে কমলেও, রান্না করার আগে অনেকখানি জায়গা নেবে। আগে বাটিচচ্চড়ি হত বড় এবং মোটা অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে। সেই থেকেই নাম বাটি চচ্চড়ি। এখনকার রান্নাঘরে অমন কানা উঁচু বড় বাটি পাওয়া মুশকিল। তা ছাড়া ইদানীং ওই সব বাটির রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়েও নানারকম প্রশ্ন উঠছে। তাই চাইলে কড়াই কিংবা ঢাকা দেওয়া ফ্রাইং প্যানেও রান্না করতে পারেন।
কড়াইয়ে সজনে ফুল, আলু, বেগুন, কড়াইশুঁটি দিয়ে তাতে দু’টেবিল চামচ সর্ষে-পোস্তবাটা, নুন, হলুদ, লঙ্কাগুঁড়ো এবং ৩ টেবিল চামচ সর্ষের তেল দিয়ে হাতে করে মশলার সঙ্গে সব্জি ভাল ভাবে মাখুন। মিনিট কয়েক মাখার পরে দেখবেন ফুল নরম হয়ে এসেছে। এ বার কড়াইয়ে আঁচে বসিয়ে তাতে খুব সামান্য জল দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে ঢাকা দিয়ে আঁচ কমিয়ে রান্না হতে দিন।
মিনিট পাঁচেক পরে ঢাকা খুলে আবার নাড়াচাড়া করে আবার ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে বুঝবেন রান্না হয়ে গিয়েছে। এ বার সজনে ফুলে সামান্য চিনি, দু’টি কাঁচালঙ্কা চেরা, এক চা চামচ গোবিন্দভোগ চালের গুঁড়ো এবং ১-২ টেবিল চামচ সর্ষের তেল ছড়িয়ে এক বার নাড়াচাড়া করে ঢাকা দিয়ে আঁচ বন্ধ করে দিন।
কিছু ক্ষণ ওই ভাবেই রেখে মিনিট দশেক পরে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।