বাঙালির কোনও উদ্যাপনই ভূরিভোজ ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। ছবি: সংগৃহীত।
বসন্তকাল মানেই দোল উৎসব। রঙের পরবে মেতে ওঠার দিন। দোলের উদ্যাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই। হাতে অবশ্য সময়ও বিশেষ নেই। পুজো কিংবা দোল, বাঙালির উৎসব মানেই তাতে একটা জাঁকজমকের ছোঁয়া থাকবে। দোলের আনন্দে-হুল্লোড়ে মেতে ওঠা তো আছেই। কিন্তু বাঙালির কোনও উদ্যাপনই ভূরিভোজ ছা়ড়া সম্পূর্ণ হয় না। তবে উৎসব-পার্বণে হেঁশেলে ঢুকতে চান না অনেকেই। আর দরকারই বা কী? শহরের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁগুলি দোল উপলক্ষে বাহারি স্বাদের নানা খাবার নিয়ে হাজির হয়েছে। কোন রেস্তরাঁয় নতুন কী পদ থাকছে? খরচই বা কেমন?
দ্য কান্ট্রি হাউস
দোলের দিন অনেকেই সঙ্গীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর পরিকল্পনা রয়েছে? তাহলে ঢুঁ মারতে পারেন এই ক্যাফেতে। নানা স্বাদের রকমারি কফি তো পাবেনই। সেই সঙ্গে হোলি উপলক্ষে থাকছে পেস্তা এলাচ দিয়ে তৈরি ভিন্ন স্বাদের চিজকেক, ঠান্ডাই কুকিজ, রেইনবো প্যানকেক। আর শুধু কফি নয় দোলের জন্য থাকছে কেশর চা। দু'জনের জন্য খরচ পড়বে প্রায় ৮০০ টাকা।
এলএমনওকিউ
সারা দিন রং খেলে সন্ধ্যায় একটু গলা না ভেজালে চলে? কোথায় যাবেন ভাবছেন? চলে আসতে পারেন খোলা আকাশের নীচে লাউঞ্জ বারে। সারা বছর যে ককটেল, মকটেল এবং অন্যান্য পানীয় পাওয়া যায়, সেগুলি তো থাকছেই। তবে দোলের জন্য কিছু বিশেষ চমক হিসাবে থাকবে বেনারসি রাম, গ্রিন গুলাল, কেশরিয়া গিন, ঠান্ডাই অ্যান্ড রঙ্গোলি ফ্রোজেন মার্গারিটা। এখানে দু'জনের খাওয়াদাওয়ায় খরচ পড়বে জন্য খরচ পড়বে ট্যাক্স সহ ১২০০ টাকা। তবে সঙ্গে অ্যালকোহল নিলে সেক্ষেত্রে খরচ পড়বে প্রায় ২০০০ টাকা।
কলকাতা লোকাল
বাঙালি দোল খেলবে, আর পাতে কোনও বাঙালি পদ থাকবে না তা কী করে হয়? দোলের দিন বাঙালি খাবারে স্বাদ নিতে ঢুঁ মারতে পারেন এই রেস্তরাঁয়। রং খেলা উপলক্ষ্যে এখানে বিশেষ পদ হিসাবে থাকছে চিকেন কাটলেট, ভুনা চিংড়ি রোল, ফিশ রোল এবং কাঁচালঙ্কা ধনে পাতা মুরগি রোল। দু’জনের ভূরিভোজে খরচ হবে ট্যাক্স ছাড়া প্রায় ৫০০ টাকা।
ফর্ক অ্যান্ড নাইফ
রং খেলার দিন একটু ভালমন্দ খাবার না খেলে ঠিক জমে না। উৎসবের দিন সন্ধ্যায় হঠাৎ চটপটা কিছু খেতে ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারেন এই রেস্তঁরায়। হোলি উপলক্ষে এখানকার মেনুতে থাকছে বিশেষ চমক। বিটরুট লাভাস্, হাম্মাস, ফুচকা, পটেটো জেলি উইথ কর্ন ভেল, আইস লোলিস, ঠান্ডাই ট্রেস লিচেস। দোলের উৎসব আরও একটু রঙিন করে তুলতে চেখে দেখতে পারেন নতুন স্বাদের এই খাবারগুলি। দু’জনের জন্য খরচ পড়বে প্রায় ২২০০ টাকা মতো।
পাপরিকা গমে
হোলির দিন একঘেয়ে খাবারের স্বাদ থেকে ছুটি নিয়ে নতুন কিছুর স্বাদ নিতে চান? তাহলে আসতে পারেন এই রেস্তরাঁয়। বছরের অন্য সময় যে খাবারগুলি পাওয়া যায়, দোলের দিন সেই মেনুতেও থাকছে পরিবর্তন। নতুন কী কী থাকছে? ইরানি প্লেটার, মিনি ডাবেলি, টম ইয়াম ম্যাগি, সেই সঙ্গে মিষ্টি মুখ করার জন্য থাকছে রামালাই ডিস্ক, পপসিস্লেস অ্যান্ড পান। খাবারের দাম পড়বে প্রায় ১৫০০ টাকার কাছকাছি।
কোলকাতা লোকালের ভুনা চিংড়ি রোল। ছবি: সংগৃহীত।
হোমলি জেস্ট
উৎসব মানেই ভূরিভোজ। সে দোল হোক কিংবা পুজো। দোলে স্বাদের উদ্যাপন করতে অর্ডার করতে পারেন এখান থেকে। দোলের বিশেষ মেনু হিসাবে এখানে থাকছে, পিণ্ডি ছোলে বাইটস উইথ তন্দুরি হামাস, ডাবেলি টুইস্ট, রোস্টি চাট, মাঞ্চুরিয়ান, ভেলপুরি, রাজস্থানি খোয়সুয়ে, বেনারসি বেলমি কাচোরি সব্জি, মেক্সিকান সামোসা চাট। শেষ পাতে রয়েছে নয়া স্বাদের মিষ্টিও। স্যাফরন পান্নাকোট্টা উইথ রোজ জেলি, ঠান্ডাই ট্রিস লিচেস এবং ফিউশন ট্রুফলস। দু’জনের খাওয়াদাওয়ায় খরচ পড়বে ট্যাক্স সহ প্রায় ১২০০ টাকা।
ই ডাব্বা
রঙের উৎসব অসম্পূর্ণ থেকে যায়, যদি জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হয়। বন্ধুদের নিয়ে রঙের সন্ধ্যায় খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন? সেক্ষেত্রে চেখে দেখতে পারেন এই রেস্তরাঁর খাবার। হোলি উপলক্ষে থাকছে বিশেষ কিছু পদ। ফিশ ফিঙ্গার, চিজ জালাপেনো পপারস্, চিকেন স্প্রিং রোল, ভেজ স্প্রিং রোল, এছাড়াও আরও অনেক কিছু। সেই সঙ্গে থাকছে বিশেষ এক ধরনের পানীয় কুলবার্গ। খাবারের দাম শুরু হচ্ছে ১৬৫ টাকা থেকে।
বলরাম মল্লিক এবং রাধারমণ মল্লিক
বাঙালির কোনও উৎসবই মিষ্টিমুখ ছাড়া শেষ হয় না। আর মিষ্টির কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন এই দোকান। বহু দিন ধরেই বাঙালিকে রকমারি মিষ্টির স্বাদ দিয়ে এসেছে এই দোকান। দোল উপলক্ষেও তাই মিষ্টির তালিকায় এনেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। কী কী থাকছে? ছানার মালপোয়া, গুজিয়া, কেশর পাত্তি, কেশর রাবড়ি, কেশর রসমালাই, মালপোয়া স্যান্ডউইচ, রং দে বসন্তি, ঠান্ডাই সন্দেশ, সরের নাড়ু। দু’জনের মিষ্টি কিনতে খরচ হবে ৩০০ টাকার কাছাকাছি।
হার্ড রক ক্যাফে
বাড়িতে নয়, রং খেলার সন্ধ্যা বন্ধুদের সঙ্গে অন্য কোথাও আড্ডা দেওয়ার কথা ভাবছেন? সেক্ষেত্রে আপনার পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে এই ক্যাফে। দোলের সন্ধ্যায় এখানে এলে আপনার পাতে নতুন কী কী পদ পড়তে পারে? মেজ়ে প্লেটার, কাসুন্দি ভেটকি ফিশ, সার্ফ অ্যান্ড টার্ফ বার্গার, স্পাইসি চিকেন ড্রামস্টিক, কর্ন মশালা টিক্কা, সুইস মাশরুম বার্গার, চিকেন এনচিলাদা, চার-গ্রিলড কোয়েসাডিল্লা। এ ছাড়াও থাকছে প্যাশন ফ্রুট মাই তাই, রিদম্ অ্যান্ড রোজ মুলের মতো বিশেষ কিছু ককটেল। দু’জনের জন্য অ্যালকোহল সহ এখানে খাওয়াদাওয়ার খরচ পড়বে প্রায় ২৫০০ টাকা।
পাপরিকা গমের বিশেষ পান। ছবি: সংগৃহীত।
বার্মা বার্মা
রঙিন হওয়ার উদ্যাপনে পাতেও চাই নতুনত্ব। শেষ পাতে মিষ্টি মুখ করতে পারেন এই দোকানের খাবার দিয়ে। হোলির জন্য বিশেষ কিছু মিষ্টি হিসাবে থাকছে স্যাফরন অ্যান্ড সামুজ়া চিজ় কেক, রঙ্গুন বেকড মিল্ক, কাফির লাইম কুলার, বার্মেসে ব্লুজম। দু’জনের জন্য মিষ্টি কিনতে চাইলে খরচ পড়বে প্রায় ১৮০০ টাকার কাছাকাছি।
ফ্যাব্রিকা
এই হোলি জমে উঠুক ইতালিয়ান খাবারের স্বাদে। চলে যেতে পারেন শহরের অন্যতম এই ইতালিয়ান রেস্তরাঁয়। দোলের বিশেষ মেনু হিসাবে থাকছে মার্গারিটা কন বাফেলা, রিগাতোনি অ্যারাবিয়াতা পাস্তা, স্প্যাগেটি কার্বোনারা, পোল্লো পুত্তানেসকা। এ ছাড়া মিষ্টিমুখের জন্য থাকছে তিরামিসু ফ্যাব্রিকা, বুদিনো সিয়োক্কোলাতো। ককটেলের মধ্যে থাকছে অ্যাপেরল স্পিরিটজ়, ক্যামপারি স্পিরিটজ়, ফ্র্যাগোলা স্পিরিটজ়। দু’জনের জন্য খরচ পড়বে ২৫০০ টাকার কাছাকাছি।
বলরাম মল্লিক এবং রাধারমণ মল্লিকের সরের নাড়ু। ছবি: সংগৃহীত।
জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট
রঙের দিন পাঁচতারা কোনও হোটেলে সপরিবার খেতে যাবেন? তাহলে যেতে পারেন এখানে। দোলের জন্য প্রতি বারের মতো এ বারেও থাকছে বিশেষ বুফের ব্যবস্থা। তবে সেখানে থাকছে বাড়তি চমক। ফুচকা, চিজ় পাও ভাজি, কাফির লাইম ক্রিসপি ফিশ, তেরিইয়াকি, চিকেন বিরিয়ানি, কালি ডাল— রঙ খেলার ভূরিভোজ জমে যেতে বাধ্য। আর শেষ পাতে থাকঠে মালপোয়া, সীতাভোগ, হট চকোলেট মাড পাই, ছানার জিলিপি, স্টিক আইস ক্রিম, মিষ্টি দই। এখানে একজনের বুফের খরচ শুরু হচ্ছে ২৭৯৯ টাকা থেকে।
ফেয়ারফিল্ড
দোলের দিন সঙ্গীর সঙ্গে নৈশভোজে যাবেন? চোখ বন্ধ করে সঙ্গীর নিভৃত আলাপের জন্য বেছে নিতে পারেন এই রেস্তরাঁ। দোলের দিন সঙ্গীর সঙ্গে গল্পের ফাঁকে পাতে পড়তে পারে গুলাবি তাওয়া মছলি, গিলাফি কবাব, গুলাবি পনির মশালা, বাদামি বিরিয়ানির মতো বিশেষ কিছু পদ। আর শেষ পাতে থাকছে বেকড বোঁদে এবং শাহি টুকরা।
দ্য ওয়েস্টিন
বসন্তের রঙিন সন্ধ্যায় রাতের খাওয়া সারতে সঙ্গীকে নিয়ে চলে আসতে পারেন এখানে। দোলের বিশেষ মেনু দেখলে অবাক হবেন। কী নেই সেই তালিকায়! ট্যাংরা স্টাইল চিলি মাশরুম, ক্রিম অফ অ্যাসপ্যারাগাস স্যুপ, হার্ব রোস্টেড পার্পেল পটেটোজ়, মাশরুম অ্যান্ড রেড স্পিনাচ, চিকেন মাঞ্চরিয়ান, মুগলাই শাহি পনির, কলকাতা মাটন বিরিয়ানি, ক্যাফে লাইম চিজ়কেক, রেড ভেলভেট ডিলাইট। শেষ পাতেও থাকছে চমক। গুজিয়া, চিজ়কেক, মালপোয়া উইথ রাবড়িতে মন ভরে যাবে।
জে ডব্লিউ ম্যারিয়টের বিশেষ পদ। ছবি: সংগৃহীত।
চারকোল বাই ওয়াইজ আউল
দোলের দিন অন্য স্বাদের খাবার খেতে পৌঁছে যেতে পারেন এই রেস্তরাঁয়। দোলের বিশেষ চমক হিসাবে মেনুতে থাকছে রাজমা গালৌটি, তন্দুরি মোতিয়া, সিকান্দারি মুর্গ, পেশওয়ারি বুরাহ, মাটন গালৌটি উইথ মিনি পরাঠাস, আওয়াধি মুর্গ মালাই, দম বিরিয়ানি। মিষ্টির পদে থাকছে বেকড মিহিদানা, মালাই চিজকেক, কেশর মালাই ব্রেস্ট। দু’জনের খাওয়াদাওয়ার খরচ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।
ক্যান্টিন পাব অ্যান্ড গ্রাব
দোল উপলক্ষে এই রেস্তরাঁ নিয়ে এসেছে নতুন স্বাদের বাহারি সব খাবার। কী কী থাকছে হোলির বিশেষ মেনুতে? পুরাণ পলি উইথ গঙ্গুরা মাটন, নাতু কোদি পুলুসু ড্রাই, মুর্গ পানিপুরি খাঁকরা,চিকেন গুজিয়া, পালং তর সামোসা, গোলগাপ্পা গুবারার মতো নতুন স্বাদের হরেক রকম খাবার। দু’জনের জন্য খরচ পড়বে ১৫০০ টাকার কাছাকাছি।
ট্র্যাফিক গ্যাসট্রো পাব
দোলের দিন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর বিশেষ পরিকল্পনা থাকলে চলে যেতে পারেন এই পাবে। দেদার আড্ডা দেওয়ার পাশাপাশি নানা স্বাদের খাবার চেখে দেখতেও পারেন। খাট্টা মিঠা ফিশ বোটি, দেশি চিকেন পপস্, কিমা পাঁপড় রোল, সিগন্যাল কা সিমলা মির্চের মতো বাহারি স্বাদের খাবার। মিষ্টির পদে থাকছে ফ্রুটস কি রঙ্গোলি, দিল কি ঠান্ডাইয়ের মতো নানা মিষ্টি। দু’জনের খাওয়ার খরচ প়়ড়বে প্রায় ১২০০ টাকার মতো।