Spice Adulteration

রোজের রান্নার মশলা খাঁটি তো? ভিডিয়ো দেখিয়ে ভেজাল পরীক্ষার সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে দিল জাতীয় খাদ্যগুণ নির্ণায়ক সংস্থা

মশলাপাতিতে এমন সব রাসায়নিক, কৃত্রিম রং মেশানো হচ্ছে, যা নিয়মিত পেটে গেলে বিভিন্ন রকম জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়বে। কৃত্রিম রং তো ক্যানসারেরও কারণ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ১৪:০৬
Share:

রান্নার মশলায় ভেজাল আছে কি না, ধরবেন কী ভাবে, জেনে নিন পদ্ধতি। ছবি: ফ্রিপিক।

মাখন-পাউরুটির উপর যে গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়াচ্ছেন, তা খাঁটি তো? ভাবলেন সর্ষে দিয়ে পারশে মাছের ঝাল রাঁধবেন। যে সর্ষে কিনে এনেছেন তাতে যে ভেজাল মেশানো নেই, তা বুঝবেন কী ভাবে? আটা-ময়দা থেকে চা-কফি, সব্জি থেকে দুধ, এমনকি মশলাপাতি— প্রায় সবেতেই ভেজালের রমরমা। হেঁশেলে রোজ যে মশলাগুলি কাজে লাগে, যেমন হলুদ গুঁড়ো, ধনে-জিরে গুঁড়ো বা কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, তার সবক’টি খাঁটি কি না তা বোঝার উপায় নেই। আবার ধরুন যে চিনি রোজ খাচ্ছেন, তাতেও কতটা ভেজাল মেশানো হচ্ছে তা জানলে চমকেই উঠবেন। এমন সব রাসায়নিক, কৃত্রিম রং মেশানো হয় মশলাপাতিতে যা নিয়মিত পেটে গেলে বিভিন্ন রকম জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়বে। কৃত্রিম রং তো ক্যানসারেরও কারণ।

Advertisement

তাই চলুন জেনে নিই কী ভাবে রোজের মশলাপাতিতে ভেজাল পরীক্ষা করে নেবেন নিজেই। সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)।

সর্ষে

Advertisement

সর্ষের সঙ্গে অনেক সময়েই মিশিয়ে দেওয়া হয় আর্জেমন বীজ বা শিয়ালকাঁটা। এফএসএসএআই জানাচ্ছে, সর্ষেতে শিয়ালকাঁটার বীজ আছে কি না তা ধরতে পারবেন আপনিও। একটি কাচের প্লেটে বাজার থেকে কিনে আনা সর্ষে ঢালুন। এ বার হাত দিয়ে ভাল করে বেছে দেখুন কালো সর্ষের মধ্যে এমন কিছু দানা আছে যেগুলি খসখসে। সর্ষে দানা সাধারণত বেশি মসৃণ হয়। কিন্তু শিয়ালকাঁটার বীজ মোটা ও খসখসে হয়। এই বীজ ভাঙলে ভিতরটা সর্ষের মতো হলুদ নয়, বরং সাদা। বোঝার সুবিধার জন্য সঙ্গের ভিডিয়োটি দেখে নিন।

সর্ষেতে কী মেশানো হচ্ছে?

গোটা জিরে

রান্নায় ফোড়ন দিতে গোটা জিরে লাগেই। বাজার থেকে গোটা জিরে খোলা বা প্যাকেটে কিনে আনছেন। সেই জিরেতেও কিন্তু মেশানো হচ্ছে ভেজাল। এফএসএসএআই জিরেতে ভেজাল ধরার সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছে। কী করবেন? খানিকটা জিরে হাতের তালুতে নিন। এ বার বেশ করে হাতে ঘষুন। যদি দেখেন জিরের রঙে কোনও বদল হয়নি, তা হলে বুঝতে হবে ভেজাল নেই। কিন্তু যদি হাতে কালো দাগ হয়ে যায়, বুঝতে হবে তাতে ঘাসের দানা মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। বোঝার সুবিধার জন্য সঙ্গের ভিডিয়োটি দেখে নিন।

গোটা জিরে খাঁটি কি না যাচাই করবেন কী করে।

গোটা গোলমরিচ

গোটা গোলমরিচে কত যে ভেজাল মেশানো হয় তার ইয়ত্তা নেই। গোলমরিচের দাম বেশি। পয়সা দিয়ে যা কিনে আনছেন, তা খাঁটি কি না দেখে নেবেন না! একটি প্লেটে গোটা গোলমরিচের কয়েকটি দানা নিন। এবার আঙুল দিয়ে টিপে ভাঙার চেষ্টা করুন। খাঁটি মরিচের দানা ভাঙবেই না। কিন্তু গোলমরিচের মধ্যে যদি শুকনো ব্ল্যাকবেরি মিশিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে কেবল সেগুলিই ভেঙে যাবে। বোঝার সুবিধার জন্য সঙ্গের ভিডিয়োটি দেখে নিন।

গোলমরিচে কী মেশানো হচ্ছে জেনে নিন।

হলুদ ও লঙ্কার গুঁড়ো

হলুদ ও লঙ্কার গুঁড়োতে দেদার কৃত্রিম রং মেশানো হচ্ছে। এফএসএসএআই জানাচ্ছে, একটি গ্লাসে এক চামচ লাল লঙ্কার গুঁড়ো দিন। খাঁটি হলে লঙ্কার গুঁড়ো জলের উপরেই ভেসে থাকবে কিছু ক্ষণ, তার পরে জলের তলায় গিয়ে জমা হবে, জলের রং লাল হবে না। কিন্তু ভেজাল লঙ্কার গুঁড়ো জলে মিশলেই রং ছাড়তে শুরু করবে। দেখবেন, গোটা গ্লাসের জলই টকটকে লাল হয়ে যাবে।

লঙ্কার গুঁড়ো খাঁটি কি না ধরবেন কী করে?

হলুদ গুঁড়োতে ভেজাল আছে কি না, একই ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এক গ্লাস জলে এক চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে দেখুন জলের রং হলুদ হয়ে যাচ্ছে কি না। খাঁটি মশলা জলের নীচে গিয়ে জমা হবে। বোঝার সুবিধার জন্য সঙ্গের ভিডিয়োটি দেখে নিন।

কৃত্রিম রং মিশছে হলুদে।

লবঙ্গ

লবঙ্গতেও ভেজাল? একটি গ্লাসে জল নিয়ে কিনে আনা লবঙ্গগুলি ফেলুন। খাঁটি হলে জলের নীচে গিয়ে জমা হবে। আর ভেজাল মেশানো থাকলে সেগুলি জলের উপরে ভেসে উঠবে। বোঝার সুবিধার জন্য সঙ্গের ভিডিয়োটি দেখে নিন।

লবঙ্গ খাঁটি তো?

দারচিনি

বাজার থেকে যে দারচিনি কিনছেন তার সবটাই কিন্তু খাঁটি না-ও হতে পারে। দারচিনি গাছের ছালের বদলে অন্য গাছের ছাল মিশিয়ে দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রেই। দেখবেন, খাঁটি দারচিনি খুব নরম, হাত দিয়ে চাপ দিলেই ভেঙে যাবে আর সুন্দর গন্ধও রয়েছে। ভেজাল দারচিনি এতটাই শক্ত যে চাপ দিলেও ভাঙবে না। বোঝার সুবিধার জন্য সঙ্গের ভিডিয়োটি দেখে নিন।

দারচিনি আসল না নকল, বুঝবেন কী ভাবে।

নুন ও চিনি

রোজ কী নুন আর চিনি খাচ্ছেন, তা একবার নিজেই যাচাই করে নিন। আজকাল নুন ও চিনিতে চকের গুঁড়ো মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এক গ্লাস জলে এক চামচ নুন ফেলে ভাল করে চামচ দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন। যদি নুন খাঁটি হয়, তা হলে জলে সুন্দর ভাবে মিশে যাবে। আর যদি ভেজাল হয়, তা হলে জল ঘোলা হয়ে যাবে। গ্লাসের তলায় চকের গুঁড়ো পড়ে থাকবে। চিনির ক্ষেত্রেও একই রকম পরীক্ষা হবে। খাঁটি চিনি জলে মিশে যাবে। আর ভেজাল হলে চিনিতে মেশানো চকের গুঁড়ো, ময়লা জলের নীচে গিয়ে জমা হবে। বোঝার সুবিধার জন্য সঙ্গের ভিডিয়োটি দেখে নিন।

চিনিতে মিশছে ভেজাল।

নুনে মিশছে চকের গুঁড়ো।

হিং

এক গ্লাস জলে হাফ চামচ হিং ফেলুন। এ বার সেই জলে দুই থেকে তিন ফোঁটা আয়োডিন দিন। যদি জলের রং নীল হয়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে হিংয়ের মধ্যে স্টার্চ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। খাঁটি হিং হলে রঙের কোনও বদল হবে না। বোঝার সুবিধার জন্য সঙ্গের ভিডিয়োটি দেখে নিন।

হিংয়ে মিশছে ভেজাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement