জগন্নাথদেবের পছন্দের ৫৬ ভোগ। —ফাইল চিত্র।
জগন্নাথদেব ভোজনরসিক। তিনি খেতে ভালবাসেন। পুরীর মন্দিরে তিনি রোজ আহার করেন, এমনই বিশ্বাস। নিয়ম-নীতি-নিষ্ঠা মেনেই সেই ভোগ নিবেদন করা হয়। রথের দিন সেই আয়োজন হয় আরও এলাহি। রথযাত্রার সাত দিন ধরে নিষ্ঠা সহকারে ৫৬ রকম ভোগ নিবেদন করা হয় জগন্নাথকে। একই রকমের ভোগ নিবেদন করা হয় বলরাম, সুভদ্রাকেও। সকাল থেকে রাত, প্রহরে প্রহরে হয় ভোগ নিবেদন।
সকালে জগন্নাথদেব ঘুম থেকে উঠে, দাঁত মেজে তৈরি হয়ে ঝটপট একটু খিচুড়ি খেয়ে রথে ওঠেন। বলরাম, সুভদ্রা, জগন্নাথদেবের রথারোহণ বা ‘পহুন্ডি বিজে’ শুরু হয় সকাল সকালেই। সাধারণ দিনে সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে জগন্নাথকে প্রথম ভোগ নিবেদন করা হয়, যাকে বলে ‘গোপাল বল্লভা ভোগ’। সকাল ১০টায় দেওয়া হয় ‘সকালা ধূপা’। এই সময়ের ভোগকে রাজভোগও বলা হয়। সাজিয়ে- গুছিয়ে পরিবেশন করা হয় ২০ রকমের পদ। যেগুলির মধ্যে থাকে পিঠে-পুলি, মাঠা পুলি, দহি, অন্ন, হামসা কেলি, বড়া কান্তি, কাকাতুয়া খিচুড়ি, কণিকা ইত্যাদি।
মন্দিরের রান্নাঘরে সারা দিনই দেবতার পছন্দের হরেক রকমের রান্না হয়। মূলত দু'ধরনের ভোগ তৈরি হয়। এক দিকে ভাত, ডাল, তরিতরকারি, পায়েস, ক্ষীর। অন্য দিকে মুড়ি, মুড়কি, খই ও নানা ধরনের শুকনো মিষ্টি ও মালপোয়া। জগন্নাথের পছন্দের ৫৬ ভোগে থাকে পাঁচ রকমের ভাত, পাঁচ রকমের ডাল, শুক্তো, বিভিন্ন রকম সব্জি দিয়ে তরকারি, বেগুনের মরিচপানি, নারকেল বাটা দিয়ে হরেক রকম চাটনি। পরমান্নও থাকে কয়েক রকমের।
সকাল সকাল খিচুড়ি খেয়ে রথে ওঠেন শ্রীজগন্নাথ। —ফাইল চিত্র।
পুরীর মন্দিরে তো বটেই, ইসকন, মাহেশ-সহ যে সব জায়গায় রথযাত্রা পালন করা হয়, সর্বত্রই ছাপ্পান্ন ভোগ রেঁধে অর্পণ করা হয় দেবতাকে। ভোগে কী কী পদ থাকে, তা নিয়ে কৌতূহলও রয়েছে সকলের। তেমনই কয়েকটি বিশেষ খাবারের কথা তুলে ধরা হল।
ডালমা
ডাল ও বিভিন্ন সব্জি দিয়ে তৈরি জগন্নাথের খুব প্রিয় একটি খাবার হল ডালমা। অড়হর ডাল, ছোলার ডাল ভাল করে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। সব্জিও লাগে হরেক রকম। পটল, কুমড়ো, বেগুন, কাঁচাকলা, মুলো ও কচুই মূলত ব্যবহার করা হয় মন্দিরের ভোগে। মশলার জন্য লাগে গোটা জিরে, গোটা ধনে, গোলমরিচ, মেথি দানা, লবঙ্গ, দারচিনি, বড় এলাচ, মৌরি এবং তেজপাতা। জগন্নাথের ভোগ রান্নায় চিনির ব্যবহার হয় না। সবেতেই গুড় দেওয়া হয়। আর থাকে নারকেল কোরা।
বেসর
পুরীর মন্দিরে দুপুরের ভোগে থাকে বেসর। এই পদটিও নাকি জগন্নাথের খুবই প্রিয়। বরবটি, কুমড়ো, কাঁচকলা, রাঙাআলু, পটল দিয়ে বানানো হয় এই পদটি। আর মশলা হিসেবে দেওয়া হয় সর্ষে, পাঁচফোড়ন, গোলমরিচ, নারকেল কোরা, জিরে গুঁড়ো আর বড়ি। লঙ্কা যে হেতু রান্নায় ব্যবহার করা হয় না, তাই বেশির ভাগ ভোগ রান্নাতেই আদা ব্যবহার হয়।
রসাবলি
ছানা দিয়ে মালপোয়ার মতো বানানো হয় রসাবলি। তার পর তেলে ভেজে কেশর দুধে ভেজানো হয়। নরম হয়ে এলে উপর থেকে পেস্তা, কাজু, কিশমিশ ছড়িয়ে তৈরি করা হয় জগন্নাথের প্রিয় রসাবলি।