রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫
Share:

সত্যিই কি পৃথিবীর শেষ দিন উপস্থিত? এমনটাই আশঙ্কা বৈজ্ঞানিক মহলে। এ বারও সন্দেহের তির ভারতবর্ষের দিকে। রোবট পুলিশ ওয়াইওয়াইথ্রিথ্রিএইটবি-টু-এর পাঠানো স্যাটেলাইট তথ্য জানিয়েছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর ভারতের একটি শহরে দুই যুবক-যুবতীকে প্রেমালাপ করতে শোনা গেছে। যুবতীটি যুবকটির কাঁধে মাথা রেখে বসেছিল কৃত্রিম ঘাসে ঢাকা ঝুলন্ত পার্কে। এই বিশেষ রোবো-পুলিশটির ডেটা-কার্ড’এ ধরা পড়েছে, ছেলেটি মেয়েটিকে ভালবেসে সারা জীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেয়েটির চোখের জল গড়িয়ে ঘাসে পড়ার শব্দও ধরা পড়েছে। মনে থাকতে পারে, ঠিক পাঁচ মাস আগে দক্ষিণ ভারতের এক গ্রামে একটি চার বছরের অসুস্থ শিশুকে আদর করে চুমো খেতে দেখা গিয়েছিল এক মহিলাকে। সেই ছবি দেখেও সারা বিশ্ব আঁতকে উঠেছিল। অথচ, ৩২৩২ এর ২৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বৈজ্ঞানিকদের দাবি ছিল, পৃথিবী থেকে ‘ভালবাসা’ ভাইরাসজাত আবেগ-ব্যাধিগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা গিয়েছে। তাঁরা ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখটির নতুন নাম দেন— বিশ্ব অপ্রেম দিবস। সম্মেলনে, ভালবাসা সংক্রামিত করতে পারে এমন সাহিত্য-সংগীত-চারুশিল্প-স্থাপত্য নষ্ট করে ফেলার কর্মসূচি নেওয়া হয়। এত সাবধানতা সত্ত্বেও কয়েক মাসের ব্যবধানে ভারতে ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনায় বৈজ্ঞানিক মহল নড়েচড়ে বসেছে। প্রাচীন যুগ থেকেই বিশ্বে ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভারত নিন্দিত। তার ওপরে এমন ঘটনা ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে কোণঠাসা করে দিয়েছে। যদিও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে দুঃখপ্রকাশ করে সব রকম সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে। তবে, রাষ্ট্রপুঞ্জ তাতে স্বস্তি পায়নি, বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকেরা বলেছেন, পৃথিবীর কোথাও যদি ভালবাসার একটি ভাইরাসও থেকে যায় তবে অবিলম্বে আবেগের মহামারী উপস্থিত হবে। তখন পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

Advertisement

সঞ্জয় কুমার শীল, বেলগাছিয়া, কলকাতা

Advertisement

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা: টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

বাংলা নাটক তখন সুজলা সুফলা

বিভাস চক্রবর্তী

গত শতকের ষাটের দশক— সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা বঙ্গনাট্য! ওই সময়টাতেই তো আমাদের মতো নাট্যকর্মীর বেড়ে ওঠা। ওই সময়ের জলহাওয়ায় বুকভরা শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা, চারপাশের জগৎটাকে অনুভব করা, আর সবার অজান্তে আড়ালে নিজেই নিজের হাতেখড়ি দেওয়া! তখন নাটক নিয়ে এলোমেলো পড়াশোনা। অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে প্রায় অন্ধের মতো, এ বার কোনও গুরুর হাত ধরে ঠিকঠাক পথ চেনার চেষ্টা করতে হবে। সেই উচ্চাশা নিয়েই ১৯৬১-র প্রথম দিকে এক দিন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রবেশ করলাম ‘বহুরূপী’তে, শম্ভু মিত্রের প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণে নাট্যনির্মাণশিল্প শিখতে।

আমাদের সামনে তখন প্রেরণা দুই মহীরূহ, শম্ভু মিত্র ও উৎপল দত্ত। ১৯৪৮-এ, একই বছরে জন্ম ‘বহুরূপী’ আর ‘লিট্ল থিয়েটার গ্রুপ’-এর। এক একটি আশ্রম যেন। দৈনন্দিন জীবন-জীবিকার গ্লানি উপেক্ষা করে কতকগুলো প্রাণ একত্র হয়েছে এমন এক শিল্পসৃষ্টির ব্রতে, যা মানুষের কথা বলবে, বর্জন করবে জীর্ণ প্রাচীনতা আর লঘু বিনোদনকে, ঐতিহ্যকে অস্বীকার না করেও আবাহন করবে আধুনিকতাকে।

’৬১-র মার্চ থেকে ‘বহুরূপী’কে ভেতর থেকে দেখা, মাত্র মাসছয়েক। রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তখন তাঁদের সদ্য-প্রযোজনা, ‘বিসর্জন’। ‘বিসর্জন’ আমার যুবক-বয়সের মন ভরাতে পারল না। ’৬৪-তে বিস্ফোরণ, ‘রাজা’ আর ‘অয়দিপাউস’। এই সময়টাতে রবীন্দ্র-নাটকের মঞ্চায়ন-যোগ্যতা নিয়ে সমস্ত বিতর্ক আর সংশয় উড়িয়ে দিলেন শম্ভু মিত্র। বিশ্বের নাট্য-ইতিহাসে তাঁর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার রবীন্দ্রনাথ, এক যুগ সময়কালের মধ্যে পাঁচ পাঁচটা রবীন্দ্র-নাটক! তার সঙ্গে বিশ্বনাট্যের সোফোক্লেস আর ইবসেন। পরবর্তীতে দুই আধুনিক ভারতীয়— বিজয় তেন্ডুলকর ও বাদল সরকার। সাধারণ রঙ্গালয়ের পেশাদার থিয়েটার থেকে গণনাট্য সংঘ হয়ে নতুন নাটকের দিকে শম্ভু মিত্রের যাত্রা— ‘বহুরূপী’র প্রতিষ্ঠা— বাংলা থিয়েটারে নতুন পর্বের সূচনা।

একটু দূর থেকে, ভয়মিশ্রিত সম্ভ্রম নিয়ে দেখতাম উৎপল দত্তকে। আঠারো-উনিশ বছর বয়স থেকে সাহেবদের কাছে নাটক শিখেছেন, শেক্সপিয়র থেকে মলিয়ের, গোগোল, বার্নার্ড শ-র নাটক নিয়ে কাজ করেছেন! মিনার্ভা পর্বের সূচনায় তাঁঁর ‘ছায়ানট’ চলল না। আবার তার পরই রমরমিয়ে চলল ‘অঙ্গার’। ১৯৬১-র ‘ফেরারী ফৌজ’ থেকে গড়গড়িয়ে চলল মিনার্ভা— ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘কল্লোল’, ‘অজেয় ভিয়েতনাম’, ‘তীর’, ‘মানুষের অধিকারে’, ‘যুদ্ধং দেহি’, ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ’। তা ছাড়াও অসংখ্য ছোট ছোট দেশি-বিদেশি নাটক, পথনাটক। শম্ভু মিত্র যদি হন রবীন্দ্রনাট্যের অগ্রপথিক, তবে উৎপল দত্তকে বলা যেতে পারে আধুনিক রাজনৈতিক থিয়েটারের স্রষ্টা, যদিও নিজের পরিচয় দিতেন শুধু এক জন ‘প্রচারক’ হিসেবে। তিনি বাংলা থিয়েটারে শেক্সপিয়র-চর্চার ক্ষেত্রে এক প্রতিভাবান শিল্পী। ’৬৪-তে শেক্সপিয়রের চারশততম জন্মবর্ষে মিনার্ভায় একের পর এক দেখলাম ‘জুলিয়াস সিজার’, ‘রোমিও জুলিয়েট’, ‘ওথেলো’, আর ‘চৈতালী রাতের স্বপ্ন’।

‘বহুরূপী’তে অল্প কালের শিক্ষানবিশির পর, ’৬৩-তে, আমার থিয়েটারের তরী এসে ভিড়ল ‘নান্দীকার’-এর ঘাটে। বছরখানেক আগে মুক্ত অঙ্গনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নাট্যকারের সন্ধানে ছ’টি চরিত্র’ দেখে আচ্ছন্ন ছিলাম। সেই তাঁর কাছ থেকেই ডাক পেলাম, ওই নাটকেই নিয়মিত অভিনয়ের জন্য! এক নতুন প্রতিভার কাছে হাতেকলমে নাট্যনির্মাণের খুঁটিনাটি শেখার সুযোগ— ‘মঞ্জরী আমের মঞ্জরী’ আর ‘যখন একা’ প্রযোজনায়। দেখলাম দুই মহীরূহের মাঝখানটায় এসে দাঁড়িয়েছেন আর এক বিশাল নবীন বৃক্ষ। এর পর আমার নাটকজীবনে এল আর এক উল্লেখযোগ্য বাঁক। ১৯৬৬-তে নান্দীকার ছেড়ে দিয়ে নতুন এক দলের পত্তন— ‘থিয়েটার ওয়ার্কশপ’। এখানেই পরের দু’দশক কাজ করে গেছি।

নান্দীকারের বছর তিনেক আগে, ‘গন্ধর্ব’ দলে, নির্দেশক শ্যামল ঘোষ বহু নবীন-প্রবীণ অভিনেতা ও নাট্যকার নিয়ে এক নতুন তরঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন। মন্মথ রায়, ঋত্বিক ঘটক, অমর গঙ্গোপাধ্যায়, অজিত গঙ্গোপাধ্যায়, মনোজ মিত্র, কৃষ্ণ ধর, গিরিশংকর, চিত্তরঞ্জন ঘোষ... অভিনেত্রীদের মধ্যে রেবা দেবী, কল্যাণী দেবী, দীপিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপ্না চক্রবর্তী, রমা গঙ্গোপাধ্যায়, কাজল চৌধুরী, মমতা চট্টোপাধ্যায়... শ্যামলবাবু আবার গড়লেন ‘নক্ষত্র’। এই সময়ের নাটক-কথায় কোনও ভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না ‘থিয়েটার সেন্টার’ ও তরুণ রায়কে। ‘ধনঞ্জয় বৈরাগী’ ছদ্মনামে নাটক রচনা করে তিনি সেগুলো মঞ্চায়িত করতেন নিজের বাড়িতেই তৈরি ছোট্ট একটা স্টেজে। তার বাইরেও নানা মঞ্চে অভিনীত হত তাঁর নাটক। কলকাতার হিন্দি থিয়েটারের মধ্যমণি ও পুরোধা পুরুষ ছিলেন শ্যামানন্দ জালান। ‘অনামিকা’ নাট্যসংস্থায় কাজ করতেন প্রতিভা অগ্রবালের সঙ্গে, বেরিয়ে পরে তৈরি করলেন ‘পদাতিক’। আর রাসবিহারীর মোড়ে ‘মুক্ত অঙ্গন’ ছিল আমাদের দুখিনী গ্রুপ থিয়েটারের আঁতুড়ঘর। সেখানে নাটক করতেন ‘রূপকার’-এর সবিতাব্রত দত্ত, ‘চতুরঙ্গ’র বরুণ দাশগুপ্ত, ‘চতুর্মুখ’-এর অসীম চক্রবর্তী, ‘কোমল গান্ধার’-এর অসিত মুখোপাধ্যায়, আর কাউন্সিল টিম ‘শৌভনিক’। ষাটের দশকেই আবির্ভাব ও প্রতিষ্ঠা আমাদের সময়ের তিন শ্রেষ্ঠ নাটককারের— মনোজ মিত্র, মোহিত চট্টোপাধ্যায়, এবং বাদল সরকার। ‘সুন্দরম’, ‘গন্ধর্ব’, ‘ঋতায়ন’-এর মতো দলের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্দেশক-অভিনেতা রূপে মনোজের কাজ করে যাওয়া, পরে ফিরে যাওয়া ‘সুন্দরম’-এই। নাটককার-নির্দেশক বাদলবাবু ১৯৬৮-তে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘শতাব্দী’ নাট্যগোষ্ঠী। প্রোসেনিয়াম মঞ্চ ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকের ‘থার্ড থিয়েটার’ নিয়ে তাঁর পথ চলা... তত দিনে ষাটের দশক গড়িয়ে গেছে সত্তরে।

krishnamoon@gmail.com

ষাটের দশকের কোনও ঘটনার সঙ্গে নাড়ির যোগ আছে?

লিখুন এই ঠিকানায়: হ্যালো 60s, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। বা, লেখা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement