আউউউ ললিতা! তিরিশ বছর পরেও অবিকল রয়েছে বলিউডি ‘ব্যাড বয়’-এর এই সিগনেচার টিউন। পরদায় তো বটেই, পরদা ফাঁসেও তাই তিনি সমান মুখরোচক। শক্তি কপূর। তাঁর ভিলেনগিরি কি শুধুই ফিল্মে, না কি ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি দুষ্টু লোক? এক বার নয়, এই অগ্নিপরীক্ষায় তাঁকে বার বার বসতে হয়েছে, আর প্রত্যেক বারই মিডিয়ার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে কেচ্ছা-গসিপের জন্ম দিয়েছেন শক্তি।
ন-দশ বছর আগের কথা। এক আইরিশ মহিলা সাংবাদিক শক্তি কপূরের ইন্টারভিউ নিতে চাইলেন সে দেশেরই একটি সংবাদপত্রের জন্য। মুম্বইয়ের এক কফি শপে শক্তির সঙ্গে দেখা করলেন সেই সাংবাদিক। শুরু হল সাক্ষাৎকার। বিষয়: সেক্স। কথায় কথা বাড়তে থাকল, আর নিজেকেও ক্রমশ মেলে দিতে থাকলেন শক্তি। কিছু ক্ষণ কথা চলার পরেই ওই মহিলা নাকি তাঁকে বলেন, তিনি যেনতেনপ্রকারেণ মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখতে চান, তার জন্য যত দূর যেতে হয়, তিনি রাজি। ব্যস, ওই একটিমাত্র সিগনালেই যাবতীয় আগল খুলে হাত বাড়ালেন শক্তি! বিসদৃশ ভঙ্গিতে ঘনিষ্ঠ হাত রাখলেন সেই সাংবাদিকের কাঁধে।
ঠিক সেই মাখোমাখো চূড়ান্ত মুহূর্তে আশেপাশে উল্লাস উঠল দমফাটা হাসির, আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন কয়েক জন টেলিভিশন ক্রু। শক্তি ভ্যাবাচ্যাকা! গোটাটাই যে সাজানো! এত ক্ষণ তিনি যা বলেছেন, যা যা করেছেন, সব কিছুই রেকর্ড হয়েছে ক্যামেরায়। ইন্টারভিউ-ফিন্টারভিউ সব ফালতু, একটি টিভি চ্যানেলের রিয়েল লাইফ কমেডি শো ছাড়া এ আর কিছুই নয়। নির্ভেজাল ‘বকরা’ বনে গিয়ে তাঁর কান তখন ঝাঁ ঝাঁ করছে। এই প্র্যাকটিকাল জোক শক্তি মেনে নিতে পারেননি। কারণ, প্রবৃত্তির যেটুকু প্রকাশ তিনি করেছেন, সেটুকু প্রকাশিত হলেই তাঁর ঢের ঝঞ্ঝাট ছিল। অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেটে তিনি সই তো করেনইনি, উলটে, এটি দেখানো হলে বিশ কোটি টাকার মামলা করার হুমকিও নাকি দিয়েছিলেন!
কিছু দিন পর, আবার ঝামেলা। এ বার দেশ জুড়ে আম আদমি ও সেলেব্রিটিদের ছিছিক্কার ডেসিবেলের সীমা ভেঙে দিল। সেটা ১৩ মার্চ, ২০০৫। একটি সর্বভারতীয় বেসরকারি নিউজ চ্যানেল শক্তি কপূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনল, ‘কাস্টিং কাউচ’-এর সঙ্গে জড়িত থাকার। শুধুই শুকনো খবর নয়, স্টিং অপারেশনের গরম ভিডিয়ো দিয়ে তারা মুড়ে দিল প্রাইম টাইম।
স্পাইক্যামের জ্যালজেলে ফুটেজে শক্তি কপূর আর উঠতি অভিনেত্রীর ছদ্মবেশে এক তরুণী রিপোর্টার। হোটেলের ঘরে বসে শক্তি তখন পার্ট পাওয়ার সহজ পাঠ শেখাচ্ছেন। অশালীন প্রস্তাব দিচ্ছেন। এমনকী ইন্ডাস্ট্রির কোড ল্যাংগোয়েজে এই ‘কো-অপারেট’ করাকে, শরীরের বিনিময়ে কাস্টিং পাওয়াকে, বলিউডের বাজারে হামেশাই ঘটে চলা বিকিকিনি হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ বাঘা বাঘা পরিচালকের সঙ্গে অসম্ভব জনপ্রিয় সব নায়িকার ‘সম্পর্কের’ গল্পগাছা পেড়ে আনছেন। বেচারা শক্তি সে দিন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, এ সব ‘গন্দি বাত’ তিনি অন রেকর্ড বলছেন! যত ক্ষণে বুঝলেন, তত ক্ষণে প্রেস্টিজের যা দফারফা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে।
এই ব্রেকিং নিউজ চাউর হতেই বলিউড জুড়ে ছ্যা ছ্যা পড়ে গেল। তাঁর বাড়ি ঘিরে ‘হায় হায়’ ধ্বনি দিতে লাগল মুম্বইয়ের বিক্ষুব্ধ জনতা। ইন্ডাস্ট্রির দু-এক জন তাঁর পক্ষে দাঁড়ালেন বটে, কিন্তু গিল্ড তাঁকে সাময়িক ভাবে ব্যান করল। সুভাষ ঘাই, রানি মুখোপাধ্যায়রা সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন (কারণ তাঁদের নাম করেছিলেন শক্তি ওই কথাবার্তায়)। এরই মধ্যে লাগল রাজনৈতিক রং-ও। তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের সুসম্পর্কের ফায়দা নিতে এই কেচ্ছাকে নিয়ে হইচই করল বিজেপি। এ সব কাউন্টার করতে শক্তিও প্রথমে একটু চেঁচামেচি করলেন। পরে অবশ্য হাওয়া গড়বড় বুঝে ক্ষমা চাইতে আর দ্বিধা করেননি। তবে পালে বাতাস টানতে বলেছেন— সবই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত, ভিডিয়োয় কারচুপি করে তাঁকে বেমক্কা অপদস্থ করা। বিবিসি-র এক সাক্ষাৎকারে কাঁচুমাচু মুখ করে শক্তি স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁর পরিবারের কাছে এই ঘটনা ছিল বিরাট এক আঘাত। বলেছেন, মানসিক চাপে নাকি তাঁর হার্ট অ্যাটাক হতে পারত, তিনি আত্মহত্যাও করে ফেলতে পারতেন।
ম্যায় হুঁ নন্দু, সবকা বন্ধু! তা হলে, তাঁর পিছনেই কেন বার বার লাগে মিডিয়া? তিনি বোকা না বদমাইশ? কেন এতটাই চেনা টার্গেট তিনি, যে তাঁকেই বিগ বসের ঘরে বারো জন ‘লেডিস’ আর এক জন ট্রান্সজেন্ডারের সঙ্গে একমাত্র ‘জেন্ট’ হিসেবে পুরে দেওয়া হবে! বার বার তাঁকে প্রমাণ করতে হবে, আসলে তিনি ভিলেন নন, ভদ্রলোক।
susnatoc@gmail.com