প্রবন্ধ ৫

একটা ভয় কষ্ট [লজ্জা]

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়কোলা-ফ্লোট!!! এ অমৃত তারাই চেখেছে, যাদের টিন-এজ এর শেষ আর যৌবনের জাস্ট শুরু নব্বইয়ের দশকে আঁচ পোহাচ্ছিল। তাদের আগেও বা পরেও বহু লোক নিশ্চয়ই খেয়েছে। কিন্তু তখন কোল্ড-ড্রিংক’এর গ্লাসে এক দলা ভ্যানিলা আইসক্রিম মানে যৌবন ছলাত্‌ছল!

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০১:০০
Share:

কোলা-ফ্লোট!!! এ অমৃত তারাই চেখেছে, যাদের টিন-এজ এর শেষ আর যৌবনের জাস্ট শুরু নব্বইয়ের দশকে আঁচ পোহাচ্ছিল। তাদের আগেও বা পরেও বহু লোক নিশ্চয়ই খেয়েছে। কিন্তু তখন কোল্ড-ড্রিংক’এর গ্লাসে এক দলা ভ্যানিলা আইসক্রিম মানে যৌবন ছলাত্‌ছল!

Advertisement

এমন অমৃত সমান কোলা-ফ্লোট যে কাউকে জাস্ট নীলকণ্ঠ করে দিতে পারে, এ আমার চিন্তার গড়ের মাঠের ও-পারে ছিল। গল্পটা সাঁঝবেলা থেকে শুরু না করে বরং গনগনে দুপুর থেকে বলা যাক।

এক গরমের দুপুরে আমাদের এক বড়লোক বান্ধবীর বাড়ি হুট জমায়েত হল। তাদের ঝাড়লণ্ঠন থেকে বনেদিয়ানা টুপটাপ, সোনির লেটেস্ট মিউজিক সিস্টেম ঘরের কোণে ঝকঝক। ইয়াব্বড় ফ্রিজ, থরেবিথরে থাম্স আপ, গোল্ড স্পট সাজানো। হঠাত্‌ গেস্টদের যে কেউ কোলা-ফ্লোট খাওয়াতে পারে, এ তখন আমরা ভাবতেও পারি না। কাকিমা এসে হাসি-হাসি মুখে যেই জিজ্ঞেস করলেন আমরা কোলা-ফ্লোট খাব কি না, অমনি গঙ্গার ধারের কাচ লাগানো স্কুপ আইসক্রিম পার্লার ওদের ঘরে নেমে এল।

Advertisement

আমরা ছটফট করছি, কখন সে অমৃত আসবে আর আমরা ঢকাঢক সেবন। ইতিমধ্যে আমার বান্ধবীর আরও এক জন হেপ বান্ধবী এল, ওদের পাড়ার মেয়ে। সে যে আমাদের চেয়ে অনেকটাই উচ্চমার্গে ঘোরাঘুরি করে এ শুধু তার পেন্সিল হিল নয়, মিনি স্কার্টের লেংথ থেকেও আমরা বুঝেছিলাম। এসেই কাকিমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ও মা, কোলা-ফ্লোট বানাচ্ছ? আমারটায় কিন্তু শুধু থাম্স-আপ দিলে হবে না, সঙ্গে লিমকা পাঞ্চ করে দিয়ো।’ বলেই সে আমাদের সঙ্গে বসল বটে, কিন্তু একটি ইংরেজি ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে লাগল এমন করে, যেন এদের তো কোনও ক্লাসই নেই, কীসের সঙ্গে কী দিয়ে খেলে জাতে ওঠা যায়, কিছুই জানে না, ভগবান এদের ক্ষমা করো। আমরা যে যার ছড়িয়ে থাকা হ্যাবলা মতো অস্তিত্ব একটু এডিট করে নিজেদের কাছে নিয়ে রাখলাম। কাকিমা কিছু পরে গ্লাস-গ্লাস অমৃত নিয়ে যেই না ঢুকেছেন, হাঘরের দল আমরা যে যার গ্লাস তুলেই চুমুক।

সেই ফ্যাশনিস্তা আমাদের দিকে আড়চোখে চেয়ে নিজের গ্লাস তুলল না, ভাবখানা এমন: খাবার এলেই হামলে পড়তে নেই। দশ সেকেন্ড পরে গ্লাসটা তুলে এক বার চুমুক দিয়ে আবার নামিয়ে রাখল। আমরা হাড়হাভাতের দল, একটা লস্যি দুজন খাই, আমরা যে যার গ্লাস নিজের মুঠো ছাড়া করলাম না।

এ বার ক্লাইম্যাক্স। আমাদের এক বন্ধুর একটু দেরি হয়েছিল আসতে, সে হুড়ুদ্দুম করে ঘরে ঢুকেই বলল, ‘ওরে বাপ রে, কী গরম, প্রাণ গেল আর তোরা মজা করছিস, এই সর তো, পাখার তলাটা ছাড়।’ প্রকৃত অর্থেই ‘হরে মুরারে’ অ্যাটিটুডে হঠাত্‌ সে টেবিলে থাকা গ্লাসটা ছোঁ এবং চোঁচোঁ। আমরা এইএইএই করতে করতেই থাম্স-আপ আর লিমকা পাঞ্চ করা কোলা-ফ্লোট তার গলা বেয়ে পেটে। আমরা স্তব্ধ। সেই মেয়েটি আরও স্তব্ধ, ক্ষুব্ধ, রোদনোন্মুখ এবং রাগত।

সিচুয়েশন টোটাল বেহাত। আমাদের বন্ধুটি যখন জানতে পারল যে সে এই কাণ্ডটি করেছে, তখন একটি ঢেকুর আর অপরিসীম অপ্রস্তুত ভাব ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার রইল না। সে তো আর সেই ক্লাসিক কোলা-ফ্লোটটি কিছুতেই ফেরত দিতে পারছে না। এবং দোসর হয়ে এল দুঃসংবাদ। থাম্স-আপ থাকলেও আইসক্রিম ফুরিয়ে গিয়েছে। ফলে আরও একটি সাধারণ জনগণের মতো কোলা-ফ্লোট পাওয়াও সম্ভব নয়। আমরা কেউ এঁটো কোলা-ফ্লোট এগিয়ে দিতেও পারছি না।

বেশ বুঝতে পারলাম, আমার বন্ধুর ‘হরে মুরারে’ যৌবন তখন পেন্সিল হিলের তলায় গুঁড়িয়ে যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement