কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের পরও চিকিৎসাবিজ্ঞানে মেয়েদের যথাযথ সম্মান মেলেনি।
Doctors

যদুর মা হারিয়ে দিয়েছিলেন পুরুষ ডাক্তারদেরও

ঈশ্বর গুপ্তের কবিতায় আজও তাঁরা জীবন্ত। ডাক্তারি শিক্ষার সুযোগ না-পাওয়া যদুর মা, রাজুর মা। কিন্তু দক্ষতায় হার মানাতেন পুরুষদেরও।

Advertisement

অমিতাভ পুরকায়স্থ

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২১ ০৭:২৬
Share:

উজ্জ্বলা: বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যা শিখেছিলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।

মেয়েদের লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে পর্বতপ্রমাণ সামাজিক প্রতিকূলতার ইতিহাস সারা বিশ্বেই কম বেশি এক রকম। বাংলার প্রথম মহিলা চিকিৎসক হিসেবে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সংগ্রাম নিয়ে মানুষের আগ্রহ রয়েছে আজও। কিন্তু কাদম্বিনীর পূর্বসূরিদের সঙ্গে আমাদের তেমন পরিচয় নেই। তাঁদের সূত্রেই কাদম্বিনী পেয়েছিলেন লড়াইয়ের উত্তরাধিকার, যা নির্দিষ্ট দেশ বা সময়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়।

Advertisement

আমাদের দেশে প্রথম চিকিৎসার প্রসার হয় পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে। কিন্তু বিলেতেও প্রথম যুগের মহিলা ডাক্তার মার্গারেট অ্যান বার্কলে নিজে নারী পরিচয়ে ডাক্তারি পড়তে বা প্র্যাকটিস করতে পারেননি। এক গাবদা ওভারকোট গায়ে চাপিয়ে সেই পোশাকের নীচে নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে ডাক্তার জেমস ব্যারি হিসেবে সারা জীবন কাটিয়েছিলেন। সঙ্গে প্রচণ্ড বদমেজাজি এক অফিসার হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন নিজের ইমেজ। সে মেজাজের স্বাদ পেয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে নার্স হিসেবে কাজ করা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলও। কিন্তু কাজের পরিসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মরিশাস কি দক্ষিণ আফ্রিকা— যেখানেই গেছেন, সেখানকার অধিবাসী, জেলবন্দি বা সেনাকর্মীদের হয়ে তাঁদের সুযোগ-সুবিধের জন্য সওয়াল করেছেন। লড়াই করে ছিনিয়ে এনেছেন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও উন্নত পরিষেবার ব্যবস্থা। কর্মক্ষেত্রে অবসর গ্রহণ করেন ডিরেক্টর জেনারেল হয়ে। কিন্তু মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নিজের পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে পারেননি এই সফল ডাক্তার।

ডাক্তার ব্যারির সমসময়েই আমরা বাংলায় পাই মহিলা চিকিৎসক হটু বিদ্যালঙ্কারকে (১৭৭৫-১৮৭৫)। ‘সাহিত্য সাধক চরিতমালা’-য় এই শতায়ু মহিলার কথা লিখেছেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমানের কলাইঝুঁটি গ্রামের এই নারী ছিলেন বহু শাস্ত্রবিদ। সে জ্ঞানের স্বীকৃতি হিসেবে লাভ করেছিলেন ‘বিদ্যালঙ্কার’ উপাধি। তার পর গুরু গোকুলচন্দ্র তর্কালঙ্কারের কাছে আয়ুর্বেদ শিক্ষা করে প্রবাদপ্রতিম ভিষগাচার্য হিসেবে খ্যাতি পান উনিশ শতকের বাংলায়। ডাক্তার ব্যারির মতো, তিনিও পুরুষসুলভ পোশাক পরতেন। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের মতো ব্যবহার করতেন উত্তরীয়। মাথা কামিয়ে রাখতেন দীর্ঘ শিখা। কিন্তু তাঁর নারী-পরিচয় গোপন করার প্রয়োজন পড়েনি এই বঙ্গদেশে। এক নারী-চিকিৎসক ও আয়ুর্বেদশিক্ষক হিসেবে তাঁর ঈর্ষণীয় সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছিল সে সময়ের বাংলা।

Advertisement

হটু বিদ্যালঙ্কার সম্পর্কে আরও একটি চিত্তাকর্ষক তথ্য আছে। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের ঠাকুমা এক বার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। সবাই তাঁর প্রাণের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। সে সময় হটু বিদ্যালঙ্কার চিকিৎসা করে তাঁকে সারিয়ে তোলেন। এই ঘটনা গভীর প্রভাব ফেলে ব্রজকিশোর বসু, মানে কাদম্বিনীর বাবার উপর। তিনি স্ত্রীশিক্ষার গুরুত্ব আরও ভাল করে বুঝতে পারেন এবং সেই উদ্দেশ্যে কাজ করা শুরু করেন। বাবার সহায়তা ও সমর্থন কাদম্বিনীকে এগিয়ে যেতে অনেকটা সাহায্য করেছিল পরবর্তী কালে।

শুধু হটু বিদ্যালঙ্কার নন, ১৮৭১ সালের সেনসাস রিপোর্ট বলছে যে সে সময় সারা বাংলায় ৫০৫ জন মহিলা কবিরাজ ও হেকিম চুটিয়ে প্র্যাকটিস করেছেন। এঁরা কিন্তু ধাত্রী বা ধাই নন। শুধু সন্তান প্রসব নয়, এই শিক্ষিত মহিলা চিকিৎসকরা বাংলার মহিলাদের সব রকম অসুখে পরিষেবা দিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েক জনের কথা পাওয়া যায় কলকাতার ইতিহাসে। অন্যান্য কবিরাজও বিনা সঙ্কোচে তাঁদের কাছে আসতেন কঠিন রোগীর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে।

শহর কলকাতায় আমরা পাচ্ছি কবিরাজ কাশীনাথ দত্তের স্ত্রীকে, যাঁকে ইতিহাস মনে রেখেছে ‘যদুর মা’ নামে। কাশীতে কোনও সন্ন্যাসীর কাছ থেকে চিকিৎসাবিদ্যা আয়ত্ত করে কলকাতায় ফিরে রোগ নিরাময়ের পেশা নেন কাশীনাথ। সেই সব বিদ্যা শিখিয়ে দেন তাঁর স্ত্রীকে, যিনি তাঁর সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন। কবিরাজের মৃত্যুর পর স্বাধীন ভাবে সেই ব্যবসা চালু রাখেন তাঁর স্ত্রী। বেশ কিছু বনেদি বাড়ির গৃহচিকিৎসক হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন যদুর মা। তাঁর সুনামের পরিচিতি মেলে ঈশ্বর গুপ্তের লেখায়—

‘ডাক্তার কবিরাজ রণে যারে হারে।

যদুর জননী গিয়া জয় করে তারে॥’

উনিশ শতকের কলকাতার চিকিৎসা-মানচিত্রে আর এক শ্রেণির পরিষেবা প্রদানকারীর খোঁজ পাই যাদের সম্পর্কে চরকসংহিতায় লেখা হয়েছে: ‘মালাকারশ্চর্মকারঃ নাপিতো রজকস্তথা/ বৃদ্ধারণ্ডা বিশেষণ কলৌ পঞ্চ চিকিৎসকঃ।’ শ্লোকটির মধ্যে প্রথাগত আয়ুর্বেদশিক্ষায় শিক্ষিত চিকিৎসকদের একটা সূক্ষ্ম জাত্যভিমানের সুর অনেকেই চিহ্নিত করেছেন। সেই আলোচনায় না ঢুকে আক্ষরিক অর্থ দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে মালাকার, চর্মকার, নাপিত, রজক এবং পাড়ার বৃদ্ধা রাঁড়ি— এরাই কলিকালে চিকিৎসক। কথাটা কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য। কবিরাজ ও হেকিমদের পাশাপাশি এই শ্রেণির চিকিৎসকরা এক সময় গ্রামে তো বটেই, এমনকি শহর কলকাতাতেও রোগ-ব্যাধিতে অনেক মানুষের আশ্রয় ছিলেন।

এমনই এক জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে উনিশ শতকের কলকাতায়। এখানেও আশ্চর্য ভাবে মহিলার নাম নেই। তাঁর পরিচয় ‘রাজুর মা’ নামে। মহিলা জাতিতে নাপিত সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন এবং ফোড়া কাটার মতো ছোটখাটো অস্ত্রোপচারে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। একমাত্র এই ধরনের পরিষেবা দিয়েই তাঁর সংসার চলত। সার্জিক্যাল ছুরি-কাঁচিকে হার মানানো একটি নরুন দিয়ে অপারেশন করতেন এই মহিলা। তাঁর সেবায় বহু মানুষ রোগ-পীড়ার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন সে সময়ের কলকাতায়। এমন মহিলার কথা জানার জন্য আমাদের আবার ফিরে যেতে হয় ঈশ্বর গুপ্তের কাছে। গুপ্তকবি লিখেছেন—

‘নরুনের কারিকুরি যাই বলিহারি।

নরুন হারায়ে দিল সাহেবের ছুরি॥...

সাবাশ রাজুর মার নরুনের খোঁচা।

মেয়ে হয়ে পুরুষেরে বানাইলে বোঁচা॥’

কয়েক দশক আগে তো বটেই, এখনও প্রত্যন্ত গ্রামবাংলায় এই পাঁচ সম্প্রদায়ের পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন প্রান্তিক মানুষজন। এঁদের মতো দক্ষ হাতে ফোড়া কাটার কাজ অনেক শল্যচিকিৎসকেরও দুঃসাধ্য। ঈশ্বর গুপ্তের লেখাতেও আমরা এ তথ্যের স্পষ্ট সমর্থন পাচ্ছি।

খ্রিস্টান মিশনারিরাও মেনে নিচ্ছেন এই মহিলা চিকিৎসকদের ভূমিকার কথা। ডক্টর অ্যালিস মার্স্টন জানাচ্ছেন, ‘ভারতীয় মহিলাদের এই সব চিকিৎসা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত একেবারেই ঠিক নয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে যে সব রোগের নির্দিষ্ট বা উপযুক্ত চিকিৎসা নেই বলে মনে হয়, খুব মারাত্মক না হলে তেমন অনেক ক্ষেত্রেও তারা নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধি প্রয়োগ করে আরোগ্য সম্ভব করে।’

ইতিহাস বলছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্যোগে ডাক্তারি শিক্ষার প্রয়াস শুরু হয় নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন থেকে। সেখানে সংস্কৃত ও আরবি-ফার্সি মাধ্যমে আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসার শিক্ষা দেওয়া শুরু হয় সংস্কৃত কলেজ ও কলকাতা মাদ্রাসায়। কিন্তু মেকলে সাহেব তাঁর শিক্ষানীতির প্রস্তাবে প্রথমেই এই সব দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে সমূলে তুলে ফেললেন। যদিও কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ রায়ের নেতৃত্বে এক দল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়ুর্বেদের গরিমা টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নিলেন, এবং খানিকটা সফলও হলেন। কিন্তু মহিলা চিকিৎসকদের সংখ্যাটা ১৮৭১ সাল থেকে ১৮৯১ সালের মধ্যে নেমে এল ৫০৫ থেকে মাত্র ১৪-তে। আর এ দেশে মহিলাদের চিকিৎসার পরিসরে তৈরি হল এক বিরাট ফাঁক।

প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না। মহিলা-চিকিৎসকদের এই অভাব পূরণ করে দিলেন পশ্চিমি চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষিত চিকিৎসকরা, যাদের মধ্যে কাদম্বিনী অগ্রগণ্যা। মহিলাদের চিকিৎসার জন্য অর্থকোষ গঠনের চেষ্টায় লেডি ডাফরিনের ভূমিকা এখানে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সামগ্রিক ভাবে এ দেশের মেয়েদের সামনে শিক্ষা, জীবিকা ও সম্মান অর্জনের এক দিগন্ত খুলে গেল। কিন্তু তাঁদের লড়াইটাও প্রসারিত হল ঘর থেকে বাইরের দুনিয়ায়।

মহিলাদের ডাক্তারি পড়া ও মহিলা ডাক্তারদের প্রয়োজনীয়তার কথা উড়িয়ে দিলেন ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ বা ‘নববিভাকর সাধারণী’-র মতো রক্ষণশীল পত্রিকা। কাদম্বিনী প্র্যাকটিস শুরু করার পর ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকায় তাঁকে ঘুরিয়ে ‘দেহোপজীবিনী’ বলা হল। অবশ্য তাঁর স্বামী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় চুপ করে মেনে নেওয়ার বান্দা ছিলেন না। মামলা ঠুকে দিলেন পত্রিকার বিরুদ্ধে। বিচারে পত্রিকা সম্পাদক মধুসূদন পালের ছ’মাস জেল হয়। শুধু কলকাতা নয়, পটনা এবং অন্যান্য জায়গা থেকেও নিয়মিত উঠে আসত ডাক্তারি পড়তে আসা মেয়েদের চরিত্র নিয়ে অভিযোগ। ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ মহিলা ডাক্তারদের প্রয়োজন ও গুরুত্ব নিয়ে জনমত গঠনে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছিল।

মহিলা ডাক্তার ও ডাক্তারির ছাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েই ক্ষান্ত হতেন না অনেক বীরপুঙ্গব। কাদম্বিনীর মতো বিখ্যাত নন এমন, বা শহর থেকে দূরে কাজ করা মহিলা ডাক্তারদের যৌন নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছিল সেই নবজাগরণের বাংলায়। ১৯০২ সালে মালদায় কর্মরত প্রমীলাবালা নামে এক চিকিৎসক স্থানীয় ভূস্বামী গোপাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন ‘শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে অপহরণ’-এর। বিচারে অভিযুক্তের সাজা হয় মাত্র হাজার টাকা জরিমানা।

এর সঙ্গে যোগ হল এদেশীয়দের প্রতি ব্রিটিশ শাসকদের বৈষম্যমূলক ব্যবহার। ডাফরিন অর্থকোষের সাহায্যে অনেক নতুন হাসপাতাল ও ডিসপেনসারি স্থাপন হয়, যেখানে নতুন পাশ-করা মহিলা ডাক্তাররা কাজের সুযোগ পেলেন। কিন্তু সেখানে ভারতীয় মহিলাদের পাশাপাশি ইউরোপীয় ও ইউরেশীয় মহিলারাও ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হতেন। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কাজের দায়িত্ব বণ্টন ও সুযোগ-সুবিধে, সব ব্যাপারেই অলিখিত বৈষম্যের শিকার হতেন ভারতীয়রা। স্বয়ং ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার জেনানা হাসপাতালে প্রথম দিকে স্থায়ী নিয়োগ পাননি। ডাফরিন হাসপাতালে এদেশীয় নার্সদের বরখাস্ত করে ইউরোপীয় ও ইউরেশীয় নার্সদের নিয়োগের কথাও জানা যায়। তা ছাড়াও পেশাগত দক্ষতার উন্নতির জন্য চিকিৎসার যে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে-কলমে করা জরুরি, সে সব দায়িত্বও দেওয়া হত না ভারতীয়দের। এই অভিযোগ তুলেছিলেন স্বয়ং কাদম্বিনীই।

আজ প্রাক্‌-নবজাগরণ যুগের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেই সময় সতীদাহ, কন্যা বিসর্জনের মতো বর্বর প্রথাগুলির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে যুগযুগান্ত ধরে চলে আসা জ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার পরম্পরাও বর্তমান ছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার এক দিকে যেমন নিয়ে এল নবজাগরণ, তেমনই দেশীয় জ্ঞানের ভান্ডার হারিয়েও গেল মেকলে সাহেবের শিক্ষানীতির ফলে। শিক্ষার চরিত্রগত পরিবর্তনের ফলে মেয়েদের কাজের সুযোগ যেমন বাড়ল, তেমনই এল যৌন শোষণ ও জাতিগত বৈষম্যের মতো বিষয়ও, যার বিরুদ্ধে লড়তে হল কাদম্বিনী, প্রমীলাবালাদের।

এই লড়াইয়ের ময়দানে কাদম্বিনী যেমন প্রথমা নন, আবার শেষতমাও নন। তাঁর আগেই ছিলেন হটু বিদ্যালঙ্কার, ওরফে রূপমঞ্জরী-র মতো অসংখ্য মহিলা চিকিৎসক। সকলেই সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তৈরি করেছিলেন নিজেদের জায়গা। কাদম্বিনীর পরের পরের প্রজন্মতেও মহিলা ডাক্তারদের লড়াই করতে হয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল সামাজিক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে।

এই লড়াই এক প্রজন্মে শুরু যেমন হয়নি, তেমনি শেষও হবে না। রূপমঞ্জরীর জীবনালেখ্যের ছায়া অবলম্বনে উপন্যাস লিখতে গিয়ে তাই নারায়ণ সান্যাল লিখেছিলেন, ‘রূপমঞ্জরীর গল্পও শেষ হয় না। এ গল্পও যে শেষ হবার নয়। এ সংগ্রাম যে অনন্তকালের। এ সংঘাত যে বিপুলা পৃথ্বী জুড়ে।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement