ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
ছিল গোরস্থানে যাওয়ার পথ। হল অভিজাত সাহেবপাড়া। এবং অবশেষে ধুলোবালি-ঝুলকালি মাখা শহরটার বুকে এক টুকরো ‘কলোনিয়াল ক্যালকাটা’। যে কলকাতা তার ক্রমশ ফিকে হয়ে আসা বিলিতিয়ানার গরিমাটুকু টিকিয়ে রাখছে প্রাণপণ।
সেই কোন ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে সান্তার সঙ্গে দেখা। রাস্তা জুড়ে ম-ম করা ফ্লুরিজের কেকের মনকাড়া সুবাস। পার্ক স্ট্রিটের অলিগলি থেকে রাজপথে কলেজ-প্রেমের স্মৃতি। বিয়ের পরের বড়দিনে দুজনে প্রথম ওয়ালডর্ফ-এ খাঁটি বিলিতি লাঞ্চ।
আজ হয়তো বা পার্ক স্ট্রিট মানে পিটার ক্যাট-এর চেলো কাবাব, অক্সফোর্ডে বই-আড্ডা, অবপ্যাঁ-র কাফে-আভিজাত্য। স্টিফেন কোর্টের পোড়া বাড়িটা। কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডস, বাস্কিন রবিন্স। তবু পুরনো গন্ধটা যাবে কই? হ্যাংওভারে ভর করে পিছন ফিরলে, ট্রিংকাজ বা ব্লু ফক্স-এর সন্ধেগুলো টুকি দিয়ে যায়। ফ্রি স্কুল স্ট্রিট-সদর স্ট্রিটে টইটই ঘুরে, টুং ফং-এর দুপুরে নিরালা-যাপন হাতছানি দেয়।
এই পার্ক স্ট্রিটের পরতে পরতে গল্প, আর ইতিহাসের গন্ধ। খোয়ার পথ এঁকেবেঁকে গিয়েছে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে চৌরঙ্গি হয়ে, তিন-তিনটে গোরস্থানের গায়ে পাক খেয়ে। প্রায় আড়াইশো বছর আগে সেই পথ তখন সন্ধে হলেই আঁধার, নিঝুম। চোর-ডাকাতের উপদ্রব আর ভূতের ভয়ে মোড়া। লম্বা পথটাকে তখনকার কলকাতা চিনত গোরস্থান থেকে চৌরঙ্গি যাওয়ার পথ হিসেবেই। এখনকার রাজপথে টিকে আছে শুধু পার্ক স্ট্রিট আর সার্কুলার রোডের মোড়ের বিশাল সমাধিক্ষেত্রটাই, যেখানে শায়িত এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম জোন্স, ডিরোজিয়ো, উনিশ শতকের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যর জন রয়েডস, সর্বধর্মসমন্বয়পন্থী ব্রিটিশ সেনা চার্লস স্টুয়ার্ট ওরফে হিন্দু স্টুয়ার্ট, দুঁদে পুলিশর্কতা ইলিয়ট সাহেব, চিকিৎসক চার্লস ওয়েস্টন-এর মতো নামজাদা মানুষেরা। যে সমাধিক্ষেত্র পরবর্তী কালে হয়ে উঠবে এ শহরের পর্যটন মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য ঠিকানা, এবং অবশ্যই বছরের পর বছর ধরে প্রেমিক-প্রেমিকার অভয়ারণ্য। জায়গা করে নেবে বাংলা সাহিত্যে-সিনেমায়-তথ্যচিত্রে, কলকাতা নিয়ে দেশ-বিদেশের লেখকদের কলমেও।
এখনকার লোরেটো হাউস ছিল তখনকার ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যর ইলাইজা ইম্পে-র বাড়ি। সবুজে ঘেরা বিশাল বাগানবাড়িটার আশেপাশে তখন পোষা হরিণেরা চরে বেড়ায়। সেই ডিয়ার পার্কের সৌজন্যেই লম্বা রাস্তাটার নাম হয়ে যায় ‘পার্ক স্ট্রিট’।
এ যুগের পার্ক স্ট্রিটের একেবারে মুখে দাঁড়িয়ে করিন্থিয়ান স্থাপত্যের ঐতিহ্যবাহী, এশিয়াটিক সোসাইটির দুধসাদা বাড়িটা। যে বাড়িতে সাপ্তাহিক অধিবেশনে কে না আসতেন সে কালে! উইলিয়াম জোন্স-এর হাতে গড়া বাড়ি, পায়ে পায়ে আঠেরো থেকে একুশ শতকে এসেও যার গায়ে ঔপনিবেশিক দিনগুলোর গন্ধ। পাশেই পুরনো বাড়িটা খানিক বাঁকা। আদি কলকাতার খোয়ায় ভরা রাস্তাটা ঘুরে গিয়েছিল এখানেই। তখন রাস্তা তৈরি হত খোয়া আর সরু ইটে। সেখানেই ছুটত ফিটন, ব্রুহাম, হরেক কিসিমের ঘোড়ার গাড়ি। সেই রাস্তাই পরে হয়ে উঠল সোজা, নাক বরাবর। বেরিয়ে আসা এক ফালি জায়গায় মাথা তুলল এখনকার এশিয়াটিক সোসাইটি।
বাংলা তথা ভারতের ইংরেজি শিক্ষায় আধুনিক হয়ে ওঠার পিছনেও তো রয়ে গিয়েছে এক চিলতে পার্ক স্ট্রিট। এশিয়াটিক সোসাইটির উলটো দিকের ফুটপাতে বেঙ্গল ক্লাবের বাড়িটায় একদা বাস করতেন লর্ড মেকলে। তিনি না থাকলে কোথায় থাকত আমাদের ইংরেজি-ছোঁয়া শিক্ষিত রুচিশীল আভিজাত্যের জমক?
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের বিশাল বাড়িটা যেখানে, আঠেরো শতকে সেখানেই ছিল বিরাট এক গুদামঘর। সেই বাড়িটা কিনে ফেললেন অভিনেত্রী এসথার লিচ। তাঁর হাতেই ভোল বদলে গুদামঘর হয়ে উঠল সাঁ সুসি থিয়েটার। দীর্ঘ কাল সেই মঞ্চে অভিনয় করেছেন এসথার নিজেও। জীবনের শেষ অভিনয়ও এখানেই।
সে দিন কোনও ভাবে আগুন লেগে গিয়েছিল উইংসের পাশে দাঁড়ানো এসথার-এর পোশাকে। ‘আগুন! আগুন!’ চিৎকার করতে করতে ছুটছেন তিনি। ছোটাছুটি পড়ে গেল প্রেক্ষাগৃহে। শেষমেশ যত ক্ষণে বার করে আনা হল অভিনেত্রীকে, তখন অনেকখানিই পুড়ে গিয়েছে শরীর। এসথার মারা গেলেন দু’দিন পরেই। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সেই থিয়েটার-হল আর লাগোয়া বাড়িটা কিনে জেসুইটরা গড়ে তুললেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ। এখনও তার সামনের দিকটায় অতীতের সাঁ সুসি থিয়েটারের সিঁড়ি।
ব্রিটিশ আমলের শেষ দিক থেকেই পার্ক স্ট্রিট জুড়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছিল একের পর এক হোটেল রেস্তোরাঁ। ইতালীয় ‘ফ্লুরিজ’-এর কেক-কফি-ব্রেকফাস্ট থেকে চিনে ‘পিপিং’। খাস বিলেত থেকে শুরু করে সাগরপারের নানা দেশের স্বাদে গন্ধে ভূরিভোজে আদ্যোপান্ত কসমোপলিটান এই রাজপথ তার আভিজাত্যে, আদবকায়দায়, রাত-শহরের সাবালক বিনোদনে হয়ে উঠল কলকাতার সাহেবপাড়া। পরের কয়েক দশক জুড়ে অভিজাত কলকাতার একমাত্র গন্তব্যও।
ওয়ালডর্ফ, মোক্যাম্বো, ব্লু ফক্স, ট্রিংকাজ-এ বিলিতি-কন্টিনেন্টাল খানা, তারা-ভরা স্কাই রুম-এ স্টেক-বিলাস বা লেজেন্ড হয়ে ওঠা প্রন ককটেল, মুলাঁ রুজ-এ সিজলার, ম্যাগনোলিয়ায় আইসক্রিম, পার্ক স্ট্রিট কলকাত্তাইয়া ভোজনবিলাসীর স্টেটাস সিম্বল!
সত্যজিতের ফেলুদা সাহেবিয়ানায় অভ্যস্ত হচ্ছে? রজনী সেন রোড পেরিয়ে চল পার্ক স্ট্রিট। কখনও কিউরিও শপে, কখনও বা বিলিতি রেস্তোরাঁয়। ‘গোরস্থানে সাবধান’-এর পুরোটা জুড়েই তো পার্ক স্ট্রিটের পুরনো গোরস্থানটাই। রহস্যভেদে ঘোরাঘুরি শরদিন্দুর ব্যোমকেশের? হদিশ দেবে পার্ক স্ট্রিটের নাইট ক্লাব। কাকাবাবু-সন্তু-জোজোদের ঘোরাফেরা? সেখানেও ইতিউতি ফিরেছে চেনা পথঘাট, জানা রেস্তোরাঁ। আবহমান কাল ধরে গল্প-উপন্যাসের পাতায়, ক্যামেরার শাটারে, সিনেমার পরদায় বারবার হাজির চেনা রাস্তাটা। ঘুরে ফিরে আসা অঞ্জন দত্ত, বাংলা ব্যান্ডের গানের আনাচ-কানাচেও। সত্যজিতের ছবিতে ‘ওয়ালডর্ফ’ চিনেছে বাঙালি। ‘ব্লু ফক্স’-এর দরজা দিয়ে টলতে টলতে বেরিয়ে এসেছেন কলঙ্কিত ‘নায়ক’ উত্তমকুমার। হালফিলের বলিউডি ‘পরিণীতা’য় মুলাঁ রুজ-এ ডিনার জমে উঠেছে রেখার লাস্যে। পার্ক স্ট্রিটের দিনযাপন বুনে তৈরি হয়ে গিয়েছে টলিউড-বলিউডের ছবি।
যুগে যুগে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রেমেও তো এই চেনা রাস্তার উঁকিঝুঁকি। কখনও গোরস্থানের নির্জনতায়, কখনও জাদুঘরের ফাঁকা গ্যালারির বিশাল মাপের চাদরে, আরও কাছাকাছি এসেছে প্রেমিক যুগল। রাজপথ লাগোয়া ছোট্ট গলির তস্য ছোট্ট তিব্বতি দোকানের ধোঁয়া-ওঠা মোমো-থুকপায় উষ্ণতা খুঁজেছে ভালবাসা। ছুটির দুপুরে সাধ্যের বাইরে থাকা অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁয় খানাপিনার সাধ পিপিং-য়ে শার্ক ফিন স্যুপের বাটিতে, গোল্ডেন ড্রাগন-এর চিনা খানার প্লেটে সপরিবার মিটিয়ে গিয়েছে মধ্যবিত্ত বাঙালি। সেকেলে কলকাতার ফুটপাতে বাক্সবন্দি কেকের পসরার সুবাস, কলেজের দিনগুলিতে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ছোট্ট ছোট্ট তিব্বতি রেস্তোরাঁয় প্রেম, রাসেল স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, কিড স্ট্রিটে ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা অ্যাংলো পাড়ার চিকেন স্টেক-এর সুবাস— এই তালিকাই বা কম কীসে?
কলকাতার বড় হয়ে ওঠাও এই রাস্তার হাত ধরেই। শহরটাকে সাবালক করেছিল দু’ধারের নিশি-বিনোদন। পার্ক হোটেল ছাড়িয়ে অলি পাব বা অলিম্পিয়া। তার এক তলায় জমজমাট নিশি-ঠেক, দোতলায় ‘ফ্যামিলি’ সুরা-পানের জায়গা। কলকাতা তখনও সপরিবার মদিরা-পানে চোখ রাঙাতেই অভ্যস্ত। সেই অলি পাব-এই পরের বেশ কয়েক দশকে আড্ডা জমল একের পর এক চেনা মুখের। শিল্পী-সাহিত্যিক-অভিনেতা কিংবা সাধারণ মধ্যবিত্ত, সকলেরই ভালবাসায় মোড়া রইল আদুরে ‘অলি’। এখনও কলকাতার বহু আঠেরো-পেরনোর মদিরায় হাতেখড়ির ঠিকানা।
ফেলে আসা গানই বা কম নাকি? ট্রিংকাজ, ব্লু ফক্স-এ সুরার সঙ্গে জমল লুই ব্যাঙ্কস, স্কিনি অ্যালি, ঊষা উত্থুপদের গানভাসি সন্ধ্যা। ব্লু ফক্স-এ তখন গায়ক তালিকায় অমৃক সিংহ অরোরাও। তবে এ কলকাতার আরও বেশি বড় হয়ে ওঠার ক্রেডিট অবশ্য মোক্যাম্বো-মুলাঁ রুজ’এ প্যাম ক্রেন, মিস লিলি, মিস লোলাদের নাচে মোড়া আনন্দ, কিংবা অন্ধকার মোড়া অলিগলির সাবালক আমোদের। আঠেরো থেকে আটষট্টিকে পাগলপারা করে তোলা সেই প্যাম ক্রেন অবশ্য পরে বিয়ে করে চলে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। নিশি-বিনোদনের সংজ্ঞা এখন বদলে গিয়েছে নাইট ক্লাব তন্ত্র-র উদ্দামতায়, সামপ্লেস এল্স-এর গান-ঠেকে, সদর স্ট্রিটের কাফেতে।
শুধুই খাওয়াদাওয়া আর নিশি বিনোদন? মোটেই না। সে কালে এখানেই দরজা খুলেছিল কলকাতার প্রথম ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ‘হল অ্যান্ড অ্যান্ডারসন’। এক ছাদের নীচে ‘সব পেয়েছি’র বিপণির সঙ্গে সেই প্রথম আলাপ এ শহরের। সেই তালিকাতেই নাম তুলল সাহেবি চশমার দোকান লরেন্স অ্যান্ড মেয়ো।
ছোটখাটো দোকান বা ফুটপাত, পার্ক স্ট্রিট বরাবরই হাজারও পছন্দের ঠিকানা। সে অক্সফোর্ডের অভিজাত গ্রন্থ-বিপণিই হোক বা ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকান। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের পুরনো বাদ্যযন্ত্র, রাশি রাশি পুরনো রেকর্ডের দোকান— এ পাড়া সঙ্গীত-রসিকদেরও বটে। পুরনো পটারির দোকান রজনিকলাল, হবি সেন্টার। সদর স্ট্রিটে ট্যুরিস্ট-স্পেশাল রংচঙে জামাকাপড়। জাদুঘরের ফুটপাতে নানা দেশের কয়েন থেকে স্ট্যাম্প, পোশাক থেকে রোদচশমা, বই-ম্যাগাজিন থেকে ফোটো ফ্রেম, গয়নাগাটির পসরায় টইটই ঘোরে কলকাতা। ফরাসি পাঠে নাম লেখায় আলিয়ঁস ফ্রঁস্যাজ-এর বিশাল বাড়িটায়।
সে কাল থেকে এ কাল, বছরের শেষ মানেও তো পার্ক স্ট্রিট। জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধের মতো। বড়দিনের এক সপ্তাহ আগে থেকেই এ রাস্তা সেজে উঠত রঙে আলোয়, ক্রিসমাস ট্রি-তে। ২৩-২৪ ডিসেম্বরের সন্ধে থেকেই ঢল নামত রাস্তা জুড়ে। সান্তার হাতে হাত মিলিয়ে খুশিতে মাতোয়ারা বাবা-মা’র হাত ধরে আসা খুদে। ইদানীং অবশ্য সারা বছরই বহাল ঝিলমিল আলোর সাজ। ডিসেম্বর পড়তে না পড়তেই একুশ শতকের ঝাঁ-চকচক শহরে এখনও ‘অল রোডস লিড টু পার্ক স্ট্রিট’! বড়দিনের হপ্তাভর খেলা-মেলা-অনুষ্ঠানে পার্বণী মেজাজে এই রাস্তাটাই যে গোটা শহরের জিয়নকাঠি! আর বছর-শেষের মাঝরাতে, উদ্দাম আনন্দ-ভেঁপু বাজিয়ে চেনা-অচেনা সকলের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’!
বছরের পর বছর গড়িয়েছে। নকশাল আমল-পরবর্তী পার্ক স্ট্রিট হারিয়ে ফেলেছে অনেক কিছুই। উধাও স্কাই রুম-এর তারাভরা আকাশ, ব্লু ফক্স, মুলাঁ রুজ-মোক্যাম্বোর জমজমাট সন্ধে। ট্রিংকাজ-এ এখন টিমটিম করে লাইভ ব্যান্ড। ম্যাগনোলিয়া তার কলোনিয়াল ক্লান্তি সামলে হিমশিম। ঠিকানা বদলে ফেলেছে ওয়ালডর্ফ। মাথা তুলেছে কত নতুন রেস্তোরাঁ, বিপুলায়তন কারনানি ম্যানসনের মতো বাড়িগুলোয় এখন ঝাঁ চকচকে অফিসের সারি। কলকাতা ছেড়ে কবেই দেশে ফিরে গিয়েছে আর্মেনীয়, ইহুদি পরিবারগুলোর বড় একটা অংশ। অ্যাংলো-পাড়াও কেমন যেন খাঁ খাঁ। ফুড-স্ট্রিটের একাধিপত্য ছড়িয়ে গিয়েছে গোটা শহরের এ দিক-সে দিক। রেস্তোরাঁ-পাড়া পেরিয়ে মিশেছে ছোটখাটো দোকানে, মল্লিকবাজার-পার্ক সার্কাসের ঝুলকালিমাখা ব্যস্ততায়।
স্টিফেন কোর্টের সেই ভয়াল আগুনেও পালটে গিয়েছে কত কী! নতুন করে খুলেছে ফ্লুরিজ, পিটার ক্যাট। বাড়িছাড়া স্টিফেন কোর্ট, কুইন্স ম্যানসনের বহু পরিবার। বন্ধ হয়ে গিয়েছে পার্ক স্ট্রিটের আইকন হয়ে ওঠা মিউজিক ওয়ার্ল্ডও। আবার সেই পার্ক স্ট্রিটকেই ঠিকানা করে নিয়েছে রায় অ্যান্ড ত্রিবেদীর মতো প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরি, ভাগীরথী নেওটিয়া হাসপাতাল। বছর-শেষের কার্নিভাল শুরু এই রাস্তারই অ্যালেন্স পার্ক-এ। সব মিলিয়ে গোরস্থানের পার্ক স্ট্রিট এখন জীবনের ঠিকানা। বদলে গিয়েছে নামটাই। মাদার টেরিজা সরণি!
তবু পুরনো রেস্তোরাঁর গল্পে-আড্ডায় ফিরে আসেন প্যাম ক্রেন, মিস লোলারা। দিন ফুরোলে নিঝুম হয়ে আসা কারনানি ম্যানসন-এর সামনেটায় এখনও হাতছানি দেয় নিশির ডাক। নাকি স্মৃতিসরণির ম্যাজিক!