Saumyendranath Tagore

রাতভোর বোমা বেঁধে সকালে নাটকের মহড়া

এ রকমই আশ্চর্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবির বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথের এই পৌত্র ছিল কবিরও বড় প্রিয়। এই যুবকই প্রথম প্রকাশ করেন ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র বাংলা অনুবাদ। দেশের সঙ্গে সঙ্গে জেল খেটেছেন মিউনিখেও। মেহনতি মানুষের কথা লেখার জন্য বহু বই নিষিদ্ধ হয়েছে তাঁর। আজীবন ছিলেন গোয়েন্দাদের নজরে।

Advertisement

পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৩
Share:

মানবদরদি: সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাঙসী চরিত্রের মতো তাঁর লেখনীও ছিল তীক্ষ্ণধার।

১৯২০ সাল। কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বে বাংলায় নব্য কমিউনিস্টরা সাম্যবাদের নিশান উড়িয়ে এক নতুন সমাজ গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবার কাজ শুরু করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে তাঁদের মুখপত্র ‘লাঙল’ পত্রিকা। মুজফ্ফর আহমেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শামসুদ্দিন হোসেন, আব্দুল হালিম, হেমন্ত সরকার, সরোজ মুখোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ এক ঝাঁক তরুণ যুবক, শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করে বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলার শপথ নিয়েছেন।

Advertisement

ব্রিটিশ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় সেই সময় কমিউনিস্ট পার্টি করা ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ১৯২৫ সালের পয়লা নভেম্বর কাজী নজরুল ইসলাম, হেমন্ত সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমদ এবং শামসুদ্দিন হোসেন ‘স্বরাজ লেবার পার্টি’ গঠন করে তার মাধ্যমেই পার্টির সাংগঠনিক কাজকর্ম এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।

সেই উষালগ্নে ভারতের নানা প্রান্তে গড়ে ওঠা ছোট ছোট নবীন কমিউনিস্ট দলগুলি নিজেদের মতো কাজ শুরু করেছিল, কিন্তু পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। সেই বিক্ষিপ্ত গোষ্ঠীগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯২৫ সালে কানপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলনে স্বরাজ লেবার পার্টিও অংশগ্রহণ করেছিল। এই বিষয়েই আলাপ-আলোচনা করতে কমরেড শামসুদ্দিন হোসেন দেখা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। সেখানেই কবিগুরু তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর মার্ক্সবাদী পৌত্র সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে।

Advertisement

কবির জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথের পুত্র সুধীন্দ্রনাথ ও তাঁর পত্নী চারুবালার জ্যেষ্ঠ পুত্র, রবীন্দ্রনাথের প্রিয় নাতি সৌম্যেন্দ্রনাথ ছিলেন ঠাকুর পরিবারের এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। ডাকনাম সৌম্যেন। তাঁর বালক-কণ্ঠের অসামান্য গান সকলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা অর্জন করেছিল। শোনা যায় মাত্র আট বছর বয়সে মাঘোৎবের দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে ‘তুমি যত ভার দিয়েছ সে ভার’ গানটি শুনিয়ে তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছেন ফ্লোবেল ইনস্টিটিউশন আর মিত্র ইনস্টিটিউশনে। সৌম্যেন্দ্র ১৯২১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স পাশ করে আমেরিকায় গিয়েছিলেন নিখিল ভারত ছাত্রসম্মেলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

সৌম্যেন্দ্রনাথের যখন জন্ম, তখন স্বদেশি আন্দোলনের হোমাগ্নি দাবানলের মতো বাংলার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। জোড়াসাঁকোর আঙিনাও তেতে উঠেছিল সেই আগুনের আঁচে। আন্দোলনের প্রবাহে নিজেদের শামিল করে নিয়েছিলেন বাংলার নবজাগরণ-কেন্দ্রভূমির বাসিন্দারাও। প্রেসিডেন্সিতে পড়বার সময় থেকেই জাতীয় রাজনীতির উত্তেজনা সৌম্যেন্দ্রর রক্তে দোলা দিয়েছিল, জড়িয়ে পড়েছিলেন ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে। জমিদারবাড়ির আভিজাত্য থেকে বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের যুদ্ধে।

১৯২০ সালে সরকারের রাওলাট আইনের প্রতিবাদে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানালেও পরবর্তী কালে গান্ধীবাদের সীমাবদ্ধতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করে সৌম্যেন্দ্র তার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন, হাত পাকালেন বোমা-বারুদ তৈরির কাজে। ১৯২২ সালে জোড়াসাঁকোয় যখন ‘শেষ বর্ষণ’ নাটকের প্রস্তুতি চলছে, তখন রাত্রিবেলা বন্ধ ঘরে বসে তিনি দলের ছেলেদের নিয়ে বোমা তৈরি করতেন। আবার দিনের বেলায় তাঁকে দেখা যেত নাটকের মহড়ায়। তবে পুলিশেরও নজর ছিল তাঁর উপরে। মাঝে মাঝেই তারা জোড়াসাঁকোয় হানা দিত বোমা আর বিপ্লবীদের খোঁজে। যদিও পুলিশ কখনওই সৌম্যেন্দ্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কাজের কোনও প্রমাণ পায়নি।

শামসুদ্দিন হোসেনের মাধ্যমে সৌম্যেন্দ্রনাথের যোগাযোগ ঘটেছিল কমরেড মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে। কমরেড রায়ের অনুপ্রেরণায় আর মুজফ্ফর আহমেদের তত্ত্বাবধানেই সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে যাত্রার শুরু। নজরুলের সম্পাদনায় স্বরাজ লেবার পার্টির ‘লাঙল’ পত্রিকাটিই তখনকার কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম মুখপত্র। সৌম্যেন্দ্র সক্রিয় ভাবে পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কমিউনিজ়ম সম্পর্কে বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করেছেন। এই পত্রিকায় ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র বাংলা অনুবাদের প্রথম প্রকাশের কৃতিত্ব তাঁরই।

সৌম্যেন্দ্রনাথের হাত ধরেই এগিয়ে এসেছিলেন সুধাংশু দাশগুপ্ত, অধ্যাপক অমিয় দাশগুপ্ত, সুধীন কুমার প্রমুখ এক দল তরুণ যুবক যাঁরা পরবর্তী কালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে উল্লেখযোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বিপ্লবী কাজকর্মের জন্য সৌম্যেন্দ্র বরাবরই পুলিশের কুনজরে ছিলেন। ১৯২৭ সালে সৌম্যেন্দ্রনাথকে গ্রেফতারের আশঙ্কা দেখা দিলে তাঁকে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের সহযোগিতায় পাসপোর্ট জোগাড় করে গোপনে ইউরোপ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অভিভাবকেরা আশা করেছিলেন, এ বার থেকে হয়তো তিনি সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম থেকে দূরে থাকবেন। কিন্তু বিদেশে গিয়ে সৌম্যেন্দ্র আরও বৃহত্তর পরিসরে কমিউনিস্ট আন্দোলনে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গেলেন। তাঁর যোগাযোগ হল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে।

দলের প্রতি নিষ্ঠা, সততা আর প্রগাঢ় জ্ঞানের জন্য তিনি মস্কোতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার বিরল গৌরব অর্জন করেছেন। মার্ক্সবাদে অগাধ পাণ্ডিত্য আর অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা বলে স্বীকৃত হয়েছিলেন। অলঙ্কৃত করেছেন জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদও।

সৌম্যেন্দ্রর কলমও ছিল তরবারির মতো তীক্ষ্ণ। জার্মানিতে থাকতেই কমিউনিজ়ম, শ্রমিক আন্দোলন, সাম্যবাদ ইত্যাদি বিষয়ে বই লিখেছেন, ‘নারায়ণ’ ছদ্মনামে। ‘স্পেনসার’ ছদ্মনামে কলম ধরেছেন নাৎসিবাদী হিটলারের বিরুদ্ধেও। অবশেষে হিটলার বিরোধিতা এবং নিষিদ্ধ লেখালিখির অপরাধে গ্রেফতার করে তাঁকে মিউনিখ জেলে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ কারাবাসের পর জার্মান সরকার সৌম্যেন্দ্রকে দেশ থেকে বিতাড়িত করলে তিনি আবার দেশে ফিরে আসেন। এর আগেই সোভিয়েটপন্থী কমিউনিস্টদের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে সৌম্যেন্দ্র কমিউনিস্টদের আন্তর্জাতিক সঙ্ঘ ‘কমিন্টার্ন’-এর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

১৯৩০ সালে বাংলা তথা সমগ্র ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলন আরও প্রসারিত হয়েছে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িও আন্দোলনের মতাদর্শকে সমর্থন জানিয়ে পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। ১৯৩০ সালে সোভিয়েট ভ্রমণের শেষে রবীন্দ্রনাথ দেশে ফিরে এলে কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আবদুল হালিমের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ তাঁর রাশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও ব্রিটিশ মদতপুষ্ট বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সোভিয়েত বিরোধী অপপ্রচারের জবাবে লিখলেন ‘রাশিয়ার চিঠি’। নবীন যুবকদের কমিউনিস্ট পার্টির চিন্তাধারা ও আদর্শের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ক্ষেত্রে ‘রাশিয়ার চিঠি’ একটি অত্যন্ত মূল্যবান গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।

দেশে ফিরে সৌম্যেন্দ্র আবার কমিউনিস্ট আন্দোলনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ভারতে বিপ্লব প্রচেষ্টার রূপরেখা এবং সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে ১৯৩০ সালে তিনি ‘বিপ্লব বৈশাখী’ নামের একটি বই লিখেছিলেন। বার্লিন থেকে প্রকাশিত সেই বই ভারতে এসে পড়তেই সরকার সেটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাজেয়াপ্ত করে নিলেন। এর পর তাঁর লেখালিখির উপরে গোয়েন্দারা তীক্ষ্ণ নজর রাখতে শুরু করেন। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ (১৯৩১) এবং ‘লাল নিশান’ (১৯৩২) বই দু’টি প্রকাশের পরেই বাজেয়াপ্ত করা হল। তাঁর লেখা ‘বন্দী’, ‘চাষীর কথা’ ইত্যাদিও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। বস্তুত কমরেড মানবেন্দ্রনাথ রায়ের পর তাঁর লেখা বই-ই সবচেয়ে বেশি নিষিদ্ধ হয়েছে ভারতবর্ষে। দেশে ফিরেও সৌম্যেন্দ্রনাথকে প্রায় আট বছর জেল খাটতে হয়েছিল।

রাজনীতির পাশাপাশি সৌম্যেন্দ্রনাথ আজীবন সাহিত্য ও সঙ্গীতচর্চা করে গিয়েছেন। ছিলেন ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর প্রথম সারির লেখক। জার্মান, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান এবং ইংরেজিতেও বহু গ্রন্থ রচনা ও অনুবাদ করেছেন। ১৯৪০ সালে তাঁর লেখা ‘ইম্পিরিয়ালিস্ট ওয়ার অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ বইটিও ব্রিটিশ সরকারের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। বইটির বাংলা অনুবাদ (যুদ্ধবিরোধী কেন) করেছেন বিজনকুমার দত্ত আর প্রকাশক সুবীরকুমার দাশগুপ্ত। ত্রস্ত সরকারের রোষানলে তিন জনের কপালেই জুটেছিল সশ্রম কারাবাস।

১৯৩৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক পরিকাঠামো ও মতাদর্শের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন, পার্টির সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি। ১৯৩৪ সালের ১ অগস্ট সৌম্যেন্দ্রনাথ নিজেই ‘রেভলিউশনারি কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া’ (আরসিপিআই) নামে আলাদা একটি দল গঠন করেছিলেন। প্রথমে সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বললেও আরসিপিআই পরে সংসদীয় রাজনীতির আদর্শ গ্রহণ করেছিল। কমরেড এম এন রায়ের পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরই উপমহাদেশীয় কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দল নানা নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকারের অংশ হিসেবেও থেকেছে। তিনি সোভিয়েট ইউনিয়ন ও গণচিনের রাষ্ট্রে শক্তিশালী হতে থাকা আমলাতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলটি গুরুত্বহীন অবস্থায় কোনও ক্রমে টিকে রয়েছে এখনও।

রবীন্দ্রনাথের শেষ জন্মদিনে গাওয়া ‘ওই মহামানব আসে’ গানটি রচনার পিছনে সৌম্যেন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তাঁর পত্নী আমদাবাদের শিল্পপতি হাতিসিং-এর কন্যা প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী কৃষ্ণা, যিনি পরে শ্রীমতী ঠাকুর বলে পরিচিত হয়েছেন। ১৯৭৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মহান বিপ্লবী সৌম্যেন্দ্রনাথ নীরবে জীবনের পরপারে পাড়ি দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement