ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ
রবিবার সকালের দিকটা বাজার বেশ জমজমাটই থাকে। সারা সপ্তাহ বাবুরা তো সব অফিসে ব্যস্ত। কেউ সকালে তাড়াহুড়ো করে খানিক কাটা পোনা আর দু-চার রকমের সবজি থলিতে ভরে রওনা দেয়। কেউ আবার অফিস-ফেরতা সন্ধে গড়ালে এক বার ঢু মারে। তখন না থাকে মাছের বাহার, না সবজির। গুছিয়ে বাজার করার সময় ওই রবিবার সকালটাই। অবশ্য ইদানীং সরকারি অফিসগুলো শনিবার ছুটি থাকে বলে, শনিবারেও ভিড় নেহাত মন্দ হয় না। আর ভিড় যত বেশি হয় ততই ফটিকের মঙ্গল।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হাতের জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখছিল ফটিক। ও পাশে বেতের ডালাতে প্লাস্টিক আর কলাপাতা বিছিয়ে মাছ সাজাচ্ছে রমেশ। লোহার মস্ত গামলায় কই মাছগুলো ঢেলে দিয়ে, খোকনকে বলল জল আনতে। তার পর ফটিকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘‘চা খাবি না কি?’’
চায়ের কথাতেই জিভটা সুলসুল করে উঠল ফটিকের। ঘাড় নাড়তেই, রমেশ চেঁচিয়ে খোকনকে বলল, ‘‘জল নিয়ে আসার সময় রামের দোকানে বলিস তিনটে চা আর লেড়ো বিস্কুট দিয়ে যেতে।’’
কথাটা শুনেই চায়ে ডুবিয়ে অল্প নেতিয়ে যাওয়া লেড়ো বিস্কুটের স্বাদটা যেন নিজের জিভের ডগায় অনুভব করল ফটিক। চা আসতে খানিকটা দেরি লাগবে। তত ক্ষণ হাতের কাজগুলো গুছিয়ে নিলে আরাম করে চা-টা খাওয়া যাবে। ভাবতে ভাবতে আধ বালতি জল ব্যাটারির পুরনো খোলটার ভিতরে ঢেলে দিল ফটিক। থলি থেকে চটটা বের করে দু’ভাঁজ করে পেতে, তার ওপর একটা প্লাস্টিক বিছিয়ে বঁটিটা পাতল। বেঁটে মতো একটা কাঠের ডান্ডা আছে ফটিকের। মাথার কাছটা গোল, ভারী। বঁটির কাঠের পাদানটার খাঁজে ফলাটা লাগিয়ে ডান্ডা দিয়ে ঠুকে ঠুকে সেটাকে শক্ত করল। থলি থেকে পাতলা ছুরিটা বার করে ভাল করে ঘষল শানের ওপর। কানখুসকিটাও বার করে রাখল। এটা অবশ্য কানখুসকি নয় মোটেই। তামার তৈরি, অনেকটা কানখুসকির মতো দেখতে একটা জিনিস। মাথাটা সরু আর বাঁকানো। ছোট মাছের পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি টেনে বার করতে কাজে লাগে। এর কেরামতিতেই ফটিক পাঁচশো গ্রাম মৌরলা দশ মিনিটে আঁশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে দিতে পারে। সে জন্য বাজারে আরও দু-চার জন মাছ-কাটিয়ে থাকলেও ফটিকের কদর একটু বেশি। শনি-রবিবার বঁটির পাশে প্লাস্টিক ব্যাগের সার জমে যায়। ফটিক দ্রুত হাতে ছুরি দিয়ে আঁশ ঘষে তুলে, কানকোর নীচটা ফুটো করে ভিতরের জিনিসপত্র বার করে দেয়। চিংড়ির পিঠের সুতো বের করে। মুগুর দিয়ে ঠুকে নিখুঁত ভাবে কইয়ের পাখনা ভাঙে।
ফটিকের মাছ কাটার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। জন্ম থেকেই বাঁ পায়ের গোড়ালির কাছে দুমড়ানো। স্কুলে ছেলেরা ল্যাংড়া বলে খেপাতো। তাই ক্লাস সেভেনের পর আর ওমুখো হয়নি। বাবা তত দিনে তাদের মা-ছেলেকে রেখে কোন এক মেয়ের সঙ্গে ঘর বেঁধেছে। পেট চালানোর জন্য মা তিন-চারটে বাড়িতে বাসন মাজার কাজ করে। সঙ্গে একটা বাড়িতে রান্নার জোগাড়ের কাজ। বড়লোকের বাড়ি। টাকাও বেশি। কিন্তু কাজের হ্যাপা অনেক। বুড়ো কর্তা রোজই বাজার থেকে রকমারি মাছ কিনে আনে। মশলা পেষা, তরকারি কাটার সঙ্গে মাছ বেছে পরিষ্কার করে দেওয়াও ছিল মায়ের কাজ। ফটিক যখন স্কুল যাওয়া বন্ধ করে সবে বিড়ি ধরব ধরব করছে, তখন মা এক দিন বলল, ‘‘সারা দিন ঘরে বসে বসে ভাত গিলছিস! চল আমার সঙ্গে।’’
মল্লিকবাড়ির পিছনে কলতলায় ফটিককে বসিয়ে, একটা গামলায় গোটা দশেক ট্যাংরা এনে মা দেখিয়ে দিয়েছিল, কেমন করে কাটতে হয়। প্রথম প্রথম ঠিকঠাক হত না। কিন্তু আস্তে আস্তে কাজটা রপ্ত হল। মাস ছয়েকের মধ্যেই কই পর্যন্ত জব্দ হয়ে গেল ফটিকের হাতে।
মল্লিকবাড়ির পুরনো রান্নার লোক কাজ ছেড়ে দিলে সে কাজটাও মা ধরে নিয়েছিল। মায়ের সঙ্গে জোগাড় দিত ফটিক। পাঁচ বাড়িতে ভূতের খাটুনি খেটে একটু একটু করে পয়সা জমাচ্ছিল মা। ছেলেটার জন্য যদি একটা চালার দোকানও করা যায়। কিন্তু সময় পেল না। তিন দিনের জ্বরে হঠাৎ মা মরে গেলে আতান্তরে পড়েছিল ফটিক। মাছওয়ালা রমেশ স্কুলে তার সঙ্গে পড়ত। রমেশের বাবাই সব শুনে বলেছিলেন, ‘‘একটা চট নিয়ে বাজারের কোণে বসে যা। আমার দোকানে যারা মাছ কিনতে আসবে, তাদের তোর কাছে পাঠিয়ে দেব। মাছ কেটে দিয়ে পয়সা নিবি।
কথাটা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল ফটিক। পয়সা দিয়ে বাজারে মাছ কাটাবে লোকে! ভরত দাস ফটিকের মনের কথাটা বুঝতে পেরে হেসেছিলেন, ‘‘তুই ভাবছিস পয়সা দিয়ে মাছ কাটাবে না? আমার কথা মান, শুরু করে দেখ। আজকালকার বউরা ছোট মাছ কাটতে জানেও না, চায়ও না। তাই বাবুদের রুই-কাতলায় ঝোঁক বেশি। কাটার লোক আছে জানলে ছোট মাছ কিনবে, পয়সা দিতেও আপত্তি করবে না।’’
কথাগুলো পুরোপুরি বিশ্বাস না হলেও, বসতে শুরু করেছিল ফটিক। প্রথম প্রথম লোক তেমন আসত না। কিন্তু একটু একটু করে কাজ বাড়তে লাগল। এখন তো বাজারে ফটিক ছাড়া আরও তিন-চারটে মাছ কাটার লোক। তবু শনি-রবিবারে কাজ সামাল দেওয়া যায় না। হাঁপ ধরে যায়।
ভিড় বাড়ছে ক্রমশ। ফটিকের সামনে এর মধ্যেই গোটা চারেক প্লাস্টিকের ব্যাগ জমা পড়েছে। বাটা মাছের রুপোলি আঁশ ছুরি দিয়ে ঘষে তুলতে তুলতে বাজারের গেটের দিকে খেয়াল রাখছিল ফটিক। হরিশবাবু আজ আসে যদি ভাল হয়। সাধারণত প্রায় প্রতি রবিবারেই বাজার করতে আসেন হরিশবাবু। আর এলেই রকমারি মাছ কেনেন। বিশেষ করে চিংড়ি। মাছ কাটান সব সময় ফটিকের কাছে। তবে আজ হরিশবাবুর জন্য অপেক্ষার পিছনে গূঢ় উদ্দেশ্য আছে ফটিকের। হরিশবাবু ঢিলেঢালা লোক। চোখেও একটু কম দেখেন। মাছের ব্যাগ থেকে এক খাবলা কুচো চিংড়ি হাওয়া হয়ে গেলেও টের পান না। এই সুযোগটা ফটিক দু-চার বার কাজে লাগিয়েছে। আজও সে রকমই একটা ইচ্ছে আছে তার।
আসলে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল ফটিক। চার দিকটা হালকা কুয়াশায় মাখামাখি। ভ্যানে সবজি নিয়ে বাজারে যাচ্ছিল একটা লোক। ফটিকের চোখের সামনেই তার গাড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ল একটা লাউ। ভ্যানওলা টের পায়নি। ফটিক সাড়াশব্দ না দিয়ে লেংচে গিয়ে তুলে নিয়েছিল লাউটা। কচি লাউ। দেখেই জিভে জল এসে গিয়েছিল তার। ভিতরে গিয়ে ঝুড়িতে লাউটা রেখে লক্ষ্মীকে বলেছিল, ‘‘এটা এখন রেঁধোনি। বাজারে সস্তায় চাপড়া চিংড়ি পেলে নিয়ে আসব। তখন কোরো।’’
লক্ষ্মী কোনও উত্তর দেয়নি। তবে তার পর থেকেই তক্কে তক্কে আছে ফটিক। আজ বাজারে ভাল চাপড়া চিংড়ি উঠেছে। হরিশবাবু যদি আজ কেনেন, তা হলে তার থেকে গোটা ছয়েক সে সরিয়ে ফেলবে। হরিশবাবু কোনও দিনই এক কিলোর কমে কেনেন না। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বেশ একটু নোলা আছে তার। ফটিকের এত নোলা মোটেই ভাল লাগে না লক্ষ্মীর। কথায় কথায় মুখঝামটা দেয়। তবে আগে ঝামটার মধ্যে সোহাগের টান থাকত। ইদানীং তাতে কেমন যেন একটা ঘেন্নার ভাব টের পায় ফটিক।
আসলে বয়সের দোষে, আড়চোখে মেয়েদের বুক-পাছা দেখলেও বিয়ের কথা কোনও দিন ভাবেনি ফটিক। কী করেই বা ভাববে! ল্যাংড়া মানুষ। বাজারে মাছ কেটে যে দু-চার পয়সা রোজগার হয়, তাতে ভাল করে নিজের পেটটাও চলে না। বিয়েতে বসার ভাবনা তার মাথাতেই আসেনি। অথচ বিয়েটা তালেগোলে হয়ে গেল। লক্ষ্মী আর ওর ঠাকুমা বস্তিতেই থাকত। ঠাকুমাই বাড়ি বাড়ি বাসন মেজে নাতনিকে খাওয়াত। একটু বড় হতে লক্ষ্মীও লেগে গিয়েছিল কাজে। বেশ গরিব। রোগা, সিঁটকানো হাত-পা। রুক্ষ চুল। ফাটা পা। আঠারো বছরের মেয়ে। বুক-টুক ওঠেনি, দেখে মনে হয় যেন বারো-তেরো বছরের মেয়ে। ঠাকুমাবুড়ি এক দিন মরে গেল। একলা মেয়ে বাড়িতে। চিল-শকুনের আনাগোনা বাড়ছিল। বস্তির মধ্যে একটা উটকো ঝামেলা। তাই একদিন মানদা পিসি সরাসরি এসে ফটিককে বলল, ‘‘লক্ষ্মীকে তুই বিয়ে কর ফটকে। ল্যাংড়া ছেলে। এর চেয়ে তোর ভাল জুটবে না। পেট পুরে দু’টো খেতে পেলে লক্ষ্মীও দেখবি মোটেই ফ্যালনা নয়।’’
মানদা পিসির সঙ্গে বস্তির আরও কয়েক জন মাতব্বর এসেছিল। তারাও সবাই মিলে সায় দিল। ফটিক কিছু বলার আগেই সাব্যস্ত হয়ে গেল, লক্ষ্মীর সঙ্গে তার বিয়েটা হচ্ছে। পর দিন কালীঘাটে গিয়ে বিয়েও হয়ে গেল। মানদা পিসিই সব জোগাড় করল। বিয়ে করে ফিরে এসে ফটিক অবশ্য নিজের পয়সায় সবাইকে চপ-মুড়ি খাইয়েছিল।
বিয়ের পর তিন-চারটে বাড়িতে বাসন মাজত লক্ষ্মী। ফটিক তখন মাছ-কাটার কাজ সেরে ভাঙা বাজার থেকে সস্তায় কানা বেগুন, আধপচা মুলো, শুকিয়ে আসা কুমড়োর ফালি কিনে নিয়ে যেত। সে সবই কেটে বেছে দুপুরে তোলা উনুনে রান্না বসাত বউ। গন্ধে জিভে জল আসত ফটিকের। তাকে আড়চোখে কড়ার দিকে তাকাতে দেখে হাসত লক্ষ্মী। কিছু দিন পরে মজুমদারবাড়ির কাজটা পাওয়া গেল। মানদা পিসিই খবর এনেছিল। মোহিত মজুমদারের বউ অসুস্থ। তাকে আর বাড়ির কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য একটা সারা ক্ষণের লোক চাই। লক্ষ্মী চার বাড়ি বাসন মেজে যা পায়, মাইনে তার থেকেও অনেকটা বেশি। মাস-পয়লা থেকেই কাজে লেগে গেল লক্ষ্মী। তার পর মাস ছয়েক কাটতে না কাটতেই বদলটা চোখে পড়ল ফটিকের।
চেহারাটা আস্তে আস্তে ভাল হচ্ছিল লক্ষ্মীর। গায়ে মাংস লাগছিল। হাত-পা চকচকে। প্রথমটায় ফটিক ভেবেছিল, বড়লোকের বাড়িতে টুকটাক ভাল খেতে পাচ্ছে, তাই শরীরটা সেরেছে। তত দিনে লক্ষ্মীর বুকের ডৌল স্পষ্ট হয়েছে, পাছার গড়ন চোখে পড়ছে। বউকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যেত ফটিক। কেমন যেন অচেনা মানুষ মনে
হত লক্ষ্মীকে।
ক্রমশ এই অচেনা ভাবটা আরও বাড়ল। আগে সন্ধে পেরোতেই বাড়ি ফিরে আসত লক্ষ্মী। এখন ফিরতে অনেক দেরি হয়। বেশির ভাগ দিন রাতের খাবার খেয়ে রিকশা চেপে বাড়ি ফেরে। ঘরের টুকটাক নানা রকম জিনিসপত্রও কিনে আনে। পয়সার হিসেব করতে গেলে হিসেব মেলে না ফটিকের। ক্রমশ সে বুঝতে পারছিল, লক্ষ্মীর বদলটা শুধু পেট পুরে খাওয়ার বদল নয়। আসলে একটা ক্ষমতার বদল। যে ক্ষমতাটা লক্ষ্মী উপভোগ করছে, আর তারই ছাপ ফুটে বেরোচ্ছে সর্বাঙ্গে।
বস্তিতে তত দিনে কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্মী রাস্তা দিয়ে গেলে টিটকিরির টুকরো উড়ে আসে। বউয়ের বদলে আজকাল মোহিতবাবুর সেবা করাটাই যে লক্ষ্মীর কাজ, সে কথা গায়ে পড়ে ফটিককে শুনিয়ে যায় পাড়া-প্রতিবেশী। মানদা পিসি তো এক দিন বাজারের মধ্যেই রীতিমত কপাল চাপড়ে আপশোস করে গেল। কিছু বলেনি ফটিক। চুপ করে ছিল। কী-ই বা বলতে পারে সে! লক্ষ্মী এখন যে ভাবে আছে, তেমন ভাবে তাকে রাখার সাধ্য তো ফটিকের নেই। সে কথা যদি মুখের ওপর বলে দেয় লক্ষ্মী? ভাবলেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে ফটিকের। গা এলিয়ে আসে। আনমনে হাত চলে যায় দুমড়ানো পা-টাতে।
বেলা অনেকটা হয়ে গেল। হরিশবাবু এখনও আসছেন না। মনটা উসখুস করছে ফটিকের। চাপড়া চিংড়ি দিয়ে মাখা-মাখা লাউয়ের তরকারিটা যেন চোখের ওপরে ভাসছে। দোকানপাট গোটাতে শুরু করেছে দু-এক জন। আধ কিলো পুঁটিমাছ কাটতে দিয়ে গেল এক জন। তার হাতঘড়িতে টুক করে সময়টা দেখে নিল ফটিক। এগারোটা বাজেনি এখনও। আর একটু বসা যেতেই পারে। হরিশবাবু অনেক সময় দেরি করেও আসেন। তা ছাড়া আজ বাজারে ছোট মাছের চালান তেমন আসেনি। চটের নীচটা এখনও ফাঁকা ফাঁকা। পুঁটি মাছের খদ্দের গিয়েছে শিঙি কিনতে। পুঁটিগুলো কাটা শেষ করে একটা বিড়ি ধরাবে কি না, ভাবছে ফটিক।
‘‘মাছগুলো কেটে দে দিকি! আমি তত ক্ষণ খাসির মাংসটা নিয়ে আসি।’’ চমকে মুখ তুলে তাকায় ফটিক। মোহিত মজুমদার। প্লাস্টিকের ব্যাগটা উপুড় করে দিয়েছে। কিলোখানেক তাজা চাপড়া চিংড়ি। ধোওয়ার সময় গোটা আটেক জলের ভিতর হাপিশ করে দেওয়া কোনও ব্যাপারই নয়।
‘‘পরিষ্কার করে কাটবি। না হলে আবার রান্নার সময় খুঁতখুঁত করবে...’’
এই প্রথম মোহিত মজুমদারের দিকে ভাল করে তাকায় ফটিক। গোল মুখ। ময়দার মতো রং। নাকের ফুটো দিয়ে এক গোছা চুল বেরিয়ে আছে। চিবুকের নীচে গলকম্বল। আঁশ ছাড়ানো ছুরির ফলাটা চকচক করছে। ওটা বসিয়ে একটা টান দিলে...
ছুরিটা হাতে তুলে নেয় ফটিক। চটের পাশে রাখা শুকনো কাপড়ে মুছে নিয়ে বলে, ‘‘আজ আর হবে না বাবু। আমি এ বার উঠব।’’
‘‘সে আবার হয় না কি! কেটে দে। দেড় কিলো আছে। পঞ্চাশ টাকাই নাহয় দেব।’’
প্লাস্টিক ব্যাগের ভিতর চিংড়িগুলো ঢুকিয়ে সেটা মোহিত মজুমদারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ফটিক বলে, ‘‘ধরেন। আমি আজ আর মাছ কাটব না। ও ধারে আরও লোক আছে, দেখে ন্যান।’’