ছবি: বৈশালী সরকার
এক অদ্ভুত সুন্দর রূপকথার দেশ থেকে বেড়াতে আসে হিতুপন্নার মামা সুরেন মণ্ডল। অনেক দূর থেকে আসে, তাই হিতুপন্নার মা তাড়াতাড়ি করে লাল প্লাস্টিকের চেয়ারটা এগিয়ে দেয়। চেয়ারটা আনাই হয়েছে মামা এলে বসবে বলে। বিয়েবাড়ির ডেকরেশনের কাজ করে ওর বাবা। মা বলে, চেয়ারটা সেখান থেকেই হাতিয়ে আনা। হিতুপন্না বুঝতে পারে না, এত বড় চেয়ার পকেটে ঢোকাল কী করে বাবা! আসার আগে মামা ফোন করে জানিয়ে দেয় সে আসছে। হিতুপন্নার বাবা ফোন এলেই ফোনটা চোখের কাছে এনে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে নামটা দেখে। দেখেই, “আরে শালাবাবু-উ-উ!” বলে যখন চিৎকার করে ওঠে, তখন হিতুপন্না, ওর বোন কাজল, মা মাধবী এসে দাঁড়িয়ে পড়ে বাবার কাছে। মুখ উঁচু করে ফোনের দিকে তাকিয়ে ওদের মুখে আর হাসি ধরে না। যদিও ও দিকের কথা শোনা যাছে না, তবুও বাবার মুখের চওড়া হাসির মধ্যে, “বলেন শালাবাবু, কেমন আছেন...” ফোন রেখে সবার উৎসুক চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে হাসে কমল সর্দার। ভাবটা, ‘কী? কে আসছে বল দেখি?’
হিতুপন্নার মা হাসি চাপতে না পেরে ঠোঁট বুজে গাল ফুলিয়ে চলে যাওয়ার ভান করতেই ওর বাবা হইহই করে ওঠে, “বলব না বলেছি? হ্যাঁ গো হ্যাঁ। সুরেন আসতেছে। সামনের মঙ্গলবারে। একটা দিন থাকপে। বুধের বিকেলে যাবে। নাকি কাজ আছে। কেজো লোক আমার শালাবাবু। কাজ যেমন, টাকাও তেমন। কিন্তু দেমাক নেই। এটা ভারী আশ্চর্যির।”
“কিন্তু, সে আসছে... তোমার কাছে সে যে অনেক টাকা পায়। যদি চায়? টাকা চাইতে আসছে না কি গো? তেমন হলে কী করব বলো দেখি? মোটে পয়সা নেই হাতে। কাজলের পেটে ব্যথা করছে ক’দিন ধরে। মনে হচ্ছে, পেটে চিংড়ি হয়েছে। তবু নীহার ডাক্তারকে দেখাতে পারছি না। কী হবে টাকা চাইলে সেটা ভেবেছ?” মাধবী সর্ষের মধ্যে ভূত খোঁজে।
“না। সে কথা তারে বোলো না যেন। দুঃখ পাবে। তার বাড়ি আমি গেছি। তোমারে নে যাব এক বার। কী বাড়ি গো! দেখেও শান্তি। সুখ উথলে পড়ছে। জমি আছে দেদার। একটা স্বাস্থ্য দপ্তরে চাকরিও করে। ঘরে কত খাদ্য। বুঝলে? আর কাজলের পেটে কিরমি হয়েছে। সে নিয়ে ভেবো নে।”
হুড়হুড় করে আনন্দের বাতাস ঢুকে পড়ল বাড়ির ভেতরে। “মামা আসছে রে কাজলা!” হিতুপন্না এক আকাশ মেঘের দিকে তাকিয়ে নেচে উঠল, “আমি যে রিস্কাওলা তুমি জমিদারের মেয়ে...” কাজল দিদির দেখাদেখি পা মেলায়। উঠোনের বৃষ্টিভেজা মাটিতে ওদের পায়ের ছাপ পড়ে। হিতুপন্নার বাবা বিড়ি ধরিয়ে চেয়ার টেনে বসতে গেলে মাধবী চেয়ার সরিয়ে জলচৌকিখানা এগিয়ে দেয়, “সুরেন এলে পরে চেয়ারে বসবে’খন। চেয়ারটা বেশি ব্যবহার কোরো না, বুঝলে?”
মাথা নেড়ে হিতুপন্নার বাবা জলচৌকিতে বসে, “শোনো, সে দিন রান্না কী হবে? সুরেন খাসি ভালবাসে। লাল চালের গরম ভাতের সঙ্গে গরম-গরম মাংসের ঝোল। কী বলো?”
“সে তো করতে হবেই। নিজের ভাইও এমন করত না। এ তো আমার মায়ের তুতোভাই আলুমামার ছেলে। আমার মামাতো ভাই। ওর দিদি নেই। সে কি কম দুঃখ ওর? আসে। খানিক সময় কাটিয়ে যায়।”
সরু চাল এ বাড়িতে আসে না। মোটা মাসুরি চালের ভাত খেয়ে অভ্যস্ত গ্রামের সকলেই। সুরেনের অবস্থা ভাল। তার ওপরে ভদ্দরলোকেদের সঙ্গে ওঠাবসা বলে কথা। সে মোটা চালের ভাত খেতে পারে না। স্বর্ণমাসুরি খায় মাঝেসাঝে। তার দাম বেশি। তিরিশ টাকা কেজি মাসুরি ছাড়া খাবে কী হিতুপন্নারা? অন্যের জমিতে খেটে ক’টা টাকা পায় সে? মাধবী দু’বাড়ি রান্না করে, চাষের কাজে সাহায্য করে, ধান সেদ্ধ করে চার জনের মুখে ভাত ওঠে ওদের। মেয়েদের জন্য ফ্রক দরকার। বড় হচ্ছে। বিয়ে দেওয়া আছে। পুরো বর্ষাটাই ভিজে ভিজে কেটে যায়। ভাদ্র শেষ হলেই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে। বরাবরের নিয়ম। চালের কৌটোয় জমানো অল্প কিছু টাকা বার করে মাধবী। সুরেনের জন্য মাংস, চাল, আলু, তেল, মশলা আনতে হবে।
সুরেন আসবে, মাধবী ভোর ভোর উঠে গিয়ে লোকের বাড়ির কাজ সেরে এসে নিজের ঘরে রান্না চাপিয়েছে। হিতুপন্না দূর থেকে মামাকে আসতে দেখে কাজলকে ডেকেছে, “ওই দেখ, মামা আসছে! চল, ছুট্টে গিয়ে মামাকে ধরে আনি।”
হি-হি হাসি বাতাসের সঙ্গে ছুটে যায়। দুই বোন মামাকে ধরে আনে। মামার গায়ে সুন্দর গোলাপের গন্ধ। মামার গলায় সোনার চেন। মামার হাতে সোনালি ঘড়ি।
সুরেন বোনের বাড়ি পা দিতেই বোন চেয়ার দিল। ডাব কেটে দিল। একটু জিরিয়ে নিয়ে সুরেন বিগশপার দুটো টেনে সামনে আনল। হেঁকে ডাকল, “কই রে ঋতুপর্ণা, কাজল... দেখ, কার কী পছন্দ।”
বিগশপার থেকে বেরোয় সালোয়ার সুট। চারটেই হিতুপন্নার? আর ওই চারটে কাজলার? পায়ের নতুন জুতো? চুলের ক্লিপ, টিপের পাতা, কানের রুপোর ঝুমকো, মুখের ক্রিম, আবার এটা কী? লম্বা বোতলে?
“ওটা বডি লোশন রে মা। এটা বডি অয়েল। চান করার আগে ভাল করে মাখতে হয়। চান করে লোশন মাখতে হয়। চুলের শ্যাম্পু আছে দেখো। গায়ের সাবান! সবার জন্য আলাদা করে সব এনেছি। নতুন গামছা আছে ব্যাগে। আর চার কেজির ডিটারজেন্ট। সাফসুতরো থাকবি। এই যে, জামবাবু, আপনের পোশাক-আশাক। কিছু টাকা রাখুন। শীতের আগে ঘর মেরামত করে নিন। আমার দিদির ভারী কষ্ট। পাটকাঠি জ্বেলে কত দিন আর রাঁধবে? গ্যাসের ব্যবস্থা করে নিন। চিন্তা নেই। মাসে-মাসে গ্যাসের টাকা দিয়ে যাব। আর, আমার গাড়িতে করে বছরের চাল, ডাল নিয়ে আসবেন এ বারে। কই দিদি, খেতে দাও। খিদে লেগেছে।”
বাড়ি জুড়ে আনন্দ আর আনন্দ। সমস্ত বাড়ি হাসছে। মামার সঙ্গে কাল হিতুপন্নার বাবা যাবে। মামার গাড়ি করে চাল, ডাল নিয়ে আসবে। তো হিতুপন্না, কাজলাও যাবে।
সক্কাল-সক্কাল রওনা হয়ে গেল ওরা। ট্রেনে গিয়ে নামতে হবে তোমার সেই গোবরডাঙা। স্টেশনে নেমে বেড়িতলা যাওয়ার বাসে উঠে বসল সব। বাসে কত দিন ওঠা হয়নি। হিতুপন্না মুখ টিপে হাসে। দেখাদেখি কাজলাও। অনেক ক্ষণ পরে বাস যখন বেড়িতলায় ওদের নামিয়ে দিল, দুই বোনে হাঁ হয়ে গেল। এখানটা ওদের ওই বাদা অঞ্চলের মতো নয়। কী সবুজ কী সবুজ চারধারে। যেন রঙ দিয়ে আঁকা। আম, জাম, কাঁঠাল, বট ছেয়ে আছে। বিশাল বাঁশবাগানের পাশ দিয়ে সরু পায়ে চলা পথ। এত নির্জন জায়গা দেখে ঝিঁঝিপোকাদের ভারী আমোদ হয়েছে। ওদের চলার দু’পাশে চাষের জমি। পুকুরে ফুটে আছে পদ্ম, শাপলা, কলমি। এক ঝাঁক পাখি কে-রে কে-রে করে ডেকে উড়ে গেল বাসায়। মাটির বাড়ি, টালির চাল, এলোচুল ছড়িয়ে দিয়ে গাঁয়ের বৌ কলসি কাঁখে জল আনতে যাচ্ছে।
একটা বড় হলুদ পাকা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল সুরেন মণ্ডল। হাঁক পাড়ল দোতলার জানালার দিকে মুখ করে, “কে এসেছে, দেখো।”
হিতুপন্না ভেবেছিল মামি নেমে আসবে, এল একই রকম দেখতে দুটো আধবুড়ি। তারা ওদের পথ দেখিয়ে চমৎকার সিঁড়ি বেয়ে যেখানে নিয়ে এল, সেখানটা দেখে তো ওরা আর চোখ ফেরাতে পারে না। এমন ঘর, এমন সোফা, পর্দা ওরা কোনও দিন দেখেছে? মামি পায়েস খেতে দেয়। পরের দিন ম্যাটাডোরে করে চাল, ডাল, খেতের আনাজ দিয়ে জামবাবুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল শালাবাবু। মেয়েরা দুটো দিন মামার বাইকে চেপে ঘুরে-ফিরে বেড়াক।
তা থাকুক। হিতুপন্না দেখল, পশ্চিমের নাবাল জমির পাশ কাটিয়ে সূর্যকে পেছনে ফেলে ওর বাবা লম্বা কালো ড্রাইভারের সঙ্গে সংসারের জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে ম্যাটাডোর চেপে। মা এত মাল একা গুছিয়ে তুলতে পারবে কি না কে জানে, ভাবল মেয়েটা।
মামা বাইকে চেপে কোথায় গিয়েছিল হলুদ পাঞ্জাবি পরে। ওদের দেখে হাত নাড়ল, “ভাল লাগছে এখানে?” হিতুপন্নার গায়ে মামার দেওয়া লাল-হলুদ পাতলা ওড়না বাতাসে লুটোপুটি খায়।
বুড়িরা ওদের দেখছিল। এক বুড়ি আর এক বুড়িকে বলে, “আমার মেয়ে দুটো এখন নাকি পঞ্জাবে আছে।”
খেয়েদেয়ে মামির দেখিয়ে দেওয়া বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল দু’বোনে। মামা ওদের দেখে গেল, দু’বোনে বুঝতে পারেনি। তখন ময়ূরপঙ্খি নৌকো চেপে ওরা সাতসাগর পেরিয়ে পঞ্জাব যাচ্ছে। হিতুপন্না বোনকে ডেকে বলে, “ও কাজলা, পঞ্জাব কত দূর? যাবি মামার বাইকে চেপে?”
কাজলার মন খারাপ। মামা আজ ওকে ডেকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছিল। পরে বলল, “যাও, কাজুবাদামের তক্তি খাও গে।” কাজলা জামার বোতাম আটকাতে আটকাতে বিষণ্ণ মুখে বেরিয়ে যেতে যেতে শুনল মামা ফোনে কাকে বলছে, “ছোটটি আর ছোট নেই। রিসর্টে এই বয়সই চায়।”
কাজলা ফিসফিস করে, “দিদি রে, মা-র কাছে যাই? মামা জামা খুলে দেখল! আমার খুব লজ্জা করছিল।”
ভারী ভয় হয় হিতুপন্নার। এখানে সব যেন কেমন কেমন। আজ সকালেই তো অদ্ভুত কাণ্ড হল। বাঁশবাগানের পিছন দিয়ে হুঁকোবাবু উঁকি দিচ্ছিল। অথচ হুঁকোবাবু কব্বে মরে গিয়েছে! তার মেয়ে নিখোঁজ ছিল। পরে সেই মেয়েকে নদীতে ভেসে যেতে দেখেছে হুঁকোবাবু। সারা শরীর ভেজা। চুল লেপটে রয়েছে গায়ে, মুখে। এর পরই হুঁকো মারা যায়। বাবা বলেছে হুঁকোকে মেরে ফেলেছে কারা। ওই যে, হুঁকো নাকি বলেছিল, ওর মেয়েকে কারা মেরেছে ও বলে দেবে সবাইকে। এই কথা শুনে সেই তারা-ই এসে মেরে দিল হুঁকোকে। আচ্ছা, হুঁকোবাবু হিতুপন্নাদের অত দূরের গ্রাম থেকে এই বেড়িতলায় এল কী করে? মরে গেলে যেথা ইচ্ছে সেথা যাওয়ায় বাধা নেই, সেটা সকলেই জানে। কিন্তু হুঁকোবাবু কেন বাঁশবাগানের পিছনে উঁকি দিয়ে দেখছিল? আজ সারা দিন মামাকে দেখতে পায়নি হিতুপন্না। মামা কেন কাজলাকে ডেকে...
খুব ভয় করছে ওর। কাজলারও ভয় করছে। হুঁকোবাবু কেন সামনে আসছে না? একমাত্র হুঁকোবাবুই তো হিতুদের গ্রামের লোক। দু’বোনে এই গ্রামের কাউকে চেনে না।
কাজল বলল, “দিদি, মা কাঁদছে মনে হয়। চল, আমরা চলে যাই।”
কিন্তু যাবে কী করে? মামাকে না বলে কি যাওয়া যাবে? মামা কোথায়?
মামা সুরেন মণ্ডল এ দিকেই আসছিল। একগাল হেসে হলুদ পাঞ্জাবিতে ঢেউ তুলে বলল, “চল, গ্রাম ঘুরিয়ে আনি। আগে ঋতুপর্ণাই চল। কাজলাকে পরে নিচ্ছি।”
গ্রাম ঘুরিয়ে হিতুপন্নাকে ঠিক বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে কাজলাকে নিয়ে বেরল মামা। যাওয়ার সময় কাজলা দিদির দিকে বার বার তাকাচ্ছিল। ওর দৃষ্টি দেখে হিতুপন্নার মন কেঁদে উঠেছে। ও ছুটে গিয়েছে, “অ মামা, কাজলা ভয় পাচ্ছে।”
“একটু ঘুরে আসপে, এতে ভয়?”
এ ভাবে টিটকিরি মামা আগে কখনও দেয়নি তো! এখন কেমন কেমন যেন…! হিতুপন্না দেখল, ধুলো উড়িয়ে কাজলা চলে গেল বাইকে চেপে। ঠিক তখনই হুঁকোবাবু বাঁশবাগানের পিছন থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকল। হিতুপন্না যাবে কি না ভেবেও গেল। একই গ্রামের লোক, তা হলে যেতে আপত্তি কোথায়?
হুঁকোবাবুর গলায় জোর নেই। তবু কথা বলতে চায় লোকটা, “পাইলে যা মেয়ে। এক্ষুনি। বাঁশবাগানের ধার দিয়েই তো এলি। ও দিক দিয়ে সোজা গিয়ে টিশন। বাসও পাবি। চল। পথ দেখায়ে নিয়ে যাই।”
কিন্তু কাজলাকে ছেড়ে যাবে কেন? হিতুপন্না বাঁশবাগান থেকে বেরিয়ে আসে। ওই যে, মামা আসছে ধুলোর ঝড় তুলে। কিন্তু কাজলা কোথায়? মামার সঙ্গে নেই তো!
“নতুন রিসর্ট হয়েছে কাছেই। ওখানে কাজলা আজ থাকপে। কাল ভোরে আসপে। তোকে কাল নিয়ে যাবনে। সেজেগুজে থাকপি, কেমন?”
মামা বাইক ঢুকিয়ে দিল গ্যারাজে।
হুঁকোবাবু বাঁশবাগানের পিছন থেকে বেরিয়ে এল, “চল।”
হিতুপন্না ছুট লাগাল। তেপান্তরের মাঠ, নেতা ধোপানির ঘাট, সাত সমুদ্র তেরো নদী ছাড়িয়ে ওদের ঠাকুরবাড়ি ছাড়িয়ে তালিমপুর হয়ে যখন খড়ের চালে শালিক দেখতে পেল, তখন বারান্দায় অতিথির জন্য ঘর তুলছে কমল সর্দার। মটকি ভরে চাল রাখছে মাধবী। হিতুপন্নাকে দেখে ওরা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই হিতুপন্না কেঁদে উঠল, “মা, কাজলা হারিয়ে গেল! মামা ওকে…!”
কমল সর্দার, মাধবী মূক হয়ে থাকে। সুরেন মণ্ডলের সঙ্গে বিবাদ? হিতু ছোট মেয়ে। কী বলতে কী বলছে! সুরেন যে রসের হাঁড়ি নিয়ে আসে! কমল সে লোভ ছাড়ে কী করে?
বাইকের আওয়াজ আসছিল। সুরেন আসছে। একা একা মেয়েটা বাড়ি চলে এসেছে! মামার একটা দায়িত্ব আছে। খোঁজ না নিলে চলে? কিন্তু হিতুপন্না তত ক্ষণে হুঁকোবাবুর সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছে। প্রাইমারি স্কুলের নগেন মাস্টার আর সবিতা দিদিমণিকে নিয়ে যখন আসছে, মাধবী চমকে উঠেছে। কী কাণ্ড! নিজের মামার নামে নালিশ? আবার পুলিশের ভয় দেখাচ্ছে মাস্টার? সুরেন যদি পয়সা ফেরত চায়? কাজলার দামে কি সব টাকা শোধ হবে? বোকা মেয়ে একটু ভাল খাবে-দাবে, সেটা বোঝে না?
কাজলাকে রিসর্ট থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। বিধ্বস্ত মেয়ের মুখে কথা নেই। বারান্দার কোণে বসে আছে শক্ত হয়ে।
মামাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল একটু আগে। হিতুপন্না এক পাক নেচে ডাকল, “আয় কাজলা, মামার চেয়ারটা ভাঙি। একা কি পারি, বল?”
কাজলা উঠে আসছিল। হিতুপন্না দা-খানা এগিয়ে দিল, “শুরু কর। আমি বঁটি নে আসি।”
মামার সেই চেয়ার ভাঙার শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত যাচ্ছে। হুঁকোবাবুও শুনতে পাচ্ছে নিশ্চয়ই!