টানা মন্ত্রপাঠের সঙ্গে ধূপধুনো জ্বলছে। ধোঁয়ায় বড্ড চোখ জ্বালা করে সুধাময়ীর। এক হাঁটু বিষাদ ডিঙিয়ে উঠে আসেন। বুকের মাঝেও চিনচিনে জ্বালা। মুখে, গলায় বিনবিনে ঘাম। ঘর থেকে বেরিয়ে পায়ে পায়ে বাগানে ঢুকে বকুল-বেদিতে বসেন। এক বুক লম্বা শ্বাস নেন। কয়েক ঘণ্টা ধরেই দাদার শ্রাদ্ধ-শান্তির কাজ চলছে। বৌদি-ভাইপো-ভাইঝিরা পারলৌকিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত।
আঁচলটা কোমর থেকে খুলে মুখটা মুছে নেন সুধাময়ী। বাগানে এখন গাছগুলো ছুঁয়ে সুন্দর ঝিরঝিরে হাওয়া ভেসে আসছে। দাদার বাগানের সব গাছ আলাদা করে কিছু বলতে চাইছে কি! সুধাময়ী ওদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। ওরাও কি বলাবলি করছে, ওদের যত্নআত্তি করার আর কেউ রইল না!
ছিন্নমূল হয়ে এ দেশে এসেছিলেন। প্রকাণ্ড জমি-জায়গার ওপর বিশাল আজন্ম পরিচিত ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা। প্রথম দিকে একখানা ভাড়া করা কুঠুরিতে ঘরকন্না। দীর্ঘ কষ্টযাপনের পর একে একে স্বপ্নবীজগুলো অঙ্কুরিত হতে শুরু করে। দাদা রবিকান্ত আর সব ভাইবোনদের সঙ্গে লেখাপড়ার মধ্য দিয়ে শক্ত জমিতে পা রাখার জন্য চেষ্টা চালান। এক সময় পেয়েও যান রেলের ফোরম্যানের চাকরি। কষ্টেসৃষ্টে পায়ের তলার মাটি শক্ত করার পরই বিপুল উৎসাহ-উদ্যমে বিশাল বাড়ি গড়ে তোলেন। বাড়ির পর মনের ফুসফুসের জন্য তৈরি করেন বাগান। ও দেশের গাছপালা ভরা বিশাল বাগানের ছোট্ট প্রতিরূপ যেন। বাড়ির গায়ে সজীব সবুজ প্রাণের আবাসে যেন ফেলে আসা জন্মভূমির প্রাণস্পন্দন টের পাওয়া যায়। ফেলে আসা গ্রাম-দেশের গন্ধমাখা মায়াস্পর্শ অনুভব করা যায়।
সুধাময়ীর দাদা শুধু ওদের তিন বোনের দাদাই ছিলেন না, মামাতো-পিসতুতো-মাসতুতো ভাইবোনেরও দাদা ছিলেন। তাঁকে সবাই দেখেছে শক্ত নীতিবোধ আশ্রয় করে রুক্ষ বাস্তবের মাটিতে যুঝতে। সততার সঙ্গে সব রকম লেনদেন করতে। নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য তুচ্ছ করে অন্যের জন্য ত্যাগ করতে। ছিন্নমূল দেখলেই যথাসম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। আত্মীয়-বন্ধু, পরিচিত উদ্বাস্তুদের আঁকড়ে নিয়ে পথ চলতে। হতাশার শূন্যতাবোধ কখনও গ্রাস করেনি তাঁকে। নতুন কচিপাতার স্বপ্ন সামনে রেখে বিপুল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তিল তিল করে বুক দিয়ে ধ্বংসস্তূপ ঠেলে সরিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সব কিছু। এই ভাবে বসতহারা আত্মীয়দের শেকড়গুলোকে আবার নতুন জমিতে পুঁতেছেন। সুধাময়ীকেও দিতে চেয়েছিলেন অন্য বোনদের মতো আনকোরা সংসার। কিন্তু...
আজ সেই দাদার পারলৌকিক ক্রিয়া। সুধাময়ী ভাবনার জগতে ছটফট করেন। তিনি বুঝতে পারছেন মাথার ওপরের শীতল বটের ছায়াটা আর নেই। আপনা-আপনিই বুক শূন্য করে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। ভাইপো মাথা নেড়া করেছে। বৌদি সাদা থান পরেছে। সবই কি তা হলে বেবাক খালি হয়ে গেল! তা হলে সে বাঁচবে কী করে! বৌদির তো তবু ছেলেমেয়ে, বৌমা আছে। দাদা তো শুধু দাদা ছিল না! সেই গেঁড়িবেলার খেলার সঙ্গীও ছিল। পরে অভিভাবক। ও দেশে জলে, ডাঙায়, গাছে চড়ার দস্যিপনার ওস্তাদ ছিল দাদা, আর সুধাময়ী ছিলেন তাঁর শাগরেদ। সে সব কি একেবারে ছিঁড়েখুঁড়ে একসা হয়েই গেল! আসলে ওইটুকু আনন্দের লোভেই সুধাময়ী নিজে সংসারী হননি।
শ্রাদ্ধশান্তি উপলক্ষে কিছু লোক এসেছেন। কিছু আসছেন। ভাইঝি নন্দিনী এসে বলে, “পিসিমা, তোমাকেই খুঁজছি। এখানে বসে আছ! পুরুতমশাই এক টুকরো সোনা চাইলেন।”
এক মুহূর্ত চিন্তা না করে হাতের আংটিটা খুলে দিলেন, বললেন, “যা, এটা লইয়া যা!”
নন্দিনী ইতস্তত করে।
সুধাময়ী করুণ হেসে বলেন, “ত্রিশ বচ্ছর আগে দাদাই গড়াইয়া দিসিল। অরই কাজে লাগুক এখন!”
*****
সে দিন সূর্যটাও থমথম করছিল। আকাশ জুড়ে ছিল চাপ চাপ ঘন কালো মেঘের আনাগোনা। বহু দিন ধরেই অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ চারপাশকে ভয়ে সিঁটিয়ে রেখেছিল। ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইলের পাড়ার মধ্যেই গুজগুজ ফুসফুস চলছিল। যার যেখানে সুতোর মতো আত্মীয় থাকত, সেখানেই সংসারের তাঁবুটাকে নিয়ে ফেলত! একে একে অনেকেই রাতের অন্ধকারে ও দেশের বেড়া ডিঙিয়ে এ পারে চলে আসে। যারা পড়ে থাকে, অসহায় ফ্যালফেলে চোখে একটা একটা করে দিন মাপে।
এরই মাঝে ইন্ডিয়া থেকে বাবা রাধাকান্তর চিঠি আসে দেশের বাড়িতে। ওখানে বাবা-কাকার অনুপস্থিতিতে দাদা রবিকান্তই অভিভাবক। ঠাকুরদার ইস্কুলের মনিরুল স্যরকে বাবা দায়িত্ব দিয়েছেন বাড়ির সবাইকে বর্ডার পার করে দিতে। তার পর বাকিটা ছেলে রবিকান্ত দেখবে।
রান্নাঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে খুব নিচু স্বরে চিঠিটা মাকে পড়ে শোনাচ্ছিল রবি। সুধাময়ীর এখনও সে দিন তার করা চিৎকারটা মনের দেওয়ালে আছড়ে পড়ে, “দাদা,আমরা ইন্ডিয়া যামু?”
কথাটা শুনে দাদা ভুরু কুঁচকে বলেছিল, “হ, যামুই তো! বাবা তো হেই কথাই লিখছে চিঠিতে।”
কী ভেবে দাদা ফের বোনকে ডেকে সাবধান করে, “সুধা, মুখ সামলাইয়া চলবি। এই ক’ডা দিন পাড়ার সালেমা, রাবেয়া, দোলনগো লগে কম মিশবি। তর প্যাট এক্কেরে পাতলা। মুখ ফস্কাইয়্যা যেন কথা না বাইরাইয়া যায়!”
ছোট ছোট ভাইবোন ইন্ডিয়া কী, না বুঝে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে। মা-কাকিরা রান্নাবান্না বন্ধ করে শূন্য চোখে উথালপাথাল ভাবে। সুধার তখন ইন্ডিয়া যাওয়ার নামে আনন্দের বান ডাকে মনের মাঝে। কেন আনন্দ, কিসের আনন্দ, তা তার নিজের কাছেও স্পষ্ট ছিল না।
এখন পুরো বাগানটা জুড়ে ছায়া নেমেছে। অসংখ্য পাখি ক্যাঁচরম্যাচর করছে। নিমগাছটা থেকে ক’টা ঝগড়াটে কাক নীচে নামে। কী কর্কশ গলা! একপেয়ে একটা শালিককে খুঁচিয়ে উত্ত্যক্ত করছে। সুধা মুখে হুসসস করতেই ওগুলো উড়ে গেল।
সুধার মনে পড়ে, সেই সময় কয়েক ঘর আত্মীয় লুঙ্গিপরা-চুরুক দাড়িওয়ালাদের ভয়ে কুঁকড়ে ছিল। ওদের ওপর ওরা যখন তখন ঝাঁপিয়ে পড়তেই পারত। আর যদি পড়ত, ক্ষত-বিক্ষত করে ছাড়ত।
সুধার বেশ মনে আছে, সেই অভিশপ্ত দিনে মা-কাকি এক হাঁড়ি ভাত, শাক, ডাল, চচ্চড়ি, পুকুরের কুচোমাছের ঝাল রেঁধেছিল। সুধার মনে পুলক বইছিল ইন্ডিয়া যাবে বলে। বসে মায়ের আঁচলটা ধরে কী খেয়ালে পাকাচ্ছিল। খটখটে দিনের বেলাতেও সে দিন জমাট অন্ধকার মা-কাকিদের মুখে। সুধা হালকা ভাবে বলেছিল, “আইজ আমরা ইন্ডিয়ায় যামু। তয় এমুন মুনমরা হয়ে রান্না করতাসো ক্যান? তুমাগো যাইতে মুন চায় না বুঝি?”
কাকি মুখঝামটা দিয়ে ওঠেন, “হ! আমাগো তো খুব আনন্দের যাওয়া! ভিটেমাটিরে ফেইল্যা যাওয়া বড় ভালা কথা নয়, ভিটা কান্দে! মাইয়া এই সব এহন তুই বুঝবি না!”
মা-কাকি বাচ্চাদের খাওয়ায়, হাঁস-মুরগিদের দানা দেয়, গরুগুলোর জন্য জাবনা কেটে দেয়। ওদের গলার দড়ি খুলে দেয়। তবু ওরা কোথাও যায় না। মা ওদের গলকম্বলে হাত বুলিয়ে দেয়। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “ধবলি, তরে নিয়া যাইতে পারুম না রে! ভালা থাকিস।”
গরুটা হাম্বা করে ডাকে। তার কাজলকালো চোখ থেকে জল গড়ায়।
গভীর রাতে সময়মতো খপ খপ আওয়াজ তুলে ঘোড়ার গাড়ি এসে থামে বাড়ির সামনে।
সুধা ফিসফিসিয়ে বলে, “দাদা রে, গাড়ি আইল!”
দাদা মুখে আঙুল তোলে। চুপিচুপি নির্দেশ দেয়, “সবাই উইঠ্যা বসো গাড়িতে।”
ছোটরা কে কার কোলে বসবে তার জন্য ঝগড়াও করে না। গাড়ির জানলা দিয়ে দেখা যায়, বাড়িখানা গাছপালা নিয়ে অন্ধকারে ঝুপসি হয়ে দাঁড়িয়ে। বাড়ির এঁটোকাঁটা খেয়ে বড় হওয়া কুকুর ভুলু গাড়ির পেছন পেছন ছোটে। দাদা নিচু গলায় বলে, “ভুলু বাড়ি যা এহন, আবার ফিরা আইস্যা তোকে লয়্যা যাব।”
মাঝপথে মনিরুল স্যর ওঠেন গাড়িতে। উনি সবাইকে বর্ডার পার করিয়ে ফিরে আসেন।
*****
পারলৌকিক কাজ প্রায় শেষের মুখে। দাদার কখনও কোনও বড় অসুখবিসুখও হয়নি, কিছুই না। সারা দিন বাগানের কাজ করত। স্নান-খাওয়া করে বিশ্রাম নিত। সে দিন হঠাৎ বুকে ব্যথা, হাসপাতালের পথেই শেষ।
সুধার অস্থির মনটা কী করে এক জায়গায় থাকে! ক’মাস আগেও দু’জনে বাগানে ঘুরত। ঘুরতে ঘুরতে সুধাময়ী বলত, “দাদা রে, সুখে দুখে তো কাটাইলাম এতডা কাল। আইজকাল মনে লয়, তুই না থাইকলে আমি থাকুম ক্যামনে?”
হাসতেন রবিকান্ত। বলতেন, “দূর পাগলি! বাবা গেল, আমি চক্ষে অন্ধকার দ্যাখলাম। মা গেল, আমি অনাথ হইলাম। মা-রে ছাড়া এক গরাস খাইতেও পারুম না ভাইবতাম। এই তো দিব্বি খাই-দাই। কারও লগে কিসু ঠেইক্যা থাকব না রে।”
সুধাময়ীর চোখ ছলছল করে, মনে মনে বলেন, ‘এই তো আজ তেরো দিন। ওকে ছাড়াই এতগুলো দিন
তো কাটল!’
কয়েক বছর আগে একটা নার্সারি স্কুলে পড়াতে শুরু করেছেন সুধাময়ী। বাচ্চাগুলো ওঁর খুব নেওটা। ওঁর আঁচল ছাড়তেই চায় না। আধো-আধো বুলি— ম্যাম, তুমি খুব ভাল।
এ সব গল্প শুনে দাদা মিটমিট করে হেসে বলেছিল, “পরের বাচ্চা ছুঁইয়া-ছেইয়াই এত ডগোমগো হোস! নিজের পাইলে তো আত্মহারা হইতি
রে পাগলি!”
উত্তর দেননি সুধা।
ও দেশের জল-হাওয়া-প্রকৃতির সন্তান সুধা ও রবি এ দেশে এসে কিছুটা মনের মতো করে গড়ে নিয়েছে তাদের পরিবেশ। মা-বাবা-দাদার নরম স্নেহের রসে জারিত সুধা। মায়া-মমতায় থইথই সংসারের সুখটুকুই বেঁচে থাকার নির্যাস ছিল তাঁর। বৌদি, ভাইপো, ভাইঝিরা সেখানে বড্ড হিসেবি, বড্ড যন্ত্রের মতো। বন্ধন আছে, থাকবেও, কিন্তু সেখানে স্বার্থের আঁশটে গন্ধ। জীবনের উগ্রতা বেশি। মুখে কিছু না বললেও বেশ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, তাঁর সেই দাদা নেই। তাই সংসারের চেহারাও বদলে গেছে।
*****
একটা বেড়ালছানাকে বাগানে কারা ছেড়ে দিয়ে গেছে। প্রথমে অসহায় ছানাটা মিঁউমিঁউ করে কাঁদছিল। এখন কুকুর কাছাকাছি এলেই পিঠ ফুলিয়ে তেজ দেখায়। আবার হুলোকে ফ্যাঁসফ্যাঁস করে ভয় দেখিয়ে নিজেকে সুরক্ষা দেয়। একরত্তি দেহে কী তেজ! সেটা এখন হেলেদুলে হেঁটে এসে সুধাময়ীর কাছে বসে। মুখের দিকে চেয়ে দু’বার ডাকে— মিঁউমিঁউ।
সুধাময়ীর মনে বয়ে চলে একের পর এক স্মৃতিচিত্রের পট। ও দেশে সেই যে এক হাঁটু জলে শাপলা ফুল, এক মাঠ কাশ ফুল, বসন্তে আগুন-জ্বলা কৃষ্ণচূড়া গাছের শিখা, বর্ষায় এক পুকুর জলে মাছ ধরা, ঠাকুরদার গড়ে তোলা প্রাইমারি স্কুলের বান্ধবীরা আমিনা, ফতেমা, দোলন— সবার আবছা চেহারা চোখের সামনে মেঘের মতো ভেসে যায়। মেঘেদের কি ধরা যায়! সুখস্মৃতিও তেমনই। দাদার সঙ্গে এ সব নিয়ে কত কথা হত। দাদাও আনন্দে ভাসত। তবে বর্ডার পেরিয়ে একটা রিফিউজি ক্যাম্পে থাকার কথা উঠলেই দাদা ঘাড় শক্ত করে ছিল, কিছুতেই রাজি হয়নি। সে সময় নিজের অল্প বয়সেই অসীম বিক্রমে রক্ষা করেছিল সদ্য যৌবনে পা-দেওয়া সদ্য কৈশোর পেরনো বোনকে। অভিভাবকের মতো ধারালো আর সতর্ক দৃষ্টিতে পাহারা দিয়েছিল, পাছে সদ্য ফোঁটা পদ্মকুঁড়িটা মাংসলোলুপ হায়নার দল ছিঁড়ে নেয়!
সেই সুধা যখন অন্য সংসারে যেতে চায়নি, দাদা বলেছে, “তর ছুট বুনেরা দিব্বি সংসারে মানাইয়া লইছে। আর তুই!”
সুধা ছলছল চোখে প্রশ্ন করেছে, “এইডা বুঝি আমার সংসার নয়?”
“এই বোঝলি বোকা? ঠিক আছে তর যেহানে মনপ্রাণ চায়, সেহানেই থাক,” সান্ত্বনার সুরে বলেছিল দাদা।
সেই থেকেই এটা নিজের সংসার। কাজের বৌ টুনির মা ডেকে যায়, “বোদি তুমারে ডাকতিছে।”
“চাবির জইন্য তো! আলমারিতে রাখছি। নিতে ক’গা!”
সেই ছোট্ট বেড়ালছানাটা এখনও ওঁর গা ঘেঁষেই বসে আছে।
সুধা ওটার গায়ে হাত বুলোতে থাকেন। আপনমনেই বলেন, “আজ থেক্যা আমি তোর মতোই অনাথ হই গ্যালাম রে!”
মনের মাঝে অভিমানের বাষ্প জমছে ক’দিন থেকেই। জমবে না কেন? চলে যাওয়ার বয়স দাদার হয়নি! কোনও রোগই ছিল না। সে দিন টলটলে জলবিন্দু চোখের কোণে জমে ছিল। ঝরেনি। কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা সেই যন্ত্রণাটা এখন যেন দপ করে ওঠে। আজই তো দাদার সঙ্গে এ সংসারের সব বন্ধন ছিঁড়েখুঁড়ে শেষ! বকুলতলায় নিথর বসে থাকা প্রৌঢ়া সুধাময়ীকে এক পশলা কান্না এসে ভিজিয়ে দেয়। হৃদয় মথিত করা ব্যথা গলা চিরে বেরিয়ে আসে, “দাদা, তুই কোথায়? আমারে রাইখ্যা গেলি ক্যান! লইয়া যা। আমি যে এক্কেরে একা হইয়্যা গ্যালাম! দাদা, দাদা রে...”
দাদাকে অবলম্বন করে জীবন কাটিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে আসার কষ্ট এত দিন টের পাননি। আজ কয়েক যুগ পেরিয়ে এসে নতুন করে ফের ছিন্নমূল হওয়ার যন্ত্রণাটা বুকে বড্ড বিঁধছে সুধাময়ীর।