ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিবাকরবাবু বলেন, “বুঝলি হারু, শহরের ভাড়াবাড়ি ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়া মানেই আল খাল বিল মেঠো পথ ধরে ছোটা। বনবাদাড়, মাটির ঘর, খড়ের চাল, ঘরে ঘরে গোয়াল, গোয়ালের গন্ধ। গোয়ালের গোবর সার হয়ে জমিতে যেত গরুর গাড়ি চেপে। গরুর গাড়ির পিছনে ঝুলতে ঝুলতে জমি পর্যন্ত যেতাম, মনে পড়লে এখনও রোমাঞ্চ হয়।”
হারু অনুগত শ্রোতার মতো শুনতে থাকে সব।
দিবাকর আবার শুরু করেন, “আটটা গরু ছিল। হাঁস ছিল অনেক। পাশের পুকুরে নিজেরাই প্যাঁকপ্যাঁক করতে করতে চলে যেত। আবার সন্ধের সময় ফিরেও আসত। আটটা-দশটা করে ডিম দিত। রাখাল ছেলের সঙ্গে জঙ্গলে গরু চরাতে গিয়ে টো টো করে ঘুরে বেড়ানো, ঝোপঝাড়ে খরগোশ খোঁজা, শেয়ালের পিছনে তাড়া করা, সবই ছিল ছোটবেলার গ্রামের বাড়িতে। গাছে উঠে আম-জাম পাড়া। আবার গরুর গা ধোয়াতে গিয়ে গামছায় চুনো মাছ ধরা। সারা দিনের টো টো-র পর বিকেলে লুকোচুরি খেলা। অন্ধকার ঘন হয়ে এলে বাঁশঝাড় থেকে আসত ঝিঁঝিপোকার ডাক। জোনাকির পিটপিট আলো দেখলে মনে হত রাতের আকাশ তারাদের নিয়ে বাঁশবাগানে বেড়াতে এসেছে। বেশির ভাগ ঘরই ছিল মাটির তৈরি। খড়ের ছাউনি। রান্নাঘরকে ‘খুন্দিঘর’ বলা হত। বাইরের আঙিনাকে বলা হত ‘বাখুল’। একেবারে বাইরের দরজার নাম ছিল ‘লাজদুয়ার’...” খাপছাড়া ভাবে বলে যান দিবাকরবাবু।
সত্তর বছরের পুরনো গ্রাম্য জীবন দিবাকরবাবুর মাথায় বড্ড ভিড় করে আজকাল। হারুকে বলে হালকা হন। অনেক ক্ষণ কথা বলার পর শরীর খারাপ লাগছে মনে হল। বললেন, “হারু, আমাকে ধর। মাথাটা ঘুরছে।”
“ধরছি বাবু,” বলে আস্তে করে শুইয়ে দেয় হারু। বলে, “ডাক্তারবাবু আপনারে বিছানা থেকে ওঠার সময় একটু বসে, ধীরস্থির হয়ে উঠতি বলেছে। একটু বিশ্রাম নেন। চা করে আনি। খেলে ভাল লাগবে।”
“না, চা এখন করতে হবে না। তুই বোস এখানে। ভাল লাগছে না কিছু।”
“আচ্ছা বসছি খানিক ক্ষণ। আপেলটা সেদ্ধ করে আনব? ডাক্তারবাবু রোজ খেতি বলেছে।”
“রাখ তো ডাক্তারের কথা। ওসব খেতে ভাল লাগে না,” বিরক্ত হয়ে এ দিক-ও দিক তাকালেন তিনি। বিড়বিড় করে আবার শুরু করলেন, “এত বয়সেও মানুষ যে কেন বেঁচে থাকে! একঘেয়ে দিন কাটানো। শরীরেও বাত ব্যাধি।”
“আবার আপনি শুরু করলেন মনখারাপের কথা। জীবন-মরণ কি মানুষের হাতে? শরীর থাকলে রোগও থাকবে। এ সব হতাশার কথা আবার দাদা বা দিদিমণিরে বলবেননি যেন। ভাববে আদরযত্নে নিশ্চয়ই কোনও খামতি হতিছে, তাই বাবার কষ্ট। আমায় ফোনে বকাবকি করবে।”
“ওদের কথা ছাড়। বাবার কষ্টে ওদের ঘণ্টা। কেমন আছি জানতে ওরা ফোন করে ভাবছিস? ফোন করে মরে-টরে গেছি কি না তা জানতে। এত দিনেও বুঝলি না!”
“কী যে কন বাবু, ওরা আপনার সন্তান। আপনি হলেন ওদের বাপ। জন্মদাতা। ফল কখনও গাছকে ভুলতি পারে বাবু? আমি তো আগাছা।”
“এখন ওদের কাছে আমি বাপ নই, বোঝা। না পারছে ফেলতে, না পারছে গিলতে। দিন গুনছে বুড়ো কবে পটল তুলবে। ওরাও শান্তি করে সেটল করবে বিদেশে। কেউ আসে না। নাতি-নাতনিদের কত দিন দেখিনি বল তো।”
“ওরা অফিসকাছারি স্কুল নিয়ে ব্যস্ত। কত দূরে থাকে। আসব বললেই কি আসতি পারে বাবু?”
“তুই আর ওকালতি করিস না ওদের হয়ে। আসতে চাইলেই আসা যায়। তখন দূরত্বটা সমস্যা হয় না। ইচ্ছে আর আন্তরিকতাই বড় কথা।”
“উত্তেজিত হবেননি বাবু। ডাক্তারবাবু বার বার বলেছে টেনশন না করতি।”
“আমায় একটু ধর তো, শুইয়ে দে আস্তে আস্তে...”
দিবাকরবাবু শুয়ে পড়লেন বিছানায়। চোখে জল চিকচিক করতে লাগল। পাশ ফিরতেই চোখ গেল শোকেসে রাখা ফোটোটার দিকে। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের ছবি। ছেলেমেয়েরা খুব ছোট। মাধুরী দু’জনকে দু’কোলে রেখে তুলেছিল ফোটোটা। দু’কোল ভরা ওর সংসার তখন। ফোটো আছে, মানুষগুলো নেই। কেউ সত্যি নেই, কেউ থেকেও নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন দিবাকর।
হারু বলে, “একটু ঘুমুন দিখি। ওঠার সময় আমারে ডাকবেন। নিজে হড়বড় করে উঠতি যাবেননি।”
*****
দিবাকর সামন্ত। এক কালের দাপুটে উকিল। স্ত্রী মাধুরীদেবী ছিলেন এই শহরের নামজাদা অ্যাডভোকেট হরেন মিত্রের মেয়ে। ওকালতি পাশ করে শিক্ষানবিশ হিসেবে দিবাকরবাবু কাজ করতেন হরেনবাবুর কাছে। সারাদিন সেখানেই পড়ে থাকতেন কাজ নিয়ে। তখন থেকেই মাধুরীদেবীর সঙ্গে প্রেম।
আপত্তি করেননি হরেন মিত্তির। বুঝেছিলেন, এ ছেলে অনেক দূর যাবে। ঘটা করে বিয়ে দিয়েছিলেন। এখন থেকে পঞ্চাশ বছর আগে তখন দিবাকর বত্রিশ, মাধুরীকে নিয়ে তাঁর মধুর সংসার। ক’বছরের মধ্যে মাধুরীর কোলে এল এক ছেলে আর এক মেয়ে। সংসারে খুশির জোয়ার। দিবাকর রোজগার করেছেন প্রচুর। জমি কিনে বানিয়েছেন এই বাড়ি। যত দিন বাবা-মা গ্রামে ছিলেন, দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেননি দিবাকর। এই বাড়িতে এনে সেবা করেছেন দীর্ঘ দিন। তার পর তাদের মৃত্যুর পর গ্রামের জমিজমা ঘরবাড়ি নিজের ভাগ সব কাকা-জ্যাঠাদের ছেলেদের দানও করে দিয়েছেন।
ছেলেমেয়েদের শিক্ষায় দু’হাতে খরচ করেছেন। ছেলে সুমিত আজ বড় ডাক্তার, অস্ট্রেলিয়ায়। বৌমাও ডাক্তার। একটি ছেলে তাঁদের। নাতিকে নিয়ে ছেলে-বৌমার জগৎ। ছেলে বিদেশ থেকে আর ফিরবে না বুঝতে পেরে, মেয়ে সুস্মিতাকে আগলে রাখতেন দিবাকর। ঠিক করেছিলেন কোনও আইনজীবীর সঙ্গেই বিয়ে দিয়ে নিজের কাছেই রাখবেন। তাঁর অফিসটিও চলবে, মেয়ে-জামাই-নাতি-নাতনি নিয়ে শেষ জীবন হেসেখেলে কাটাবেন।
কিন্তু মেয়ে ভালবেসে বিয়ে করল পাড়ার মেধাবী ছেলে, সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রাজীবকে। আর রাজীব দু’বছরের মধ্যেই চলে গেল কানাডা। প্রথমে ঠিক ছিল অফিস তিন মাসের জন্য পাঠাচ্ছে। তিন থেকে তা ছয় হল। মাঝে দু’মাসের জন্য মেয়ে ঘুরে এল। দেখতে দেখতে তা যখন তিন বছরে পড়ল, আর সে বার মেয়ে গিয়েও ফিরল না, তখন জানা গেল তারা ওখানকার পার্মানেন্ট রেসিডেনশিয়াল স্টেটাস পেয়ে গেছে। নাতনি হওয়ার সময় দেখার কেউ না থাকায় মায়ের ডাক পড়েছিল দু’মাসের জন্য।
আজ দিবাকরবাবু বিরাশি, ছেলেমেয়েরা মধ্যগগনে। স্ত্রী বছর বারো আগেই মারা গেছেন স্ট্রোকে। ছেলে তখন কোনও একটা কনফারেন্সে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেনি। ওখানেই শ্রাদ্ধশান্তি করে নেবে, বাবাকে বলেছিল। তবে জামাই মেয়ে আর নাতনি দু’দিনের জন্য এসেছিল। সেই শেষ দেখা। সে সময় গ্রাম থেকে ভাইপোরা এসে পাশে দাঁড়িয়েছিল। ওরাই গ্রাম থেকে হারুকে রেখে গেছে নিঃসঙ্গ দিবাকরবাবুর কাছে। গ্রামের গরিব মজুরের ছেলে হারু। ক্লাস ফোর অবধি বিদ্যে। জমিজমা নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। হারুর বাপই কাজের কথা বলেছিল ভাইপোদের। ও দিকে নিঃসঙ্গ দিবাকরবাবুরও সারা দিন কাজের একটি ছেলে দরকার। গ্রামের ভাইপোরা কাকা দিবাকরবাবুর কাছে হারুকে রেখে গেছে। হারুর তখন চোদ্দো বছর বয়স। তারও এ বাড়িতে বারো বছর হয়ে গেল। সে এখন চেক ভাঙানো থেকে এটিএমে টাকা তোলা, সবেতেই চৌখস। আজ ছাব্বিশের তরতাজা যুবক সে। সৎ, পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল।
*****
“বাবু, আপেলসেদ্ধটা খেয়ে নেন। আজ দেরি হয়ে গেল,” হারু এক চামচ আপেলসেদ্ধ মুখের সামনে ধরল।
চোখ খুলে তাকালেন দিবাকর। কত যত্ন করে পরের ঘরের এই ছেলেটি। কোথাও ফাঁক নেই, ফাঁকি নেই। বলে, “আমি থাকতে আপনার কোনও চিন্তা নেই বাবু।” মনকে প্রশ্ন করেন দিবাকর, ‘হারু কি তাঁর নিজের ছেলের থেকে কম কিছু?’
এ দিকে হারুর বাবা হঠাৎ মারা যেতে একা হয়ে পড়ল তার মা। বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁকে দেখার কেউ নেই। চিন্তায় পড়ে যায় হারু। দিবাকরবাবু সমাধানের পথ দেখান। বললেন, “তুই বিয়ে করে মাকে এখানে নিয়ে চলে আয়। আমার ও দিকের ঘরটা তো ফাঁকাই পড়ে আছে। ওখানে সবাই মিলে থাকিস।”
হারু ঘাড় নেড়ে বলেছিল, “ভিটেমাটি ছেড়ে শহরে মা আসবে নে, আর এলেও এখানে আমি রাখব নে বাবু। দাদা-দিদিমণিরা ভাববে আমি ঘর দখল করার ফন্দি এঁটেছি।”
“ঘরটা আমার। কে থাকবে, কে থাকবে না সে তো আমি বুঝব!” রেগে দিবাকর উত্তর দিলেন।
হারু বললে, “বিয়ে করলে বৌকে মায়ের কাছেই রেখে দেব। সে-ই মায়ের সেবা করবে। তাঁকে একলা রাখতে পারবনি বাবু।”
হারুর উপর টান আরও বেড়ে যায় দিবাকরবাবুর। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “তোর মতো যদি আমার একটা ছেলে থাকত রে হারু!”
*****
বছর দুয়েক হল হারু বিয়ে হয়েছে। তাই মাঝে মাঝে গ্রামে যেতে হয় তাকে। মা বৌ সবই তার সেখানে। এ দিকের সব কাজ সেরে, দিবাকরবাবুকে খাইয়ে, ওষুধপত্র দিয়ে গ্রামে যায়। সে যাওয়াতেও ঝুঁকি। বিপদ বলেকয়ে আসে না। মাও বারণ করে ও ভাবে আসতে।
মেনে নিতে পারছিলেন না দিবাকরবাবু। হারুকে ডেকে বললেন, “তুই হয় তোর বৌ আর মাকে এখানে এনে রাখ, নয় অন্য কাউকে আমার জন্য ব্যবস্থা কর। তবে তুই কাজ না করলেও তোকে বেতন আমি দেব মাসে মাসে।”
হারু খানিক ভেবে বলল, “তা হলে বরং বাগানের উত্তর কোণে চালা বেঁধে মা-বৌকে নিয়ে থাকি?”
দিবাকর আপত্তি করেননি। কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ায় খবর পৌছতে দেরি হল না। মেয়ে বাবাকে পরামর্শ দিল, হারু যেন বাইরে কোথাও ঘর ভাড়া নেয়। না হলে পরে সব দখল করে নেবে হারু। দিবাকর কোনও উত্তর দেননি। ছেলে ফোনে একটু রেগেই বলল, “তা হলে বাংলোটা ধর্মশালা করে দিলে বাবা?” দিবাকরবাবু শুধু বলেছিলেন, “এই ধর্মশালার মালিক তো তোমরাই, কিন্তু এসে আর থাকছ কোথায়?”
*****
আরও তিন বছর কেটে গেল। আজ দিবাকরবাবুর বাড়িতে ছেলে সুমিত, বৌমা, মেয়ে সুস্মিতা, জামাই, নাতি-নাতনি সকলে বিদেশ থেকে এসেছে। এ সময় যিনি থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন, সেই দিবাকরবাবু আজ নেই। হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন গত মাসে। সময়মতো ছেলেমেয়ে না আসতে পারায় হারুই গ্রামের ভাইপোদের সঙ্গে নিয়ে দাহ সৎকার করেছে। এখনও হারুর চোখের জল শুকোয়নি।
হারুর হাবভাব গোয়েন্দার মতো নজর রাখে ভাইবোনে। সুস্মিতা দাদাকে বলল, “নাটক দেখেছিস দাদা? একেবারে নিজের বাপ মারা গেছে যেন। এ বাড়ি বিক্রির সময় ওর চালাঘরই না হোঁচট হয়ে দাঁড়ায়।”
সুমিত বলল, “সে রকম কিছু হলে পার্টি আর পুলিশকে কিছু দিতে হবে আর কী। চালা ভেঙে লাথি মেরে বার করে দেবে।”
ঠিক হল, আজ বিকেলেই গ্রামের খুড়তুতো ভাইদের ডেকে হারুকে চলে যাওয়ার কথা বলবে ওরা। এক বড় প্রোমোটারের সঙ্গে কথাও হয়েছে। সে কিনে নেবে। সুমিত এবং সুস্মিতার দুই অ্যাকাউন্টের ডিটেলও দিয়ে রাখা হয়েছে প্রোমোটারকে।
বিকেলে গ্রাম থেকে দিবাকরবাবুর দুই ভাইপো এসেছে। সুমিতের থেকে দু’জনেই বড় বয়সে। ঘরের এক কোণে হারু কাঁচুমাচু হয়ে বসে।
কথাটা সুমিত পাড়ল। বলল, “আমরা ভাইবোনে ঠিক করেছি বাবার এই বাড়ি, বাগানের জমি-সহ বিক্রি করে দেব। আমাদের হাতে সময় কম। হারু যেন ঝামেলা না করে অন্যত্র চলে যায়।”
হারু বলল, “কিছু দিন সময় পেলে ভাল হত দাদাবাবু। না হলে খোলা আকাশের নীচে অসুস্থ মা, বৌকে নিয়ে পড়ে থাকতে হবে।”
“পড়ে থাকবে কেন? রোজগার তো আর কম করোনি এ বাড়ি থেকে। অসুস্থ মানুষটাকে টুপি পরিয়ে উপরিও সরিয়েছ নিশ্চিত! ভাড়াটাড়া দেখে বিদেয় হও এ বার!” সুমিতের বৌ ঠেস দিয়ে বলল।
হারু কাঁদতে কাঁদতে বলল, “ঘর ভেঙে মেরে বার করে দিন আমাকে, তাও সইব, তবু ওই অপবাদ দিবেননি গো দিদিমণি।”
ঘরের পরিবেশ গরম হতে শুরু করেছে। ভাইবোনের চোখে আগ্নেয়গিরি, হারুর চোখে শ্রাবণের ধারা। ঠিক এ সময় মুখ খুললেন দিবাকরবাবুর দুই ভাইপো। সুমিত-সুস্মিতাকে বললে, “কাকা, মানে তোদের বাবা সব হিসাবপত্র আমাকে বুঝিয়ে উইল করে আমার কাছে রেখে গেছে। যাতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সব কিছুর ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে কোনও ঝামেলা না হয়। তাঁর অবর্তমানেই এ সব জানাতে বলেছিলেন আমায়। আজ তাই জানিয়ে দিচ্ছি।”
সবাই চুপ। সুমিত বলে, “বাবা তো সে রকম কিছু বলে যাননি। সুস্মিতা, তোকে কিছু বলে গেছে বাবা?”
সুস্মিতা ঘাড় নেড়ে বলল, “কই না তো!”
“পুরো ভাগ-বাঁটোয়ারা যাতে ঠিকমতো হয়, সে জন্য তিনি আমাদের দু’জনকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন দলিলে,” বড় ভাইপো বলল।
এ বার দলিলের তিনটি কপি সুমিত, সুস্মিতা ও হারুর হাতে দিয়ে সে জানাল, “কাকা লিখে গেছেন, পুরো সম্পত্তি তিন ভাগে ভাগ করে তাঁর তিন সন্তান যেন সমান ভাগে পায়। হারুকে কাকা এক জন দায়িত্বশীল, কর্তব্যপরায়ণ সন্তান হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন।”
মুহূর্তে ঘরের পরিবেশ বদলে গেল। ভাই-বোন দু’জনেই বলে উঠল, “এ দলিল আমরা মানি না।”
ছোট ভাইপো কঠোর গলায় বলল, “তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আমরাই কাকুর ইচ্ছে এগজ়িকিউট করব। তোমরা যে মানবে না তা জেনেই কাকা এ ব্যবস্থা করে গেছেন। ঝামেলা এড়িয়ে মেনে নিলেই মঙ্গল। না হলে সমস্যা বাড়বে।”
হারু বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। বাবু যে তাঁকে ভালবাসত সে জানত, তা বলে এমন লেখাপড়া করা স্বীকৃতি সে ভাবতে পারেনি। সে বুঝতে পারছে না, এক জন পরকে কেউ কেমন করে নিজের সন্তানের মতো আপন করে নিতে পারে!