ছবি: পিয়ালী বালা
পূর্বানুবৃত্তি: ঈপ্সিতা প্রিয়তোষকে বলে, সে মেসেঞ্জারে কস্তুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। সকালে জগিং করার সময় টুইটির সঙ্গে দেখা হয় হৃষিতার। টুইটি জানায়, সিসিটিভিতে ওর ছাদে যাওয়ার ছবি সিকিয়োরিটিরা ওর বাবাকে দেখিয়ে দিয়েছে। টুইটি কাউকে টিটানের কথা বলেনি। হৃষিতা টুইটিকে বলে, ওরা এ নিয়ে পরে কথা বলবে। বেশ কিছু দিন পর এক রবিবার সকালে হৃষিতা রৌনকের ফ্ল্যাটে আসে।
এসো।’’ রৌনক দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। হৃষিতার হাতে নিজের দেওয়া গিটারটা দেখে বুঝতেই পারল, হৃষিতা গিটারটা ফেরত দিতে এসেছে।
হৃষিতা ভেতরে ঢুকে খাওয়ার টেবিলের ওপর দুধের প্যাকেট আর খবরের কাগজটা রেখে গিটারটা এক পাশে দাঁড় করিয়ে বলল, ‘‘তোমার স্টুডেন্টরা কি রবিবারে আসা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে?’’
‘‘না, ছাড়েনি। আমিই ওদের কিছু দিন আসতে বারণ করে দিয়েছি।’’
‘‘কেন?’’
রৌনক মুখটা নামিয়ে কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল, ‘‘আসলে আমি ঠিক করেছি এখান থেকে চলে যাব। মা’কে বলেছি...’’ রৌনক কথাটা শেষ করল না।
‘‘এই জায়গাটা আর ভাল লাগছে না? পালিয়ে যেতে চাইছ?’’ রৌনকের চোখের দিকে তাকিয়ে হৃষিতা জিজ্ঞেস করল।
চোখ মাটির দিকে নামিয়ে কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে রৌনক ফিসফিস করে বলল, ‘‘জানি না।’’
‘‘জানি না! ওয়েল সেড। সকালের চা খাওয়া হয়ে গিয়েছে?’’
‘‘স্যরি, বোসো। চা নিয়ে আসছি।’’
হৃষিতা আজ আর রান্নাঘরে সঙ্গে এল না। কয়েক সপ্তাহ আগে হলে রান্নাঘরে চলে আসত। রৌনক যখন চা করত, কিচেনের স্ল্যাবে উঠে বসত। বা হৃষিতা বাইরে বসে থাকলে রৌনক চায়ের জল চাপিয়ে বাইরে হৃষিতার মুখোমুখি বসত। চায়ের জল ফুটে অর্ধেক হয়ে যেত। আজ রৌনক আর বাইরে গেল না। রান্নাঘরেই অপেক্ষা করতে থাকল একেবারে চা’টা করে নিয়ে যাবে বলে। আর্ল গ্রে’র কৌটোটা খুলে টি-ব্যাগ বার করার সময় গিটারের একটা কর্ডের আওয়াজ ভেসে এল বাইরে থেকে। শুনে চমকে উঠল রৌনক।
চা তৈরি করে মগ দু’টো নিয়ে বাইরে এসে দেখল, হৃষিতা গিটারটা কোলে নিয়ে মুখ নিচু করে কর্ডটা বাজাচ্ছে। খুব নিখুঁত না হলেও হৃষিতা মোটামুটি ঠিকঠাক বাজানোর চেষ্টা করছে। এই কর্ডটা রৌনক হৃষিতাকে শেখায়নি। অথচ...
রৌনক অপেক্ষা করল, হৃষিতা যত ক্ষণ বাজিয়ে শোনাতে চায়। কেবল একটা জিনিসই মাথায় ঢুকছে না, গিটারটা ফেরত দিতে এসে ও কেন বাজিয়ে শোনাচ্ছে? ও কি বোঝাতে চাইছে, রৌনককে ছাড়াও ও অন্য কারও কাছে গিটার শিখছে? কিন্তু কর্ডে এত মিল হয় কী করে? এক সময় গিটার বাজানো বন্ধ করে হৃষিতা মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল, ‘‘কেমন হয়েছে?’’
‘‘ভাল। চা।’’ চায়ের মগ এগিয়ে দিল রৌনক।
‘‘ব্যস! শুধু ভাল? কেমন একটা দায়সারা গোছের উত্তর দিলে। তোমার মধ্যের সেই ক্রিটিকাল মাস্টারমশাইটা কোথায় গেল? যে বলত, নট ব্যাড। গুড গোয়িং। কিন্তু অত কনশাসলি নয়, আরও ফ্লুয়েন্টলি বাজাতে হবে। ট্যাবের ওপর আরও ওয়ার্ক আউট করতে হবে। আঙুলের নখগুলো আরও ছোট করতে হবে।’’
হৃষিতা জিজ্ঞাসু চোখে রৌনকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। রৌনকের ভেতরটা যেন আরও তালগোল পাকাতে থাকল। কোনও রকমে বলল, ‘‘তুমি কি কারও কাছে শিখছ?’’
‘‘অফকোর্স এক জনের কাছে শিখছি। তুমি কি এই কর্ডটা আমাকে সামনে বসিয়ে শিখিয়েছিলে? প্র্যাকটিস করছি। আমার আঙুলগুলো দেখো।’’
হৃষিতা হাত দু’টো মেলে ধরল রৌনকের সামনে। রৌনক শুকনো হাসল, ‘‘চা খাও, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’’
চায়ে চুমুক দিয়ে হৃষিতা বলল, ‘‘জিজ্ঞেস করবে না, কার কাছে শিখছি?’’
হৃষিতার মুখে একটা মিটিমিটি হাসি। হৃষিতাকে অন্য কেউ গিটার শেখাচ্ছে? তাও আবার রৌনকের প্রিয় পুরনো হিন্দি গানগুলো! বুকের মধ্যে কী রকম একটা চাপ লাগছে। রৌনক কোনও রকমে বলল, ‘‘কার কাছে?’’
‘‘যদি বলি তোমার কাছেই!’’
রৌনক খুব অবাক হয়ে হৃষিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘আমার কাছে?’’
‘‘সামনে এসে চেয়ারটা নিয়ে বসো, তার পর বলছি। ও রকম দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হচ্ছে, তুমি আমার চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছ। এই যে আমি এসেছি, তোমার মোটেই পছন্দ হচ্ছে না।’’
রৌনক চেয়ার টেনে হৃষিতার সামনে বসার পর হৃষিতা বলতে শুরু করল, ‘‘প্রত্যেকটা নেগেটিভ অভিজ্ঞতার মধ্যে একটা অচেনা পজিটিভ ফ্যাক্টর লুকিয়ে থাকে। সেই রবিবারটা মনে আছে? তোমার পাশের ফ্ল্যাটের কাঞ্জিলাল আর প্রিয়তোষ চ্যাটার্জি এসেছিলেন। কাঞ্জিলাল চিৎকার করে বলছিলেন, দিন নেই রাত নেই, যখন-তখন জগঝম্প বাজছে। মাঝরাতে ঘুমোতে পারছি না। প্রিয়তোষ চ্যাটার্জি খুব লজ্জা পাচ্ছিলেন। আমার জানার খুব আগ্রহ হয়েছিল, মাঝরাতে তুমি কার সঙ্গে গানবাজনা করো। সে দিন তোমার মায়ের কাছে এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করে উত্তরটা পেয়ে গিয়েছি।’’
‘‘মাই গড!’’ রৌনকের রীতিমত অবাক।
‘‘আমি তোমার অনলাইন গিটার শেখার পোর্টালে সাবস্ক্রাইব করেছি।’’
‘‘পোর্টালটা বিদেশি। আমার স্টুডেন্টরা বেশির ভাগ প্রবাসী ভারতীয়। পুরনো দিনের হিন্দি গান শিখতে চায়। ওদের শেখার সময়টা অ্যাডজাস্ট করে রাত্রে লাইভ ক্যামে থাকতে হয়।’’
হৃষিতা হেসে বলল, ‘‘তুমি স্টুডেন্টদের দেখতে পাও না। ওদের প্রশ্নগুলো তো সব চ্যাট বক্সে আসে। আমার প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছ তুমি। ইচ্ছে করেই প্রোফাইলে আসল নাম আর ছবি রাখিনি। তবে টাইমটা বেশ। মাঝরাত্রি। আমার খুব সুবিধা হয়। ভাগ্য ভাল, আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে কাঞ্জিলালের মতো কেউ নেই। পাশের ফ্ল্যাটে মা-বাবা থাকে।’’
রৌনকের ঘোর তবু কাটে না, ‘‘কিন্তু আমার কাছেই যদি শিখবে, এ ভাবে কেন?’’
‘‘দু’টো কারণ। প্রথমত তুমি আমার কাছ থেকে কোনও গুরুদক্ষিণা নাও না। আমি কোনও অবলিগেশন চাই না। আর… আই থিংক, ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড... থাক। একটু দেখে দাও তো সুরটা ঠিক হচ্ছে কি না!’’
হৃষিতা আবার কর্ড বাজাতে বাজাতে গাইতে শুরু করল,
কহতা হ্যায় দিল, রাস্তা মুশকিল মালুম নহী হ্যায়, কহাঁ মঞ্জিল…
রৌনকের বুকের ভেতরটা হালকা হয়ে গেল। এই গানটাই এখন একটু একটু করে অনলাইন শেখাচ্ছে। লতা মঙ্গেশকর-মান্না দে’র একটা গান। কী সরল কর্ডগুলো! প্রথম প্রথম শেখার জন্য আদর্শ। হৃষিতা মোটামুটি ঠিকই বাজাচ্ছে। আর যেমনই বাজাক, এই গান এই জীবনে যে এ ভাবে ফিরে আসবে, কখনও কি ভেবেছিল? হৃষিতা বাজাতে থাকল আর রৌনক গাইতে শুরু করল,
পেয়ার হুয়া, ইকরার হুয়া হ্যায়
পেয়ার সে কিঁউ কভি ডরতা হ্যায় দিল…
হৃষিতা বলল, ‘‘তোমার দিল থেকে পেয়ারের ভুতটা নেমেছে? আমি তোমাকে অনেকগুলো সপ্তাহ ভেবে দেখার স্পেস দিয়েছিলাম।’’
কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে রৌনক বলল, ‘‘বোধহয় না। আই থিংক আই অ্যাম স্টিল ইন লাভ উইথ ইউ।’’
‘‘একেবারে শ্রী ৪২০,’’ হেসে উঠল হৃষিতা। তার পর নরম করে বলল, ‘‘তোমার ব্যাপারে আমাকে সব বলেছ, রৌনক। আমার ব্যাপারে আমি তোমাকে কিছু বলিনি। আজ বলছি। আমি এক জন ডিভোর্সি। আমার একটা ব্রিফ ম্যারেজ ছিল। খুব আনপ্লেজেন্ট ইক্সপিরিয়েন্স। আমি তো আর টুইটির বয়সি নই। বয়স, বাজে অভিজ্ঞতা আমাকে একটা ম্যাচিয়োরিটি দিয়েছে। আমারও মাঝে মাঝে জীবন থেকে পালিয়ে গিয়ে সব নতুন করে শুরু করতে ইচ্ছে করে। মনে হয় কারোর জন্য টেলর সুইফ্টের সেই গানটা গাই, সি ইউ মেক ইয়োর ওয়ে থ্রু দ্য ক্রাউড, অ্যান্ড সে হ্যালো। লিটল ডিড আই নো দ্যাট ইউ আর রোমিয়ো।’’ আবেগে গলা বুজে এল হৃষিতার, ‘‘কিন্তু পারি না রৌনক, গাইতে পারি না। নতুন সম্পর্কে জড়াতে খুব ভয়ও হয়। কিন্তু ইচ্ছেটাকেও আবার মন থেকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। মনে হয় আমার জীবনে কেউ আসুক, যে আমাকে অচেনা স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। জীবন নিয়ে আমিও তোমার মতোই খুব কনফিউজড।’’
রৌনক চুপ করে আছে। লম্বা শ্বাস ছাড়ল হৃষিতা, ‘‘তোমাকেও স্পেস দিয়ে কোনও লাভ হয়নি। সকালে যখন জগিং করি, তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখো আমাকে।’’
রৌনক নিচু গলায় ফিসফিস করে বলল, ‘‘আমারও একটা গান খুব গাইতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ভয় পাই।’’
‘‘কোন গান?’’
‘‘লায়োনেল রিচির।’’
‘‘কোনটা?’’
হাত বাড়িয়ে হৃষিতার হাত থেকে গিটারটা নিল রৌনক। তার পর বাজাতে বাজাতে গেয়ে উঠল,
আই হ্যাভ বিন অ্যালোন উইথ ইউ ইনসাইড মাই মাইন্ড
অ্যান্ড ইন মাই ড্রিমস আই হ্যাভ কিসড ইয়োর লিপস আ থাউজেন্ড টাইমস
আই সামটাইমস সি ইউ পাস আউটসাইড
মাই ডোর
হ্যালো, ইজ ইট মি ইউ আর লুকিং ফর...
রৌনক গান থামিয়ে শুধু কর্ডটা বাজাতে থাকল। হৃষিতা বলল, ‘‘তার পর?’’
রৌনক গিটারটা হৃষিতাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, ‘‘যেখানে শেষ করেছিলে সেখান থেকে বাজাও।’’
গিটারটা কোলের কাছে ধরে হৃষিতা বলল, ‘‘মানে?’’
‘‘ডরতা হ্যায় দিল...’’ রৌনক দু’হাত ঝাঁকিয়ে বলতে শুরু করল, ‘‘বি… থ্রি… থ্রি… থ্রি…টু, পরশু রাতে শিখিয়েছিলাম, কর্ডটা কারেক্ট করে বাজাও। এটা কিন্তু একটা রবিবারে শিখে ফেলার নয়।’’
কর্ডটা বাজাতে বাজাতে হৃষিতা বলল, ‘‘মানে তুমি চাইছ আবার রবিবারগুলোতে আমি আসি। আমার পাস্টটা শোনার পরও আর ইউ স্টিল ইন লাভ উইথ মি? তুমি কি আমাকে বলতে চাও, হ্যালো, উইল ইউ ম্যারি মি? বাকি জীবনটা মিউজিক আর আমাকে নিয়ে থাকতে চাও?’’
রৌনক সিলিং-এর দিকে মুখটা তুলে চোখ বন্ধ করে গেয়ে উঠল, ‘‘পেয়ার হুয়া, ইকরার হুয়া হ্যায়, পেয়ার সে কিঁউ কভি ডরতা হ্যায় দিল...’’
২২
মানিকজোড়কে যে আজকেই চিনে নিতে পারবেন, প্রিয়তোষ ভাবেননি।
বারান্দায় বসেই কলিং বেলের আওয়াজ পেয়েছিলেন। কে এই সময়ে বেল বাজাল তা নিয়ে আগ্রহ ছিল না। ঝর্না আছে বলে উঠে গিয়ে দরজা খোলার গা করেননি। ঝর্না এসে বলল, ‘‘দু’জন আপনার সঙ্গে দেখা করতে এয়েছেন।’’
অনিচ্ছা সত্ত্বেও চেয়ার ছেড়ে উঠতে হল। দরজার মুখে মুখ চেনা, নাম না-জানা মাঝবয়সি দু’জন। এক জন হাতজোড় করে বললেন, ‘‘নমস্কার। আমি মলয় পাইন, টাওয়ার সি’তে থাকি।’’
প্রিয়তোষ প্রতিনমস্কার করলেন, ‘‘আসুন।’’
সোফায় বসে মলয় শুরু করল, ‘‘আপনার কথা অনেক শুনেছি। আলাপটা কিছুতেই হয়ে ওঠেনি। আসলে কী বলুন তো, সারা সপ্তাহ অফিস। এই একটা দিনই যা ছুটি। তা, রবিবার সকালটা তো বাজার করতেই হুস করে কেটে যায়। এই দেখুন না, দু’সপ্তাহ ধরে ভাবছি রোববারে চুলটা কাটব। কিছুতেই হয়ে উঠছে না। রোববারগুলোয় সেলুনে ডাক্তারের চেম্বারের চেয়েও বেশি ভিড়। আজও নাম লিখিয়ে আপনার কাছে এলাম। কবে থেকে ভাবছি আলাপটা করে যাব!’’
আর এক জনের নাম এখনও জানা হয়নি। প্রিয়তোষ জানতে চাইলেন, ‘‘আপনার পরিচয়টা?’’
‘‘আমি সমীরণ হাজরা, টাওয়ার বি। আমি অবশ্য এখানে থাকি না। রবিবার করে আসি। ফ্ল্যাটটা ফাঁকাই পড়ে থাকে।’’
একটু চমকে উঠলেন প্রিয়তোষ। কী আশ্চর্য। কিছু ক্ষণ আগে শ্রীতমার সঙ্গে ফোনে হওয়া কথাবার্তাগুলো মনে পড়ে গেল।
‘‘আমি প্রিয়তোষ চট্টোপাধ্যায় বলছি। নিউ টাউনের এলিফ্যান্টা হাউসিং সোসাইটি থেকে। চিনতে পারছ শ্রীতমা?’’
মোবাইলে নামটা সেভ করা ছিল না। আচমকা নামটা শুনে চিনে উঠতে একটু সময় লেগেছিল শ্রীতমার। তার পর মিষ্টি গলায় বলে উঠেছিল, ‘‘ও হ্যাঁ, হ্যাঁ আংকল। কেমন আছেন আপনি?’’
‘‘ভাল। তোমরা ভাল আছ?’’
‘‘খুব ভাল আছি আংকল। বলুন।’’
প্রিয়তোষ গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আসলে তোমাদের একটা জিনিস জানানোর ছিল। নীলেশকে ফোনে পাচ্ছি না।’’
‘‘নীলেশ ক’দিনের জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছে। বলুন না আংকল।’’
‘‘আসলে আপাতত এই ফ্ল্যাটটা আমরা ভাড়া দিতে পারব না। তোমরা যদি অপেক্ষা করে থাকো, তাই জানিয়ে রাখলাম।’’
‘‘ও, আচ্ছা।’ শ্রীতমা একটু চুপ করে থেকে বলেছিল, ‘‘আমার কিন্তু ভারী পছন্দ ছিল আপনার বারান্দাটা। মনে আছে তো আংকল, আপনাকে বলেছিলাম মাঝে মাঝে আপনার বারান্দায় বসে আপনার সঙ্গে গল্প করে আসব।’’
‘‘নিশ্চয়ই, এস। তবে আমি দু’সপ্তাহ পরে আমেরিকায় চলে যাচ্ছি। আমার স্ত্রী থাকবে। সুতপা। একা একা থাকবে। তুমি এসে মাঝে মাঝে গল্পগুজব করে যেয়ো। ওরও ভালো লাগবে।’’
‘‘থ্যাংক ইউ আংকেল। আপনি আমাদের মধ্যে একটা ঝগড়া মিটিয়ে দিলেন।’’
প্রিয়তোষ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘আমি আবার কী ঝগড়া মিটিয়ে দিলাম?’’
‘‘আপনাকে তো বলেইছিলাম আপনার ফ্ল্যাটটা আমার ভীষণ পছন্দ। এত ছিমছাম ইন্টেরিয়র করা ফ্ল্যাটটা! আমাদের অফিসও কাছাকাছি। আমি ওয়েট করতে রাজি ছিলাম। কিন্তু নীলেশ রাজি হচ্ছিল না। কী বলব বলুন তো। ভিতুর ডিম একটা।’’
‘‘মানে?’’
‘‘যে দিন আপনার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম সে দিন সমীরণ হাজরা বলে আর এক জনের ফ্ল্যাটও দেখতে গিয়েছিলাম। সঙ্গে ওঁর এক বন্ধু ছিলেন। আপনাদের ওখানেই থাকেন। উনিই সব কথাবার্তা বলছিলেন। আপনার ফ্ল্যাটটা দেখে যখন বেরিয়ে আসছি, নীচে লবিতে সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আবার দেখা। আপনার ফ্ল্যাটটা দেখেছি শুনে বললেন, ফ্ল্যাটটা নাকি হন্টেড।’’
ক্রমশ